Sunday, August 9, 2015

সমকালীন বিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ-অশান্তি, তালাক ও কিছু গোড়ার দৃষ্টিভঙ্গি এবং চক্ষুশীতলকারী পরিবারের ভিত্তি প্রসঙ্গে


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আলহামদুলিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাহমাতাল্লিল আলামিন ও মানবতার সাক্ষ্য, মুক্তির সুসংবাদবাহক ও মন্দ পথে থেকে ভালোর দিকে সতর্ককারী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর। শান্তি বর্ষিত হোক সমস্ত সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ও পূর্ববর্তী সালফে-সালেহীনদের (রাহিমাহুমুল্লাহ) উপর।

বিয়ে কেবল বিয়ে নয়, এটি আপনার প্রশান্তি, ভালোবাসা ও রাহমার প্রবহমান ঝর্ণাধারা।  আপনার স্বামী/স্ত্রী ও আগত সন্তান-সন্তুতি আপনার চক্ষুশীতলকারী দু’নয়নের প্রশান্তি। আপনার জান্নাতে যাওয়ার দুনিয়ার সঙ্গী, জান্নাতের পথে সাহায্যকারী ব্যক্তি। আগত সুসন্তান জান্নাতের টিকেক। সুতরাং বিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও জীবনের একটা বড় প্রভাবক এবং এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। এদিকটা যেন অশান্তির স্পর্শে কলোষিত না হয় সেদিকটা বিবেচনা করেই আমার এই লেখা।

কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান ইসলামী মন-মানসিকতাসম্পন্ন ছেলে-মেয়েদের মাঝে বিয়ে নিয়ে এক ধরণের ফ্যান্টাসি কাজ করে এবং বিয়ে নিয়ে কেউ পোস্ট দিলেই সেই ফ্যান্টাসি ঠাট্টারুপ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে বিবাহ নামক আল্লাহর এক ইবাদাতের উপর। এই ফ্যান্টাসি কুরআনের বিবাহের আয়াতে ‘সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ’ এর উপরও আবেগের বস্তা নিয়ে পড়তে থাকে হতাশা ও ফ্যান্টাসির রুপ নিয়ে। একদিকে যেমন ইসলাম উপলব্ধির সমস্যা অন্যদিকে এ না বুঝার ফলেই বিয়ের কিছুদিন পর যখন ফ্যান্টাসি ফ্যাকাসে রুপ নেয়, তখন যেন জীবনের জীবন্ত রুপ এসিডের মত ধংসের কাজ দেয়।

আমার আর্টিকেলের মূল লক্ষ্য থাকবে আমাদের খালি চোখ দিয়ে যেসব সমস্যাগুলো দেখি অশান্তির মূল হিসেবে, সেই ঘোর কাটানো আর এইসব চোখে দেখা সমস্যাগুলোর মূল কারণ খুজে আল্লাহর দেওয়া সমাধান তুলে ধরার চেষ্টা করা।

প্রকৃত কথা হলো আমরা যেগুলোকে বিয়ের ক্ষেত্রে বা পারিবারিক জীবনে সমস্যা মনে করি সেগুলো আসলে সমস্যা নয় বরং সেগুলো মূল সমস্যার ফল!! সুতরাং আমরা যেখানে সমস্যাকেই চিহ্নিত করতে পারিনি সেখানে সমাধান না পাওয়াই স্বাভাবিক।

এখানে অনেক ছবির কোয়ালিটি ভালো নাও আসতে পারে ব্লগসাইট সেটিংস এর সমস্যার কারণে। একারণে সুযোগ থাকলে ভালো ফরম্যাট ও কোয়ালিটি  জন্য  পিডিএফ-টি  ডাউনলোড করে পড়ার অনুরোধ করছি –
আর্টিকেলটির PDF  – http://tinyurl.com/ot33rp2

27856_426563806969_383634286969_5991074_2096095_n

এখানে কয়েকটা দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা দরকার।

১। নারী-পুরুষ অধিকার কীভাবে দেখে?
২। উভয়ের কমন বিষয় ও বাদ পড়া বিষয় এবং সমস্যার মূল
৩। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সমস্যা এবং সচেতনতা
৪। সমাধান কোন পথে?
একজন নারী যেমন অধিকার সচেতন, পুরুষও তেমনি অধিকার সচেতন। একজন নারী যেমন ইচ্ছামত অধিকারের হাদীস শুনান, পুরুষও তেমন করে এবং কিছু ক্ষেত্রে আরো ভয়াবহভাবে। অথচ বিয়ের আগে দুজনাই ইসলামিস্ট ধরা হতো কিন্তু বিয়ের পরে এসব অধিকার আদায় নিয়েই সব অশান্তির মূল সমস্যা বলে বিবেচিত হয়। এদের প্রধান সমস্যাগুলো‘নিজেদের অধিকার’, ‘একজন আরেকজনকে হালাল-হারামের ফতোয়া’তে ফেলে ভুল প্রসঙ্গে নিজদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করা এ অধিকার আদায় করতে গিয়ে একেজন আরেকজনের ইতিহাস টেনে এনে কত কিছুই করে যার বেশিরভাগ-ই কবীরা গুনারহর অন্তর্ভূক্ত। অধিকার আদায় করতে গিয়ে কতশত কবীরা গুনাহ করছে সেদিকে খবর নেই, অথচ তারা নাকি অধিকার আদায় করতে ব্যস্ত এবং ইসলামিস্টও বটে!!

বর্তমানে মুসলিম নারীবাদীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার ডিভোর্সের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে সেক্যুলার এবং মুসলিম উভয় সমাজে। এ সংখ্যার মাঝে যারা নিজেদেরকে ইসলাম প্র্যাক্টিজিং মনে করে এসব ছেলে-মেয়েদের মাঝেও বৃদ্ধি পাচ্ছে ডিভোর্স এবং পারিবারিক অসন্তোষ ও দ্বন্দ। এভাবে শেষে বিবাহ বিচ্ছেদ-ই শেষ হচ্ছে না, তারা উভয়ে তীক্ত কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে বের হচ্ছে এবং এগুলো আজকালকার সামাজিক সাইটগুলো সহজলভ্য হওয়ায় আর বিষয়গুলোও টনক নাড়ানি হওয়ায় ছোঁয়াচে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে অন্যদের মাঝেও।

কিছু নারী হয়তো হালাকায় যান বা নারী অধিকার সচেতন ফেইসবুক বা ব্লগ ফলো করে পড়েন। বাংলাদেশের কালচারটা এমন যেন কেউ কোনো সংগঠনে যুক্ত থাকা মানে সে প্র্যাক্টিজিং মুসলিম বা মুসলিমাহ!! এইটা একটা মনস্তাত্ত্বিক রোগে পরিণত হয়েছে। সংগঠনে যুক্ত বা পরিচিত যদি দুজন বিয়ে করেছে মানে তারা ফেরেশতা বিয়ে করেছে ধরে নেওয়া হয় অথচ সংগঠনের সিলেবাসে এবং ব্যক্তিতে ইসলামের কিরুপ অবস্থা তা তলিয়ে দেখার প্রয়োজনও পড়ে না।

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একটা কমন সাইকোলজিক্যাল রোগ হলো বিয়ের আগে নিজেরা নিজেদের কী কী অধিকার পাবে সেই দিকগুলো নিয়ে পড়াশুনা করে। তার স্বামী বা স্ত্রী কতটূকু পাবে সেগুলো না পড়ে নিজে কতটুকু পাবে সেই দলীলগুলো রেডি করতেই ব্যস্ত থাকে। ফলে তার নিজ স্বামী বা স্ত্রীর অবস্থা, সাইকোলজি ইত্যাদি বুঝতে চেষ্টাও করে না। ফলে নিজেদের অধিকার সংক্রান্ত আয়াত বা হাদীস প্রেক্ষাপটহীনভাবে, ভুল প্রসংগে, ইচ্ছামত ব্যবহার করতেও বাধা থাকে না আর অন্যেরতা পরখ করার বৃথা চেষ্টাও থাকে না।

যেমন একটি হাদীস মুসলিম নারীরা তাদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে প্রায়শ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামে প্রসঙ্গকে ভুলভাবে উল্লেখ করেন কোনো ঘটনার নির্দিষ্টতা-অনির্দিষ্টতা উল্লেখ না করেই। সেটা হলো “ঐ ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তাঁর স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম”

একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে অত্যাচার করেন, অসদাচার করেন – এই হাদীস তাঁর ক্ষেত্রে। কিন্তু স্ত্রী এই হাদীস খাটায় কোন ক্ষেত্রে? বান্ধবীর স্বামী ভালো গহনা দিয়েছে, তাকেও দিতে হবে। শাশুরীকে এত কিছু দেওয়ার দরকার কি অথচ আমি চাইলেও টাকার অভাব দেখান। পাশের বাসায় ফ্রিজ আছে সুতরাং আমাদেকেও কিনতে হবে। এখানে বাদ পড়ে কোন জিনিসগুলো? না, সেইটা না বলে বলি কার কি অধিকার আছে বা স্বামীর সামর্থ আছে কিনা সেটা না দেখে বরং দেখতে হবে কোনটা? – ‘আমার অধিকার’ এবং ‘হাদীসের ভাষায় উত্তম স্বামী কে?’!!

অথচ একজন স্ত্রী তার স্বামীর গীবত করেন অন্যের কাছে, তার মান-সম্মান নিয়ে অন্যের কাছে প্রশ্ন তুলেন, না জানিয়ে তার ফেইসবুকের মেসেজ ঘাটেন (গোয়েন্দাগিরি), অন্যের স্বামী কি দিলো সেটা নিয়ে খোটা দেন, শশুর-শাশুরীর সাথে ভালো আচরণ করেন না(সেবা নয়), শশুর-শাশুরীকে কিছু দিলেও সমস্যা করেন…এগুলো করার পরও উপরোক্ত হাদীস খাটাবেন ঐ স্বামীর জন্য? তাহলে জুলুম কাকে বলে?…যদি এই হাদীসটিকে ঐ স্বামীর ওপর না খাটান তবে নির্দিষ্টতা-অনির্দিষ্টতা না জেনে, রাসূল ﷺ এর হাদীসের প্রসঙ্গ না জেনে, তার নামে ইচ্ছামত চালাবেন না। দোষটা আপনার না জানার, হাদীসের বা ইসলামের নয়।

ঐরকম স্বামীকে মারধর করা, আনুগত্যহীনা স্ত্রীর জন্য রাসূল ﷺ এর হাদীস এইটা

যে স্বামী তার স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট থাকে তার কোনো ইবাদাত কবুল হবে না এবং সালাত তার মাথার এক বিঘত উপরেও উঠবে না”
…এবার দুইটা হাদীস দুই প্রেক্ষাপটে মিলেছে?
সুতরাং সমস্যাটা কোন জায়গায় ধরতে পেরেছেন? “অধিকার সচেতনতা”র অন্ধ আবেগ

এইটা কীভাবে হলো? ইসলামে যেসব সম্মান ও অধিকার দিয়েছে সেগুলো ভালোভাবে না জানার ফলে। আর তার চেয়েও বড় ভুল হলো এই অধিকারের মৌল ভিত্তিকে উপলব্ধির অভাব ও আমাদের সেদিকে নজর দেওয়ার তীব্র অভাব।
অন্যদিকে কিছু নারীকে পাবেন যারা ফেইসবুক বা ব্লগে এরুপভাবে পুরুষের বিপরীতে নারী অধিকারের কথা বলেন, যেন তাদের পোস্টের উদ্দেশ্য হলো পুরুষদের শাসানি দেওয়া। এসব পোস্টের মাধ্যমে পুরুষদের দাওয়াহ দেওয়া? তাদের ভাষার ব্যবহার দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন সেখানেও আল্লাহর দেওয়া দাওয়াহর ধারাবাহিক শর্তগুলো নেই; যা আছে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যা কিছু লাগে তা-ই।

এরুপভাবে কিছু পুরুষ রয়েছে যারা ফেইসবুকে নারীদের পচিয়েই যেন মজা পায়। এরা নিজেদের দোষগুলোকে কখনই মনে হয় দেখে না। অথচ আল্লাহর বাণী বলে আত্মসমালোচনাকারীই সর্বোত্তম। এসব পুরুষের না বুঝেছে ইসলাম না বুঝেছে আল্লাহর নিজ হাতে সৃষ্ট সৃষ্টির গুরুত্ব, সম্মান ও মর্যাদা।

আরেকটি দিক হলো এইরকম – ধরুন একজন ব্যক্তিকে ইসলামিস্ট দেখে বিয়ে দিলেন। কিন্তূ বিয়ের পর দেখা যায় বিভিন্ন সমস্যা। স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার ঠিকমত দেয় না, সময় ও সুযোগ থাকতেও স্ত্রীর ঘরের কাজে সাহায্য করে না, ভালোবাসা বৃদ্ধি পাওয়ার উপায় অবলম্বন করে না, স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হলে ইচ্ছামত কটু কথা শুনিয়ে দেয় ঘরের কর্তা হিসেবে। আসলে এখান থেকে নারীবাদী মুসলিমা হওয়ার কারণ আছে কি কোনো? না। কারণ সে ইসলামের অধিকারগুলোও তো স্ত্রীকে দেয়নি। সে প্রকৃতই ইসলামপন্থী ছিলো না, আপনি যা দেখেছেন তা ওপরের অংশ, অন্তরের ঈমান বা তাকওয়া নয়। এই ব্যক্তির ইসলামিক লেভেল দিয়ে আর সকল ইসলামিস্ট মুসলিমদের ধুয়ে দিতে পারেন না। সুতরাং ফেইসবুকে কথা বলার আগে নির্দিষ্টতা-অনির্দিষ্টতা, এবং স্পেসিফিক কেসকে উল্লেখ করে লিখুন।

উভয়ের সমস্যাগুলো নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এবং সমস্যার উদ্ভব ও সমাধানও সামনে আসবে সূরা জুমু’আ, সূরা মুনাফিকুন এবং সূরা তাবাগুনে ধারাবাহিক পদ্ধতিতে।

আমরা মনে করি মূল সমস্যা একজন আরেকজনকে অধিকার না দেওয়া, স্বামী-স্ত্রীর নামে মন্দ বলা, একে অন্যকে খোটা দেওয়া ইত্যাদি। আসলে এটি হলো অন্য কারণগুলোর ফল হিসেবে পরবর্তীতে সামনে আসে। এগুলোর মাধ্যমে সমস্যা, অশান্তি, দ্বন্ধ শুরু হয়; মূল কারণ এগুলো নয়। বরং এগুলো মূল কারণের উদ্ভোত প্রাথমিক সমস্যাবলী।
প্রকৃত সমস্যা ও সেগুলোর কারণসহ সমাধান তুলে ধরার চেষ্টা করব নিচে। সবচেয়ে বড় যে বিষয় সেটি হলো আল্লাহ এগুলোর মাধ্যমে কত নিখুতভাবেই না সমস্যার গোড়াগুলোকে চিহ্নিত করেই ক্ষান্ত হননি বরং সেগুলোর সমাধানগুলোকেও নিপুনভাবে তুলে ধরেছেন।

তালাক যেহেতু অশান্তি, দ্বন্দ ও এ দ্বন্দের চুড়ান্ত পথ, তাহলে এ পথের সমস্যাটাকে চিহ্নিত করতে পারলে মূল সমস্যাও পাওয়া যাবে। তাহলে চলুন এটি দিয়েই সমস্যার মূল কারণ অনুসন্ধান করা যাক।

সূরা বাকারায় তালাকের ব্যাপারে আলোচনার পর আল্লাহ সালাত হেফাযতের কথা বলেছেন (২৩৮নং আয়াত)।

তালাকের সাথে সালাতে কি এমন সম্পর্ক যে তালাকের পরে সালাত হেফাযতের কথা উল্লেখ করলেন আল্লাহ। এদের মাঝে যোগসূত্র কি? তালাকের পরেই সালাতের হেফাযতের কথার মাঝে ধারাবাহিক সম্পর্কটা কী?
এবার আসুন দেখি তালাকের আয়াতসমূহের সাথে সালাতের সম্পর্ক, প্রজ্ঞা এবং কুরআনের ধারাবাহিকতা ও পারস্পারিক সম্পর্ক (নাযম)।

 বিবাহ মানে?

 ১। বিবাহ—একটি সম্পর্ক, কন্ট্রাক্ট
২। বিবাহের অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মাঝে সুকুন,মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ (প্রশান্তি, ভালোবাসা ও দয়া)
৩। আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহর সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত (সূরা নিসা-১) এবং এটা আল্লাহর তাকওয়ার সাথে সম্পর্কিত যা সূরায় দুইবার বলা হয়েছে(যা রেয়ার কেইস)।
৪। তালাক মানে বিচ্ছিন্ন হওয়া।

আর সালাত?

১। সালাহ মানে সংযোগ—মানে সালাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি করি। (সূরা মুজাম্মিল-২০)
২।  সালাত আল্লাহর হক
৩। সালাতকে হেফাযত করা (সূরা বাকারাহ-২৩৮) মানে তাঁর সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখা। আর হেফাযত না করা মানে তার সাথে সম্পর্কের অবনতি।
৪। সালাত যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে(=তাকওয়ার কাজ)

দুই জায়গার কমন বিষয় দেখুন

সামারিটা দেখার আগে আরো ভালোভাবে সালাতের উদ্দেশ্য, অর্থ, তাকওয়া উপলব্ধি আর আল্লাহর সাথে এসবের পারস্পারিক সম্পর্ক ভালো করে জানা থাকা দরকার।

১। দুই সম্পর্কের ভিত্তি আল্লাহ
২। এ সম্পর্ক তাকওয়ার ভিত্তিতে হয়
৩। অর্থাৎ আল্লাহr সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো, সেই আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে যেই সম্পর্কসমূহ রয়েছে (আত্মীয়তা, স্বামী-স্ত্রী), তাদের সাথেও সম্পর্ক ভালো।
৪। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো নেই বা একদমই নেই(সালাতের গাফলতি বা না পড়া), সেই আল্লাহর সম্পর্কের ভিত্তিতে অন্যান্য সম্পর্কও ভালো নেই (বিয়েতে অশান্তি ও তালাক)
এবার আসুন নীচের সামারিটা দেখি।

Husband Wife all photos
সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেবল টিপস দিয়েই হয় না। আল্লাহর সাথে দুজনার ভালো সম্পর্কের ভিত্তিতে হয়। এইটা ঐটা হালাল-হারাম বললেই সম্পর্ক উন্নত হয় না। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে হবে, তাঁর যাবতীয় বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে, তবে তাঁর সম্পর্কের ভিত্তিতে যেই সম্পর্ক(সূরা নিসা-১), তিনি ভালো রাখবেন। কেবল হালাল-হারাম ফতওয়াতে তাকওয়া বাড়ে না। আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্কের কারণে, তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার কারণে তাকওয়া বাড়ে—তাঁর সাথে যাবতীয় বিষয়ের উন্নতি হয়। 

সালাতের হেফাযত বা সালাতের মাধ্যমে আল্লাহকে দৈনন্দিন কমপক্ষে পাঁচবার স্মরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়ায় পৌছে, তার হালাল-হারাম মেনে চলতে নির্দেশিকা পায় কোরআনের আয়াতসমূহে। তাহলে এই সালাতেই যার সমস্যা রয়েছে, তাহলে এই সালাতের মাধ্যমে যতগুলো উপকার পাওয়ার কথা সেগুলো পাবে কিভাবে?

যে ব্যক্তি আল্লাহর অধিকার আদায় করে না সেই ব্যক্তি তার সৃষ্টির অধিকার আদায়ের বদ্ধপরিকর হবে কিভাবে?

আরো অবাক করা বিষয় হলো বাসর রাত শুরু হয় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দু’রাকাত সুন্নাত সালাত দিয়ে!! সুবহানাল্লাহ। সালাত বা আল্লাহর স্মরণ বিয়ের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ যে আল্লাহর স্মরণ দিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া হয় তোমাদের সৃষ্টি যেমন আল্লাহর হাতে, তোমাদের এই সম্পর্কের নতুন ধারাও আল্লাহর হাতে (সূরা নিসা-১) এবং তাই আল্লাহর সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ, রাহমা(সূরা রুম)-ও পেতে হবে আল্লাহর এই সালাত ও তাকওয়ার মাধ্যমে(সূরা রুম)।

সুতরাং একটা মূল সমস্যা তালাকের আইডেন্টিফাই করা গেল সেটা হলো – আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ভিত্তি নড়বড়ে হওয়া এবং এ নড়বড়ের কারণে তার সৃষ্ট স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও নড়বড়ে (অশান্তি, দ্বন্দ ও তালাক) হয়।

Divorce and Allah
সমস্যারটি হলো তারা নিজেদের অধিকার আদায় নিয়ে এতো ব্যস্ত যে আল্লাহর অধিকার আদায়ে তাদের ভ্রক্ষেপ থাকে না। এবং সমস্ত সমস্যার উৎপত্তি এখান থেকেই যা আল্লাহ সূরা তাবাগুনেও আরো বিস্তারিত অন্য আরেকটি মূল সমস্যাসহব(১৪-১৮) সমাধানসহ তুলে ধরেছেন।

এর আগে আমরা দেখে নিই আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি কেমন, স্বামী-স্ত্রীসহ সকল সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে আল্লাহ কোন অবস্থানকে তুলে ধরেছেন কুরআনে এই ভিত্তিকে বুঝতে পারলে অনেক বড় সমস্যাগুলো চিহ্নিত হবে এবং সমাধানও সহজ হবে কারণ আমরা যদি ভিত্তি-তে না গিয়ে থাকি তবে সমস্যা হবেই বিপরীতে ভিত্তিকে ঠিক রাখতে পারলে সমস্যা তো দূরের কথা বরং সুখ, প্রশান্তি-ই হবে সংসারের সংগী

এজন্য আমরা প্রথমে সূরা নিসা(আয়াত-১)-তে যাবো যা (১) সৃষ্টির শুরু থেকে, (২) সম্পর্কের শুরু, (৩) ভিত্তি এবং (৪) এ ভিত্তিকে কেন্দ্র করেই যে সমস্ত অধিকার-চাহিদা চাওয়া-পূরণ হয়-এসবই বর্ণনা করেছেন আল্লাহ।

প্রথমে আয়াতগুলোর মাঝে এত গভীরে ও সুক্ষ্ণভাবে আল্লাহ এই বিবাহ ও সম্পর্কগুলোতে সুখের চাবিকাঠির বর্ণনা দিয়েছেন যে, এগুলো যদি গভীর দৃষ্টিতে না উপলব্ধি করি তবে এ সুখ পাওয়া একটু কষ্টকরই বটে। তবে যারা আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ উপলব্ধি করে বিশুদ্ধ চিত্তে মানতে শুরু করেছে তারা এমনিতেই এগুলো পেয়ে যায়। তাই প্রথম সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে বিবাহ, সম্পর্ক ও এ সংক্রান্ত সকল আয়াত ও সূরাগুলোর গভীরে প্রবেশ করে নির্যাস নিয়ে আসা।

“হে মানব জাতি, তোমাদের রবের উপস্থিতির সর্বদা সতর্ক থাকো (ইত্তাকু রাব্বাকুম) যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই আত্মা থেকে। এবং তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গী এবং তাদের দু’জন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু নর ও নারী। ঐ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো যার নামের বদৌলতে তোমরা দাবী-অধিকার চাও, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর নিবিষ্ট অবলোকনকারী” (সূরা নিসা-১)

ব্যাখ্যা – তাকওয়া-র শব্দে দুই ধরণের কথা এসেছে
১) রবের তাকওয়া
২) আল্লাহর তাকওয়া

তাকওয়া অর্থ সদা-সর্বদা এমন সচেতন থাকা যেন কেউ আমাকে দেখছে, খেয়াল রাখছে – এই উপলব্ধি ক্রমাগত সব সময় থাকা।

এভাবে রব শব্দের অর্থ – যিনি সৃষ্টিকর্তা, যিনি রিযিক দেন, দায়িত্ববান, লালন-পালনকর্তা। আয়াতের প্রথমে আল্লাহর তাকওয়া ব্যবহার না করে রবের তাকওয়া এই কারণে ব্যবহার করেছেন যে এই রব-ই একটি আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গী, তাদেরকে রিজিক দেন, তাদেরকে লালন-পালন করেন। সুতরাং সৃষ্টি, লালন-পালন, রিজিকদাতা হিসেবে প্রথমেই রবের তাকওয়া সর্বদা থাকা দরকার। সুতরাং যখন রবের তাকওয়া থাকবে, তখন সেই রবের সৃষ্ট মুখ দিয়ে গীবত করবো না, অন্যকে কষ্ট দেবো না মুখে খোটা দিয়ে, হাত দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর নামে বাজে কিছু লিখব না।

আবার পরে আল্লাহর তাকওয়া বলা হলো কারণ –  আল্লাহর সকল গুণের রুবুবিয়াত যেমন রাব্ব আর এই সকল রুবুবিয়াতের সিফাতি নাম হলো আল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ-ই সকল রুবুবিয়াতের ধারক। অর্থাৎ এখানে যেই তাকওয়াল্লাহ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এটা খুবই বিস্তৃত। আর এই শব্দটাই আল্লাহর কাছে ও পারস্পারিক সম্পর্কের চাওয়া-পাওয়ার দাবিতে দাবি হিসেবে আসে। সুতরাং বিস্তৃত শব্দের ব্যবহারে আল্লাহর তাকওয়ার বিস্তৃতিও কত বিশাল এটিও বুঝতে অসুবিধা হয় না।

এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – প্রথম রাব্বের তাকওয়া সীমিত সেটা রাব্ব এর মাঝে আর দিত্বীয় তাকওয়াল্লাহ শব্দ দ্বারা বিস্তৃত অর্থ বুঝায়। আর এ বিস্তৃত অর্থের তাকওয়া বা আল্লাহর তাকওয়া তখনই আসবে যখন পারস্পারিক বন্ধনের ক্ষেত্রে তাকওয়া অবলম্বন করবো। একারণেই আল্লাহর তাকওয়ার সাথে বাস্তবিক দৃষ্টান্ত দিয়েই বর্ণনা করেছেন যে আমার প্রকৃত ও বিস্তৃত তাকওয়ার বাস্তবিক উদাহরণ হবে ‘তোমাদের একে-অপরের কাছে দাবি-দাওয়ার’ মাধ্যমে-পারস্পারিক ডিলিং এর মাঝে তাকওয়ার অবলম্বন ।

সুতরাং বিবাহ যেহেতু আল্লাহর ইবাদাহ। একারণে আল্লাহর ইবাদাহতে আল্লাহর পদ্ধতিতেই বিবাহের সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ খুঁজতে হবে। আল্লাহর ইবাদাহর উদ্দেশ্যগুলো আল্লাহর নিয়মেই (তাকওয়া, সালাত, ইবাদাহ) আসবে।

সুতরাং পরস্পরের যে দাবি ও অধিকার আদায়ের কথা আসবে—সেটা আসতে হবে আল্লাহর ইবাদাহ ও তাকওয়াকে কেন্দ্র করে। কারণ এই সম্পর্কে তোমরা দুজন-ই সৃষ্টি হয়েছো রাব্ব আর সম্পর্কের ইবাদাহর ভিত্তিও আল্লাহ আর তাই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা রাব্ব ও ইবাদাহর (বিবাহ) ভিত্তি আল্লাহর তাকওয়ার মাঝেই সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহর চাবিকাঠি—কারণ তোমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং বিবাহের সম্পর্কের মাঝে সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমার সৃষ্টিকর্তাও একই উৎস=আল্লাহ। সুতরাং আল্লাহর ইবাদাহ ও তাকওয়া স্বামী-স্ত্রীর কারো ভালোভাবে না থাকা মানেও একে-অপরের অধিকার আদায়েও ঝামেলা হওয়াটাই স্বাভাবিক। যার স্বাভাবিক ফলসমূহ হলো দাম্পত্য জীবনে দ্বন্দ, কলহ, অশান্তি এবং শেষে তালাক না হলেও এই সমাধান না হওয়ায় উভয়ের কষ্টের ভেতরে জীবনের সমস্ত-ই বেদনায় ভরা।

এইখান থেকে বুঝতে পারি সম্পর্কের ভিত্তি আল্লাহ; স্বামী-স্ত্রী পরস্পর নয়। সুতরাং স্বামী বা স্ত্রী কেউ যখন অন্যের কাছে অধিকার চায়, অধিকার পায় না, পরস্পর যখন একে অন্যকে অধিকার দেয় না বা প্রসঙ্গহীনভাবে কোরআনের আয়াত বা হাদীস উল্লেখ করে— এইসবগুলোর সমস্যা তাকওয়া না থাকা, মূল ভিত্তিকে মৌল না রেখে গৌণ রাখার কারণে উভয়ের মাঝে একই আদলের ভিত্তি না থাকা ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও দলীলের মাঝেও এ পার্থক্য সূচিত হয় এবং সকল সমস্যার শুরু হয়।
সমস্যার শুরু কোথা থেকে? নিজেদের ‘অধিকার সচেতনতা’ আর ‘আল্লাহর অধিকার’=তাকওয়া ভুলে যাওয়া- যার সম্পর্কের ভিত্তিতে নিজেদের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এবার আরেকটি সমস্যার মূল নিয়ে কথা বলা যাক ‘নিজ অধিকার সচেতনতা আর ‘অন্যের অধিকার নিয়ে চিন্তিত না হওয়া’

নিজ অধিকার সচেতন বলতে কী বুঝায়? — কেবল নিজের জন্য প্রচেষ্টা, নিজের অধিকারের ব্যাপারে অধিক সচেতন হওয়া আর অন্যের অধিকারের ব্যাপারে চোখ না রাখা, আত্মকেন্দ্রিক হওয়া, “আমি”, “আমাকে” এবং “আমার” (I, Me and Myself ) নিয়েই চিন্তা-ভাবনা।

অর্থাৎ নিজের মনস্তাত্ত্বিক সুখ ও ম্যাটেরিয়ালিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই ক্রমাগত প্রাধান্য হয়ে পড়ে আর অন্যের ব্যাপারে মাথা খাটানো বা তাদের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিতে, সঠিকভাবে চিন্তা করার সময় থাকে না। এই “আমি”কে নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয় “আমার”। এজন্য এই “আমার” “অধিকার”কে তুলে ধরার জন্য যা কিছু করা দরকার করি – ঝগড়া, গীবত, নিজ স্বামী বা স্ত্রীর গোপনীয়তাকে অন্যের কাছে ফাঁস করা, কুরআন-হাদীসের প্রসংঙ্গহীন ব্যাখ্যা। অথচ এগুলো সবই ফরজের লংঘণ-সেগুলো তখন লক্ষ্যও হয় না- কারণ লক্ষ্য করতে গেলে অন্যের অধিকারের কথা চিন্তায় এসে যায় অথচ “আমার” ভূবন তো “আমি ও আমাকে” নিয়ে।

বিয়ের আগে চিন্তা থাকে আমি কেমন স্মার্ট ও সুন্দরী নারী/পুরুষ পাবো, বা মোহর কত দেবে আমাকে। তার দুনিয়াবী কুয়ালিটি কেমন। আবার বিয়ের প্ল্যানে থাকে বাসা ভাড়া, খাওয়া, কার্ড ছাপানো, দাওয়াত দেওয়া, কি কি দিতে হবে স্ত্রীকে এবং স্ত্রীদের পক্ষ থেকেও যুগের চাহিদা অনুযায়ী ডিমান্ড থাকে —এই প্ল্যানে কেবল বাদ থাকে বা সম্মুখে থাকে না আল্লাহ; যেই আল্লাহ এই সম্পর্ক সৃষ্টি  করছেন, এই সম্পর্কে সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহর মালিক।

এই আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে উদ্ভোত রুগ ও দাম্পত্য জীবনের যত অশান্তি-কষ্ট তেড়িয়ে আসে সেগুলোর মৌলিক সমাধান আল্লাহ দিয়েছেন তিনটি সূরায়।

সূরা মুনাফিকুনে ৯ ও ১০ নং আয়াত হলো এই সূরার পূর্বের সূরা (৬৩ ও ৬৪ নং সূরা)। অর্থাৎ ধারাবাহিক আকারে চলছে।

লক্ষ্য করুন সূরা মুনাফিকে ৯ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্তুতি আল্লাহর স্মরণ থেকে যেনো বিরত না রাখে

সূরা তাবাগুনেও বলা হচ্ছে ‘সন্তান-সন্তুতি, স্বামী-স্ত্রীদের থেকে কেউ কেউ শত্রু হবে’(যেমন আছিয়ার স্বামী ফিরাউন, নূহ (আলাইহিস সালাম) এর সন্তান)।

এবার লক্ষ্য করুন, আয়তগুলো সূরা মুনাফিকে। অর্থাৎ এখানে মুনাফিকদের আলামত বর্ণনা করা হয়েছে। তদ্রুপ অন্যান্য সূরাতেও মুনাফিকদের আলামত বর্ণনা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে(যেমন সূরা বাকারাহ,সূরা তাওবাহ)।

একজন মুনাফিক কেবল নিজের অধিকার সচেতনা নিয়ে চিন্তা করে। কেবল নিজের অধিকার সচেতনতা(স্বামী বা স্ত্রী যেই হোক) মানে আত্মকেন্দ্রিক হওয়া, নিজের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করা। মুনাফিকরাও ঠিক নিজেদের নিয়েই চিন্তা করতো। অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী যখন কেবল নিজের অধিকার নিয়ে সচেতন হয় তখন এটা মুনাফিকের বৈশিষ্টের সাথেই যায়!! কারণ এরা কেউ অন্যের অধিকার নিয়ে চিন্তিত নয়। মুনাফিকদের একটা বৈশিষ্ট হলো কেবল নিজেদের সুবিধা নিয়ে চিন্তা করা এবং এ সুবিধা যেথায় পাওয়া যাবে, সে সেখানেই যাবে, সেভাবেই চলতে চেষ্টা করবে, সেভাবেই কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যা করবে(সূরা বাকারাহ-১৪)। মূল এজেন্ডা থাকে ‘নিজেদের সুবিধা’ আদায়। এভাবে নিজেদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে যা খুশি তাই করার প্রবণতাও কাজ করে এবং এতে অন্যে অধিকার পাচ্ছে কিনা বা জুলুম হচ্ছে কিনা সেগুলো দেখার ফুসরতও থাকে না। এভাবে ব্যালান্সহীন হওয়ায় সকল সমস্যার উদ্ভব হয়।

এভাবে নিজেদের অধিকার আদায়কারী স্বামী-স্ত্রীরাও ঠিক একই ধরণের বৈশিষ্টসম্পন্ন হয়। ‘নিজেদের সুবিধা’কে (অধিকার বলে যাকে চিহ্নিত করে) পাওয়ার জন্যও কুরআন-সুন্নাহকে নিজেদের সুবিধা মত ব্যবহার করে ঠিক মুনাফিকদের মতই।

এজন্য দেখবেন একজন পুরুষ যখন ২৫ হাজার টাকার বেতনে চাকরি করে এবং পিতা-মাতা নিয়ে থাকে, তখন তাকে চাপ দেয় আলাদা বাসা নেওয়ার জন্য এবং সুন্দর করে প্রসঙ্গহীন ও চতুর্দিক বিবেচনাহীনভাবে ফতোয়া তুলে ধরে “স্ত্রী আলাদা বাসা চাইলে তাকে পিতা-মাতা থেকে আলাদাই রাখতে হবে, এটা স্ত্রীর প্রাপ্য। কারণ শশুর-শাশুরীর সেবা করা স্ত্রীর দায়িত্ব নয়, সন্তানের দায়িত্ব”“সবচেয়ে উত্তম স্বামী সেই যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম”

বেচারা স্বামী অর্থনীতির টানাপুড়নে বাঁচে না আর স্ত্রী ফতোয়া দিয়ে স্বামীর ওপর যুলুমকে জায়েজ করে নিচ্ছে তো নিচ্ছেই আবার সন্তানের ওপর পিতামাতার সেবা করা ফরজ কিন্তু স্ত্রীর সেবা করাটা ফরজ কিনা সেটাও কিন্তু স্ত্রী দেখছে না। অর্থাৎ সন্তানকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিয়ে হলেও স্ত্রী বেচারি নিজের অধিকার-সুবিধা চাই! এটা হলো আত্মকেন্দ্রিকতার ফল।

অন্যদিকে এরকম ছেলেও আছে যার স্ত্রী নির্যাতিত। স্বামী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, আলাদা বাসাও নিতে পারে, পিতামাতার সেবাও করতে পারে কিন্তু পিতা-মাতা অর্থাৎ শশুর-শাশুরী বা কারো একজনের কথায় স্ত্রীর অধিকার দেয় না। সে তখন নিজের অধিকার বা সুবিধাকে প্রসঙ্গহীনভাবে “পিতা-মাতার আনুগত্য ফরজ”,“পিতামাতার পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত”“স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর ফরজ”“সবচেয়ে উত্তম স্ত্রী সেই যার হাসিতে স্বামী সন্তুষ্ট থাকে”“স্বামী স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট থাকলে স্ত্রীর কোনো ইবাদাত কবুল হয় না” ইত্যাদি কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করে। এটাই ঐ ছেলের আত্মকেন্দ্রিক সচেতনতা বা অধিকার কেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনার ফল।

মোট কথা, এরা সবাই আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন; তাকওয়াহীনতা ও আত্মকেন্দ্রিকতাই হাতিয়ার। এরা নিজেদেরকেই নিজেদের কর্তা মেনে নিয়ে নিজেই নিজের সব সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় রত আছেন আর যত সমস্যা তাও তাদের মাঝে হচ্ছে।

এবার এদের সমাধান দেখুন,
আল্লাহ দুই সূরাতেই সমাধান দিয়েছেন উদার হওয়ার জন্য- আত্মকেন্দ্রিকতা ছেড়ে দান করার জন্য। এজন্য অন্য সূরায় মুনাফিকদের বলাই হয়েছে তারা রাসূল ﷺ এর সাথে কথা বলতে আসলে যেন কিছু দান করে আসে!! কারণ তারা নিজেরা সময় নিয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত রাখবে আর অন্যদের অধিকারের সময় নষ্ট করবে ও তাদের অধিকার দেবে না তা যেন না হয়। এভাবে নিজের সুবিধারুপ অধিকার সচেতন স্বামী-স্ত্রীকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমাধানের জন্য যেন তারা কেবল নিজেদের অধিকার সচেতন না হয়, অন্যের দিকেও দৃষ্টি দিয়ে নিজেদের আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা, ম্যাটেরিয়ালিস্টিক চিন্তাচেতনা, মুনাফিকের বৈশিষ্ট থেকে মুক্ত থাকতে পারে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পারে নিজেদের গন্ডি থেকে আর এভাবে আল্লাহর দেওয়া সুখের চাবিকাঠিও পেতে পারে।

এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কমন বিষয় হলো – সূরা মুনাফিকে বলছে “আমি যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে দান করো”  সুরা তাবাগুনে বলছে স্বামী-স্ত্রী ও পারিবাকির সমস্যার সমাধানে আল্লাহ বলছেন “তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর … নিজেদের কল্যাণের জন্য ব্যয় করো, আর যারা অন্তরের কার্পন্য হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম”। সুতরাং আত্মকেন্দ্রিকতার ফলে যত সমস্যা, দ্বন্দ, অশান্তি ও কষ্টের সূচনা হবে, তার সমাধান আল্লাহ দিয়েছেন ‘তাকওয়া’ ও ‘ব্যয়’ করার উদার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

আল্লাহর সাথে আমাদের সবার সম্পর্কের ভিত্তিকে কেন্দ্র করে সূরা নিসা-তেও দুইবার বলেছেন “আল্লাহকে ভয় করো”। অর্থাৎ সবগুলোতেই আল্লাহকে সম্মুখে আনা হয়েছে (সূরা নিসাতে তো দুইবার!!!!! সুতরাং সম্পর্কের ক্ষেত্রে আল্লাহর তাকওয়া-ই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ!!! সর্বাধিক!! আর আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ দান করা)। অথচ অধিকারের সময় আমরা আল্লাহকে আনি না, আনি নিজেদেরকে। আল্লাহকে ভয় করি না বলেই নিজেদের ইচ্ছামত আল্লাহর আয়াত এবং রাসূলের ﷺ হাদীসকে ভুলভাবে উপস্থাপন করি। সুবহানাল্লাহ! এভাবে যেই মালিকের কাছ থেকে সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ পাবো তাকে ভুলে যাবার কারণেই অশান্তি, দ্বন্দ্ব ও কষ্টের মূল হয়ে দাঁড়ায়।

সূরা তাবাগুনের আয়াতগুলো (১৪,১৫ ও ১৬) একটু ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে দেখবো সমস্যার মূলকে সমাধানে আল্লাহ হেদায়াতের  কি ফর্মুলা দিয়েছেন – এই আয়াতের প্রত্যেকটি শব্দ, এর পারিভাষিক অর্থ, কতগুলো ডাইমেনশনে এগুলো করা যায়—গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করুন – এখানে সমস্যার সমাধান কি নিখুঁত ও সুনিপুনভাবেই না আল্লাহ চিত্রায়িত করে বর্ণনা করেছেন! সুবহানাল্লাহ!! আর এই আয়াতগুলোর বিপরীতে আপনার দাম্পত্যে ও পরিবারে কিরুপ ফল আসতে পারে একটু গভীরভাবে তাকিয়ে দেখুন আজকের দিনের কিছু অশান্ত দাম্পত্য জীবন বা পরিবারে।

“তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করো, শুন, আনুগত্য করো, নিজেদের কল্যাণের জন্য ব্যয় করো, আর যারা অন্তরের কার্পন্য হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম” (সূরা তাবাগুন-১৬)

আল্লাহকে ভয় করো / আল্লাহর ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকো (ফা ইত্তাকুল্লাহ)- – সম্পর্কের ভিত্তিই এটি। যা উপরের কয়েকবার দেখানো হয়েছে। এবং আল্লাহর অধিকার সচেতন হলেই নিজেদের অধিকার আল্লাহর নির্দেশের ভিত্তিতে দুজনেই ঠিকঠাক মতো করবে। কারণ তাদের উভয়ের জবাবদিহিতার জায়গা একই আদলের জায়গা আল্লাহর কাছে। তাই একে অপরের প্রতি কোনোরুপ মন্দ করতে পারে না এই ‘আল্লাহর তাকওয়া’র অধিকারী ব্যক্তিরা।

তাকওয়াশীল ব্যক্তিরা তো নিজেদের অধিকার আদায়ের চাইতে আল্লাহর কোনো অধিকার লংঘন হয় কিনা সেটাই আগে দেখে আর এভাবে তার স্বামী বা স্ত্রীর কোনো অধিকারে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ লংঘন হচ্ছে কিনা দেখে। তাই নিজ স্বার্থরুপ অধিকারের আদায়ের নামে ‘তারা(স্ত্রীরা) তোমাদের(স্বামীদের) পোশাক আর তোমরা (স্বামীরা) তাদের (স্ত্রীদের) পোশাক’ মাড়িয়ে একে অন্যের নামে মন্দ বলবে না, গীবত করবে না অন্যের কাছে, খোটা দেবে না, স্বামী বা স্ত্রীর গোপন দোষ ফাস করবে না। এভাবে তারা পরস্পর একই ভিত্তি ‘তাকওয়া’র উপর থাকার কারণে সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ-ও পায় ভালোভাবে।

এভাবে একটি মেয়ে মোহর কত দিতে হবে এভাবে না বলে বলবে আপনার কত স্বামর্থ আছে। কারণ মোহর স্বামীর স্বামর্থের বাহিরে যেন জুলুম না হয়, সেই তাকওয়াই হবে তার ভিত্তি। কারণ তাকওয়াশীল স্ত্রী জানে – রাসূল ﷺ কম মোহরের বিবাহ উত্তম বলেছেন এবং অর্থের ভেতর আল্লাহর সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ  রাখেনি, রেখেছে আল্লাহর তাকওয়া ভিত্তির সম্পর্কে ওপর।

তেমনি তাকওয়াশীল স্বামী চিন্তা করবেন একজন অপরিচিত মেয়ে তার পুরো পরিবার ছেড়ে আমার কাছে এসেছে, তার পরিবারে যেরুপ ভালোভাবে ছিল, এখন আমার দায়িত্ব তার সকল দিক দেখার, তাকে শান্তিতে রাখার।

এভাবে তাকওয়াশীল স্বামী-স্ত্রীর ভিত্তি হয় আল্লাহ আদল ও ইনসাফ, জুলুমের বিপরীতে শান্তির জন্য কাজ করা, নিজের অধিকারের চাইতে অন্যের অধিকার যেন লংঘিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। এই পরিবারে সুখ ও শান্তি ছাড়া অন্য কোনো উপাদান চিন্তা করতে পারেন?

তাকওয়াশীল ব্যক্তিরা জানে স্বামী বা স্ত্রীর মাঝে কোনো প্রকার ভুল পেলে সেগুলোকে কীভাবে আল্লাহ ও রাসূলেরদেওয়া উত্তম পন্থায় ভালোবেসে সংশোধন করতে হবে সেই সংশোধনের পথে থাকে একে অপরের জন্য ভালোবাসা, অপরের কল্যাণ কামনা, আল্লাহর জন্য একে অপরকে উত্তম পন্থায় সংশোধন করা বিপরীতে যাদের মাঝে তাকওয়া থাকে না তাদের সংশোধনের ভাষা হয় টিটকারি করা, খোটা দেওয়া, গীবত করা, বুহতান করা,পূর্বের আরো ভুলকে এনে একে আরো খোটার বস্তুতে বিশালাকার রুপ দেওয়া

তোমরা শ্রবন কর –কুরআনকে আল্লাহ মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে বলছেন অন্য যায়গায়, পাচ ওয়াক্ত সালাতে এটি বারবার পড়া হয়, কুরআনের অপর নাম ‘জিকির’-স্মরণ। আল্লাহ পড়তে বলেছেন, এটি নিয়ে চিন্তা করতে বলেছেন, গবেষণা করতে বলেছেন, জিকর করতে বলছেন, শ্রবণ করতে বলেছেন মনোযোগ দিয়ে। প্রশ্ন আসে এটার সাথে স্বামী-স্ত্রীর  সমস্যার সমাধান কোথায়? ঐ যে উপরে আল্লাহর তাকওয়া নিয়ে এসে কুরআন মানতে শুরু করার জন্য যখন পড়তে শুরু করেছেন, আল্লাহর হারাম করা জিনিস থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে বা সালাতে ইমামের স্বামী-স্ত্রীর অধিকার নিয়ে তিলাওয়াত শুনবে, আল্লাহর অধিকার জানতে শুরু করেছে – অথচ না পড়লে বা না জানলে কীভাবে মানবেন? যখনই আল্লাহর কোনো নির্দেশ পাবেন পাবেন তখনই সেটা মানার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবেন আর সমস্যার সমাধানও পাবেন। সমস্ত সমস্যার সমাধান আল্লাহ কুরআনে দিয়ে দিয়েছেন এবং এটি যে বারবার পড়বে, শ্রবণ করে সে সমস্যার সমাধানও পেয়ে যাবে। পাঠের সাথে সাথেই যখন স্বামী বা স্ত্রী বুঝবে সমস্যার মূল কোথায় এবং সমাধানই বা কোথায়। এভাবে সে কুরআন শ্রবণের মাধ্যমে, বারবার পাঠের মাধ্যমে জীবনের সকল সমস্যার সমাধানও পাবে এই কুরআনে। একারণেই আল্লাহ কুরআনকে বারবার পড়তে বলেছেন এবং যারা নিয়মিত পড়ে এবং তারা সমস্যাগুলো থেকে মুক্তির দিশাও পায়।

“তোমরা আনুগত্য কর” – আল্লাহ যখন বললেন (১৪ নং আয়াত) তোমরা পাতা উল্টিয়ে দাও- উপেক্ষা কর। স্বামী বা স্ত্রী অনেক আগের দোষ-ক্রুটি আনে না? হ্যা, আনে। কিন্তু তারা যখন কুরআন শুনবে, শ্রবণ করবে এবং এই ‘আনুগত্যের’ নির্দেশ পাবে এবং আল্লাহর আনুগত্য করতে শুরু করবে- তখন স্বামী বা স্ত্রী আর পূর্বের কোনো মন্দের কথা পূনরায় উপস্থাপন করবে না এবং আয়াতের অন্যান্য নির্দেশনাবলীর আলোকে ক্ষমা করে দিবে।

তাদেরকে ভালোবেসে ক্ষমা করে দাও, পাতা উল্টিয়ে দাও-দোষক্রুটি উপেক্ষা করো (আয়াত-১৪) – এর বর্ণনা মনে করি ভালোভাবে দেওয়া উচিৎ। অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী পূর্বে ভুল করেছে, সেগুলোকে আর সামনে না আনা। কারণ আপনি পাতা উল্টালে কিন্তু আর পূর্বের বিষয়াবলী দেখতে পান না। আল্লাহ ঠিক এভাবেই বলেছেন – তোমাদের পূর্বে যত ভুল-ক্রটি হয়েছে সেগুলোকে আর কখনও সামনে নিয়ে এসো না, কারণ সেগুলো মিটে গেছে। কেবল উপেক্ষাই করতে বলেনি আরও বলেছে ভালোবেসে ক্ষমা করে দাও। এগুলো তাকওয়ার ফল—তাকওয়াহীন লোকেরা আল্লাহর দেওয়া এ গুণগুলোকে অসম্ভব বলেই মনে করবে। বিপরীতে তাকওয়াশীল লোকেরা আল্লাহর এ গুণগুলোকে দুনিয়া ও আখিরাতের সম্বল হিসেবে নেবে।

এবার লক্ষ্য করুন … পূর্বের বিষয় নিয়ে আসা  > একটি সমস্যাকে অনেকগুলো সমস্যার দ্বারা চাতুর্মূখিক করে তোলা  >  রাগ বাড়িয়ে দেওয়া > পৃথিবীর অধিকাংশ বিষয়াবলী ছোট্ট থাকে এবং কেবল রাগ, কেবল রাগই একে ছোট্ট থেকে বড় করে তুলে > এবং বড় সংঘাত, অশান্তি, অসন্তুষ্ট, পাপ, অপরাধ—এবং ছোট্ট বিষয়ে রাগের কারণে ৯০ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়!!!!! অধিকাংশ খুনের ক্ষেত্রে খুন করার মত কারণ থাকে না এবং এতে কেবল রাগ ঢালার কারণেই ৯০% খুনের পারসেন্টেজ বাড়ে!!

সমাধান? ১৬ নং আয়াতে ফিরে যান – তাকওয়া। তাকওয়াশীল লোকেরা সমস্ত পাপ থেকে বেঁচে থাকে এবং অন্যকেও পাপের দিকে ধাবিত করে না, উত্তেজিত করে মন্দ পথে, আরো পাপের পথে ঠেলে দেয় না।

একারণেই আল্লাহ বলেছেন তোমরা পাতাকে উল্টিয়ে দাও যাতে এতে অন্য কিছু এসে একটি বিষয়কে আর বড় না হয় আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো বলেছেনঃ সেই সর্বাধিক শক্তিশালী কুস্তিগির যে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে

সুতরাং রাগ নিয়ে একটা দুইটা গবেষণামূলক পেপার পড়ে দেখুন আবার আর আল্লাহর নির্দেশ, পেইজ উল্টিয়ে না দিলে কি হয় সেগুলোও পড়তে চেষ্টা করুন। সারা জীবনেও কাউন্সেলিং এর কাছে যাইতে হবে না, NEVER। সুতরাং তাকওয়াশীল ব্যক্তিরা কুরআন শ্রবণ করে, এ থেকে শিক্ষা নেয়, এগুলো মানতে থাকে, ঝগড়াকে বাড়তে দেয় না। বিপরীতে নিজ অধিকার আদায়কারী আল্লাহর অধিকার আদায়হীনা স্বামী বা স্ত্রীরা আগুনে ঘি ঢালতে থাকে আর অশান্তির বর্ষণও শুরু হয় পরিবারে।

“আর নিজেদের কল্যাণে ব্যয় কর, যারা অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত” – আল্লাহ আরেকটি মূল সমস্যার আইডেন্টিফাই করেছেন ‘আত্মকেন্দ্রিকতা’কে আর এটা থাকলে আপনি কেবল নিজেকে, কেবল নিজেকেই নিয়েই ভাবেন। আর আল্লাহ মেডিসিন দিলেন ব্যয় করঅন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত হও, নিজ থেকে বিস্তৃত হও, অন্যের অধিকার নিয়েও ভাবো, আত্মকেন্দ্রিক হইও না, ম্যাটেরিয়ালিস্টিক হইওনা, বরং নিজ থেকে আরো  বিস্তৃত হয়ে যাও। এভাবে তোমার থেকে তুমি মুক্ত হও, কেবল তোমার চাওয়া-পাওয়াকে যেরুপ গডে রুপ দিয়েছো সেটা থেকে মুক্ত করো তোমার মনকে, তুমি আল্লাহর তাকওয়ার কাছে যাও, তাঁর কথা শুন, আনুগত্য কর, ব্যয় করো, নিজের দাসত্ব থেকে মুক্ত হও,  এবং সফল হও।  সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। কত নিপুন বুননে আল্লাহ সফলতার দ্বারকে স্বামী-স্ত্রীর জন্য বুনে দিয়েছেন।

ব্যয় করার সাথে আপনার অবস্থান অনুযায়ী সুখী হওয়ার আরেকটি টিপস দিয়েছেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর সেটি হলো – সুখী হতে চাইলে, নিম্ন কারো দিকে তাকানো।( সম্পদ কেন্দ্রিক চিন্তায় ওপরে তাকালে লোভ বাড়ে, নিচে তাকালে আমার সামান্য প্রাপ্তি-তেই কৃতজ্ঞতা ও প্রশান্তি আসে)

“আর তারাই সফলকাম” – আল্লাহ এখানে ‘ফা’ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে পূর্বের বিষয়গুলো পালন করতে শুরু করতে থাকো, এবং এভাবেই তুমি স্তরগুলো পার হয়ে আসতে পারলে সফলকাম হবে অর্থাৎ বিবাহ ও পরিবারে ‘সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমা’ পেতে হলে এই শর্ত মোতাবেক-ই যেতে হবে। আল্লাহ কিন্তু বলেন নি কেবল স্বামী-স্ত্রীর বিষয়তেই সফলকাম হবে বরং তাকওয়ার গুন, কুরআন শ্রবণ, আনুগত্য, কার্পণ্য হতে মুক্ত হয়ে দান ইত্যাদি তো জান্নাতের পথে আল্লাহর সন্তুষ্টির একদম সিরাতাল মুস্তাকিমের পথে এবং এভাবে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয়ের সফলতা অবশ্য অবশ্যই নিশ্চিত!!

যেই সম্পদ স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের জন্য আত্মকেন্দ্রিকতা তৈরি করে সমস্যা সৃষ্টি করে, স্বামী বা স্ত্রীকে এককেন্দ্রিক ও নিজ সুবিধা আদায়ে উদ্ভোদ্ধ করে, সেই সম্পদের মন্দ পরীক্ষা (আয়াত-১৫) থেকে সমাধানে দিলেন ব্যয় করা ও কার্পন্য হতে মুক্ত থাকা (আয়াত-১৬)।

3 Husband Wife all photos
আজকের স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করা এবং অসন্তুষ্টি ও তালাকের কারণ বেশিরভাগ কোন ক্ষেত্রে জানেন?

এবার সূরা রুম ও এর আগের সূরার ধারাবাহিকতা অনুসারে সমাধান দেখার চেষ্টা করবো।

“আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এই যে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগী/সঙ্গীনী সৃষ্টি করেছেন যাতে তার নিকট শান্তি পাও আর তোমাদের মাঝে তৈরি করেছেন পারস্পারিক ভালোবাসা ও দয়া। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে বহু নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা রুম-২১)

— সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ – স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য আল্লাহর নিদর্শন। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসবে এবং তিনি ওয়াদার খেলাফ করেন না(সূরা রুম-৬)।

আমরা সুরা নিসায় দেখেছি সম্পর্কের ভিত্তি আল্লাহ আর এগুলো পেতে হলে তাকওয়া-ই প্রধান। তাকওয়াশীল ব্যক্তিরা পরকালমূখী হয় ও অন্যের অধিকার নষ্ট যাতে না হয় এ ব্যাপারে সর্বদা আল্লাহর উপস্থিতি এবংআখিরাতের জবাবদিহিতার কথা মাথায় রাখে এবং তাকওয়াহীন লোকেরা পরকাল বিমুখ হয় ও দুনিয়ার জিনিসই(কেবল নিজের স্বার্থ-অধিকার)(সূরা রুম-৭)নিয়েই ব্যস্ত থাকে।

এজন্য তাকওয়াহীন লোকেরা আল্লাহর এসব নিদর্শন সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ পায় না অথচ এগুলোসহ আমাদের সৃষ্টি, আসমান-জমিনের সবই আল্লাহ থেকে এসেছে(একই সূরা, সূরা রুম-৮,২১)। কারণ এগুলো আল্লাহ থেকে আসে আর পাওয়ার জন্য শর্ত তাকওয়া ও পরকালমুখিতা।

আরেকটি বিষয় হলো এটি ধারাবাহিকতা অনুসারে সূরা আনকাবুতের পরের সূরা এটি। সূরা আনকাবুতে (আয়ত-৪১) বলা হয়েছে মাকড়শার বাসা সর্বাপেক্ষা দূর্বল, কেন? কারণ তার নিজের পরিবারের সদস্যকে নিজেই খেয়ে ফেলে। তদ্রুপ আল্লাহর তাকওয়া না থাকা মানে নিজ স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নিজের পরিবারেই অশান্তি সৃষ্টি হয়, যে পরিবার গঠনের উদ্দেশ্য ছিল প্রশান্তি, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমা।

লক্ষ্যণীয় ও দারুন বিষয় হলো – আল্লাহ সূরা বাকারায় তালাকের আয়াতের পর সালাত হেফাযতের আয়াত শুরু করেছেন। অর্থাৎ সালাত যেহেতু আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্কগত ইবাদাহ, আর এই সরাসরি সম্পর্ক না থাকলে সেই সরাসরি সম্পর্কের ভিত্তিতে পারস্পারিক যে বিবাহের সম্পর্কে (সূরা নিসা) সেই বিবাহেও সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ (সূরা রুম) থাকে না আর এভাবে তালাক হয়ে যায় (সূরা বাকারা)।

এভাবে এখানে আল্লাহ সালাত হেফাযতের কথা বলে তালাক থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্কের উন্নয়নে জোড় দিলেন। এভাবে সূরা নিসায়ও আল্লাহ তার সাথে তাকওয়ার সরাসরি সম্পর্কের ভিত্তিতেই পারস্পারিক অধিকার আদায়ের কথা জোড় দিলেন।  এভাবে তাকওয়া এবং সালাত—দুইটা সরাসরি সম্পর্কের উপর জোড় দিয়ে আল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন যে আল্লাহর সাথে সরাসরি সকল সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করলে, তার সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চললে—স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে সকল প্রশান্তি, ভালোবাসা ও রাহমাহ দরকার তিনি সেগুলোও দেবেন।

এভাবে স্বামী-স্ত্রীর এই  সূরাতেই (৩১) আল্লাহ “তাকওয়া ও সালাত” এর প্রতি জোড় দিলেন যেন “প্রশান্তি, ভালোবাসা ও রাহমাহ” পেতে কোনোরুপ সমস্যা-ই না হয়!! সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি সম্পর্ক, পারস্পারিক সম্পর্ক, পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তি, এই ভিত্তি পাওয়ার জায়গাও বলে দিলেন সেই একই সূরায় যেখানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ-র কথা বলেছেন।

প্রশান্তির সর্বোচ্চ চূড়া চক্ষুশীতলকারী স্বামী/স্ত্রীর এবং বংশধর চাওয়ার দোয়ার কথা মনে আছে? কিন্তু সেটা কিসের ভিত্তিতে?
আয়াতেই দেখে নিন চক্ষুশীতলকারী পরিবারের ভিত্তি – হে আমাদের রব্আমাদের জন্যে এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততী দান করুন যারা আমাদের চক্ষুশীতলকারী হবে ও আমাদের কে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন|(ফুরক্বানআয়াত- ৭৪)

এর একটি উদাহরণ দেখতে চাইলে ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর পরিবারের ইতিহাস ও কোরআনের আয়াতগুলোর তাফসিরের দিকে তাকাতে হবে। ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এর স্ত্রীর সারাহর মরুভূমিতেআল্লাহর তাওয়াক্কুলে ওহীর নিঃর্শত আনুগত্য, পিতার প্রতি ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এর ছোট্ট বেলায়কোরবানীর সময় আনুগত্য ও কীভাবে আল্লাহর নির্দেশ আরো ভালোভাবে পালন করতে পারেন সে ব্যাপারে পরামর্শও দিয়েছিলেন!! আর এই তাকওয়াশীল পরিবারে একটা ভিত্তি কি ছিল জানেন? ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর দোয়া–
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়েমকারী করুন এবং আমার বংশধরকেও সালাত কায়েমকারীকরুন। …-(সূরা ইব্রাহীমঃ আয়াত ৪০-৪১)

সুতরাং চক্ষুশীলতাময় স্বামী/স্ত্রী ও বংশধর চাইলে তাকওয়া ও সালাত কত গুরুত্বপূর্ণ তা এমনিতেই টের পাওয়া যায়।

কারণ সালাত কায়েমকারীরা আল্লাহর সাথে এই সালাতের সংযুগের মাধ্যমে এমন পর্যায়ে পৌছায় যে তাকওয়াই তখন তাদের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় এবং চক্ষুশীলতাময় পরিবারের জন্য এই তাকওয়াই যার ভিত্তি।

সুতরাং বিয়ের সমস্যা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কারো কাছে গিয়ে কোনো লাভ নাই যদি তাকওয়া উন্নত না করা হয়। আমার অধিকার আদায় করে না বলে এই সম্পর্কে ফিরিস্তি দিয়ে কোনো লাভ নাই। কারণ অধিকার যে দিতে হবে এই বোধ বা জবাবদিহিতার উপস্থিতি বা তাকওয়া তাঁর নিকট উপস্থিত নাই।

এইটা আনতে হলে সূরা জুমু’আতে ধারাবাহিক পদ্ধতি পড়ে দেখুন। এখানে দেখুন নবী-রাসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য ও সফলতার ধারাবাহিক পদ্ধতি ( http://tinyurl.com/o2ab4a4 )।

এখন উপায়? উপায় হলো অধিকার নিয়ে একটা টু শব্দও না করা। গোড়ায় পানি না দিয়ে আগায় ঢাললে কোনদিন কোনো কাজ হবে না। সত্যিকার অধিকারের মূলে যান। আল্লাহ-তে যান। আল্লাহর তাকওয়া আনতে হবে। এই তাকওয়ার বোধ না আসা অবধি সত্যিকার অধিকারের কথা বলা মানে এক প্রকার স্বামী বা স্ত্রীকে চেতিয়ে দেওয়া।

এজন্য ঐ পোস্টের আলোকে আপনার স্বামী/স্ত্রীর সাথে আয়াত তেলাওয়াত করুন, আয়াত বা নিদর্শন নিয়ে আলোচনা করুন, নাফসের তাযকিয়া করুন। মৃত্যু থেকে আখিরাত বিস্তারিত আলোচনা করুন, খুবই বিস্তারিত এবং এভাবে ধারাবাহিক চলতে থাকুন, তাকে স্মরণ করিয়ে দিন- প্রতিদিন, ক্রমাগত।

জান্নাত-জাহান্নাম, জান্নাতের পুরুষ্কার, জাহান্নামের শাস্তি, শাস্তির ধরণ, পরিমাণ, পদ্ধতি ইত্যাদি বর্ণনা করুন। জান্নাতের বিশাল নেয়ামত, কি কি থাকবে, কেমন হবে সব, কত প্রশান্তি থাকবে, আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ধরণ ইত্যাদি। কিয়ামাত, হাশরের অবস্থা, তিন ধরণের লোক হবে, কাদের কিরুপ অবস্থা হবে, কেমন হবে তাদের ভাগ্য, পুলসিরাতের পথ ইত্যাদি আলোচনা করতে থাকুন। একজন মানুষ পাপী বা অপরাধী কারণ সে মৃত্যু থেকে শুরু করে জাহান্নাম এবং জান্নাতের আলোচনা যত কম শুনবে তত দুনিয়ামুখী হবে এবং কারো ব্যাপারে কেয়ারও করবে না। এব্যাপারগুলো নিয়ে যত লেকচার আছে, যত আর্টিকেল আছে, যত তাফসির আছে পড়ে ফেলুন, আলোচনা করুন, ক্রমাগত স্মরণ করিয়ে দিন। এভাবে নাফস পরিষ্কার করে তাকওয়ার দিকে নিয়ে যান, তবেই না আল্লাহ সম্পর্কে সচেতন হবে এবং আল্লাহর দেওয়া-আপনার অধিকার আদায়ে ব্যস্ত থাকবে। সুতরাং এভাবে আলোচনা করার মাধ্যমে হয়তো পরিবর্তন দেখতে পাবেন আল্লাহ হেদায়েত দিলে এবং এরপরে বললে পাবেন ন্যায্য অধিকার।

সুতরাং অধিকার দেয় না বলে গার্জিয়ান বা স্কলারের কাছে যাওয়া মানে বোকামি। আপনিই কুরআন পড়েন না আর পড়লেও বুঝেন না। তাইল সমস্যার সূচনা ও সমাধান পেতেন। স্কলারের কাছে গিয়ে বা পরামর্শকের কাছে গিয়ে অধিকার অধিকার বলে চিল্লালেও লাভ হবে না, কারণ ক্ষেত্র এখনো অধিকার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়!!

বিয়েসহ সমস্ত সম্পর্ক শুরু হয় আল্লাহর সম্পর্কের ভিত্তিতে (সূরা নিসা এবং বিয়ের খুৎবা)। এই আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতেই বিয়েতে “প্রশান্তি, মুওয়াদ্দাতাহ(প্রচন্ড ভালোবাসা), রাহমাহ” এবং অন্যান্য সবই আবর্তিত হয়। এই আল্লাহর সম্পর্ক তুলে ধরেছেন সূরা নিসা-য়। কুরআনের রেয়ার কেস, এখানে দুইবার ‘তাকওয়া’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন আল্লাহর সম্পর্কের ভিত্তিকে তুলে ধরতে। রামাদানের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে ‘তাকওয়া’র অর্জন। কিন্তু আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ভিত্তি, বান্দার সাথে বান্দার এবং এদের সাথে আল্লাহর সম্পর্কের ভিত্তি বর্ণনা করতেদুইবার ‘তাকওয়া’ শব্দ বলেছেন এবং দুইবারই আদেশসূচক শব্দে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কত গুরুত্বপূর্ণ আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ভিত্তি।

আল্লাহর সাথে এই ‘তাকওয়া’র ভিত্তিই ছিলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি অথচ এর পরিবর্তে নিজেদের অধিকারে নিয়ে নিজেদের স্বার্থে হাদীসকে ইচ্ছামত ব্যবহার,  একে অপরের এমন সবকিছু বলা যা অধিকারের চেয়ে কবীরা গুনাহই বেশি হয়। —অধিকারের পরিবর্তে কি হয়? সমস্ত কবীরা গুনাহ। যা হওয়ার কারণ হলো আল্লাহর অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হয়ে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অধিক সচেতন হওয়ার কারণে স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার শুরু।

অথচ পরস্পর যদি আল্লাহর অধিকার আদায়ে সচেতন হতো, তবে আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে কিরুপ তাকওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলোর ব্যাপারেও সচেতন থাকতো। এভাবে বিচ্ছেদ বা পারস্পপারিক দ্বন্দের পরিবর্তে বিবাহের যাবতীয় উদ্দেশ্য, স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন হতো আল্লাহর তাকওয়ার সম্পর্কের জন্য। কারণ তাদের তখন মূল লক্ষ্য থাকবে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করে তার যাবতীয় অধিকারের আওতায় সব মেনে, সমস্ত পাপ থেকে বিরত থেকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তখন কারো প্রতি কোনো অন্যায়, অনাচার, অসদাচার করতে পারে না। তাকওয়া, আদল, রাহমাহ-ই হবে তার মূল লক্ষ্য।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আমাদের দেশের যেকেউ স্বামী-স্ত্রী সংক্রান্ত কোনো বিষয় আনলে কেবল একজনকেই দোষারোপ করতেই দেখা যায় আর অধিকারের সমস্ত ফিরিস্তি দেওয়া হয় যে কী কী অধিকার বঞ্চিত এই স্বামী বা স্ত্রী অথচ সেখানে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার উপর খুব কমই আলোচিত হয় বা হয় না!!! এই অবস্থা যদি হয় আমাদের নারী-পুরুষ অধিকার চাওয়ার ফেইসবুকীয় বা ব্লগীয় স্কলার, তাহলে সমস্যা কোনো দিন মেটার সম্ভাবনাও আছে কিনা সেটাও দেখা উচিৎ, একটু তলিয়েই।

সূরা জুমু’আ, সূরা মুনাফিকুন, সূরা তাবাগুন। তিনটি ধারাবাহিক সূরা। ৬২, ৬৩ ও ৬৪ নং ধারাবাহিক আকারে। তিনটি সূরাতে কিছু সমস্যা ও সমাধানেরও পথ বাতলে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা এবং কীভাবে ব্যক্তিক, সামাজিক ও রাষ্রীয় সফলতা আনা যায় এসব সমস্যাকে মোকাবিলা করে সফলতার পথে।

সূরা জুমু’আতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যার সমাধানের পথ ও পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন এবং কীভাবে এ সফলতার জন্য ব্যক্তি ও আন্দোলনকে গড়ে তুলতে হবে সেই মিশনকে সূরার মূল বা কেন্দ্রীয় আয়াত ২ এ এই পদ্ধতিগুলোরও ধারাবাহিক পদ্ধতি এসেছে এবং কীভাবে তারবিয়াহ করবে এগুলো প্রত্যেক জুমু‘আতে সেটার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন জুমু’আর খুৎবায়।

সূরা মুনাফিকুনে সামাজিক সমস্যা মুনাফিকদের নিয়ে আলোচিত হয়েছে এবং সমাধানের পথও করে দিয়েছেন। নিজেদের সুবিধা ছেড়ে দান করা, আল্লাহর স্মরণ, ও মৃত্যুর সম্পর্কে চিন্তা করা। এভাবে নিফাক দূর করে ইনফাক করে সফল হওয়া।

সূরা তাবাগুনে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যা ও সমাধান দিয়েছেন ১৪-১৮ আয়াতে।

এবং আরো ধারাবাহিকভাবে যদি জানতে চান আল্লাহর এসব বাণী না মানলে কী হবে…তার বর্ণনা দেওয়া আছে সফলতার বিপরীতে ব্যর্থদের কীরুপ শাস্তি হয়েছিল সেটা এই তিনটি সূরার পরবর্তী সূরা তালাকে ( দুনিয়া ও আখিরাতে যা হবে)।

বাংলাদেশে বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বন্দ ও অশান্তি হয় নিজ অধিকার আদায়ের জন্য – আল্লাহর প্রতি একে অপরকে তাকওয়া অর্জনের দাওয়াহর মাধ্যমে ভালোবেসে আহবান করার মাধ্যমে নয়। তাহলে আল্লাহর দেওয়া সুকুন (প্রশান্তি), মুওয়াদ্দাতাহ, ও রাহমাহ কীভাবে চান যেখানে নিজ অধিকার নিয়ে ব্যস্ত আর আল্লাহর অধিকার নিয়ে কথা বলেন না অথচ তাঁর সবই চান।
6 Husband Wife all photos

লক্ষ্যণীয় ও দারুন বিষয় হলো – আল্লাহ সূরা বাকারায় তালাকের আয়াতের পর সালাত হেফাযতের আয়াত শুরু করেছেন। অর্থাৎ সালাত যেহেতু আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্কগত ইবাদাহ, আর এই সরাসরি সম্পর্ক না থাকলে সেই সরাসরি সম্পর্কের ভিত্তিতে পারস্পারিক যে বিবাহের সম্পর্কে সেই বিবাহেও সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ থাকে না আর এভাবে তালাক হয়ে যায়। এভাবে এখানে আল্লাহ সালাত হেফাযতের কথা বলে তালাক থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্কের উন্নয়নে জোড় দিলেন

এভাবে সূরা নিসায়ও আল্লাহ তার সাথে তাকওয়ার সরাসরি সম্পর্কের ভিত্তিতেই পারস্পারিক অধিকার আদায়ের কথা জোড় দিলেন।  এভাবে তাকওয়া এবং সালাত—দুইটা সরাসরি সম্পর্কের উপর জোড় দিয়ে আল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন যে আল্লাহর সাথে সরাসরি সকল সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করলে, তার সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চললে—স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে সকল প্রশান্তি, ভালোবাসা ও রাহমাহ দরকার তিনি সেগুলোও দেবেন। এভাবে স্বামী-স্ত্রীর এই  সূরাতেই (৩১) আল্লাহ “তাকওয়া ও সালাত” এর প্রতি জোড় দিলেন যেন “প্রশান্তি, ভালোবাসা ও রাহমাহ” পেতে কোনোরুপ সমস্যা-ই না হয়!!

এবং দানের কথা বলে উদার হতে  বললেন। দান যেমন অন্য কাউকে দেওয়া হয় এবং এভাবে অন্য বান্দাকে যেমন নিজ জিনিস দিয়ে দেওয়ার মন-মানসিকতা তৈরি হয়, তেমনি স্বামী বা স্ত্রীও যেহেতু আল্লাহর অন্য বান্দা তাই এখানেও একে অন্যের অদিকার দিতে তখন আর কোন কৃপন মানসিকতা থাকে না।

এভাবে তাকওয়া, সালাত, দান – এগুলো আল্লাহর সাথে, তার অন্য বান্দাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের গোড়াকে ঠিক করে আল্লাহ নিজ পরিবার, বিবাহ সম্পর্কে ঠিক করতে বললেন। সুবহানাল্লাহ!!  আর এভাবেই আল্লাহ সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ-র পাওয়ার কথা বলেছেন।


Husband wife success formula_2

সুতরাং বিবাহের ক্ষেত্রে প্ল্যানে এই তিনটি বিষয়, এ বিষয়গুলো যে সূরাগুলোতে এসেছে সেগুলোকে ভালোভাবে জানা, পূর্বাপর সূরাগুলোতেও ধারাবাহিকতা অনুসারে লিংক করে আরো ভালো কিছু খুঁজে পেতে চেষ্টা করে সুন্দর জীবনের পথে আগানও।
১। তাকওয়া
২। সালাত
৩। দান-সাদাকাহ

উপসংহার – একজন তাকওয়াবান স্বামী বা স্ত্রী কখন-ই নিজের জন্য কেবল স্বার্থপরতার মত ভাবে না। কারণ সে জানে আল্লাহ এই দুনিয়াকে মশার পরিমাণ তো দূরের কথা, মশার একটি ডানার পরিমাণও মূল্য দেন না। তাই তার তাকওয়ার মূল ভিত্তি হয় আল্লাহর সকল অধিকার আদায় ও আল্লাহ অন্যান্য বান্দা সম্পর্কে যত ন্যায় সংগত অধিকার রয়েছে তা ইনসাফের সাথে আদায় করে আখিরাতের প্রস্তুতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই সর্বোচ্চ উপরে রাখে। তাই তার এই দুনিয়ার স্বার্থপরতা, ভোগ, নিজ অধিকার আদায়ের নামে দুনিয়ার প্রতি অবসেস—এগুলো কোনোটাই কাজ করে না। সে চায় আল্লাহর সন্তুষ্টি আর এ সন্তুষ্টির কারণেই আল্লাহ-ও তাকে দুনিয়াতে প্রশান্তি দান করেন।

পূর্ববর্তী কোনো কোনো স্কলাদের স্ত্রী কুরআন ও হাদীসে জান্নাতী নারীদের যে বৈশিষ্ট আল্লাহ বলেছেন – সেগুলোকে দুনিয়াতেই তাদের স্বামীর জন্য করতে চেষ্টা করতেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও স্বামীদের জন্য তাদের ভালোবাসার জায়গাটা কোথায় ছিল বুঝতে পারছেন নিশ্চয়।

তেমনি রাসূল ﷺ স্ত্রীদের সাথে নিজে খেলাধুলা, হাসি-ঠাট্টা করতেন এবং তিনি স্বামীদেরকে নির্দেশ দিতেন স্ত্রীদের সাথে আনন্দ ও খেলাধুলা করতে।

স্বামীদের উচিৎ রাসূল সা কেমন শ্রেষ্ট স্বামী ছিলেন, স্ত্রীদের উচিৎ নবীর স্ত্রীরা কেমন আদর্শ স্ত্রী ছিলেন – এবং এ সংক্রান্ত বই পড়ে, লেকচার দেখে নিজের জীবনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।

যতটুকু ভুল হয়েছে সেটুকু আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে আর যতটূকু ভালো তুলে ধরেছি সেসব আল্লাহর দয়া। আল্লাহ আমার ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দিন, ভালোকে কবুল করে আল্লাহর সন্তুষ্টির ওয়াসিলা বানিয়ে দিন। আল্লাহুম্মা আমীন।


Some Further Reading Materials


বিবাহ  ও সম্পর্ক


  1. The Healthy Marriage Nouman Ali Khan

  1. What WOMEN need to KNOW about MEN – Yasir Qadhi

  1. What MEN need to KNOW about WOMEN – Yasir Qadhi

  1. Ustadh Nouman Ali Khan – “The Jahaliyyah of Matrimonials”

  1. বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর – শাইখ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
বুক রিভিউ – http://tinyurl.com/njyg8we

  1. Like A Garment by Dr. Yasir Qadhi

7. What Men and Women Should Know About Each Other – Sheikh Omar Suleiman

  1. Get Ready Before Getting Married – net

সালাত


  1. Salah & Marriage – Shaykh Abdun Nasir Jangda

  1. সালাত ও প্রশান্তি

বিবাহ ও পারিবারিক জীবন 


  1. পরিবার ও পারিবারিক জীবন – মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রাহিমাহুল্লাহ)

  1. বাসর রাতের আদর্শ – আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)

  1. স্বামী স্ত্রীর অধিকার – সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রাহিমাহুল্লাহ)

  1. Time, Love, Praise and Encouragement in Relationships – Nouman Ali Khan

  1. রসূলের স. যুগে নারী স্বাধীনতা –:আবদুল হালীম আবু শুককাহ

Taqwa


  1. What is Taqwa? – Mufti Ismail Menk

  1. Who Are the People of Taqwa? – Nouman Ali Khan

  1. 15 benefits of taqwa (piety) by Sheikh Hamza Yusuf

Charity

  1. Tariq Ramadan: Day 27 Sacrifice

  1. Giving for Allah’s Sake – Nouman Ali Khan – Quran Weekly

  1. Charity – Shaykh Abdul Nasir Jangda – Quran Weekly

  1. Give from that which you love – Omar Suleiman

  1. Sadaqah Jariah “Best returns on Investment” – Mufti Menk

  1. Value of Charity | Twins of Faith Show | Sheikh Tawfique Chowdhury

  1. Sheikh Dr. Tawfique Chowdhury – Charity


Important Site Sections


  1. Family Section

  1. Relationship – Marriage and Family Section

  1. See Relationships Section –

যেকোনো সাজেশন – alsabanow13@gmail.com

আর্টিকেলটির PDF  – http://tinyurl.com/ot33rp2