Friday, August 21, 2015

সিরাহর উদ্দেশ্য; সিরাহ নাকি ফিকহুস সিরাহ? কোনটি প্রায়োগিক, বাস্তবসম্মত ও প্রাসঙ্গিক? – ২য় পর্ব

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। যিনি আমাদেরকে তাঁর দয়ায় আচ্ছন্ন রেখেছেন আমাদের নাফরমানী সত্ত্বেও। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক মানবতার মুক্তির বাহক, রাহমাতাল্লিল আলামীন, আমাদের প্রিয় নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ﷺ এর উপর। সালাম বর্ষিত হোক তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের উপর এবং সাহাবাদের উপর ও পূর্ববর্তী সকল সালফে-সালেহীনদের উপর যারা আমাদেরকে ইসলামের সঠিক পথ দেখানোর জন্য অনেক কষ্ট করে গেছেন।
 Capture
ব্লগের সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে অনেক সেটিংস ঠিকমত আসে না। এজন্য ভালোভাবে পড়ার জন্য আমি নীচের পিডিএফটি পড়তে অনুরোধ করবো।

সিরাহর বিশ্বাযোগ্যতা


সিরাহর ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যে হাদীস সংকলনের আগেই এটি সংকলনের যে তীব্র বাসনা ছিল, সেটি প্রমাণ করে সিরাহর গুরুত্ব। এর আগেও আমরা দেখেছি কুরআনে আল্লাহ রাসূলের সিরাহর কথা উল্লেখ করেছেন। এ থেকেও স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ তাঁর রাসূলের সিরাহকে রক্ষা করবেনই। অর্থাৎ তাঁর সিরাহ যদি রক্ষিত নাই হয় বিশুদ্ধভাবে, তবে কুরআন-ই ভুল প্রমাণিত হবে। এমনকি আমরা দেখেছি রাসূলেওর জন্মের পূর্ব থেকেই এসব লিপিবদ্ধ হচ্ছে কুরআন ও হাদিসে।

এখন প্রশ্ন, সিরাহর বই হিসেবে যে আমাদের কাছে যেই ইবনে হিশাম এসেছে ইবনে ইসহাক থেকে, সেই ইবনে ইসহাক তো হারিয়ে গেছে যা সনদ আকারে ছিল বলে বিশুদ্ধ বলতে পারি কিন্তু ইবনে হিশামে তো সেটা নেই। তাহলে এখন এর বিশ্বাসযোগ্যতা ও বিশুদ্ধতা কীভাবে নিরুপন করবো?

. হামিদুল্লাহর গবেষণাঃ এই প্রশ্নের উত্তর এসেছে ড. হামিদুল্লাহর গবেষণা থেকে। তিনি সিরাহর ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর গবেষণা পরিচালনা করে ইবনে ইসহাকের একটা খন্ড কপি আবিষ্কার করেন ফ্রান্সের পুরাকীর্তির জাদুঘর থেকে। তিনি এমনই স্কলার ও রিসার্চার ছিলেন যে ২০টি ভাষা জানতেন অনর্গল। তিনি অনেক প্রাচীন ম্যানু্স্ক্রিপ্ট আবিষ্কার করে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তিনি ইবনে ইসহাকের ম্যানুস্ক্রিপ্ট পেলেন কিভাবে? এর একটি উত্তর সাম্রাজ্যবাদ ও কলোনিয়ালিজম। কারণ সাম্রাজ্যবাদীরা এসব পূরানো ম্যান্যুস্ক্রিপ্টের মর্যাদা বুঝতেন, তারা শিল্পপ্রিয় ছিল। এজন্য হয়তো শিল্প ও ম্যান্যস্ক্রিপ্ট এর কিছু কিনে নিয়েছিলেন আর কিছু জোড় করে নিয়েছিলেন। এভাবে এগুলো কলোনিয়ালদের হস্তগত হয়। এজন্য আমরা কুরআনের প্রাচীন কপি এখনো প্যারিস ও লন্ডনে দেখতে পাই। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে অনেক ইসলামিক ম্যান্যুস্ক্রিপ্ট ধনি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিও করে দিয়েছিল। এগুলোর অনেক কিছুই জার্মানিতে দেখতে পাওয়া যায়। জার্মানিদের ইসলামের প্রতি আগ্রহবোধ ছিল সেই ১৮শ শতাব্দী থেকেই। সুতরাং হামিদুল্লাহ যেহেতু এরাবিক ভাষায় দক্ষ ছিলেন, তাই তিনি প্যারিস, লন্ডন ও অন্যান্য জায়গায় এসবের অনেক কিছুই আবিষ্কার করেন। এর মাঝে সিরাতে ইবনে ইসহাকের একটা খন্ড কপিও ছিল!! মুসলিম উম্মাহ মনে করেছিল সিরাতে ইবনে ইসহাক হারিয়ে গেছে কিন্তু তিনি এক-চতুর্থাংশ আবিষ্কার করেন।

তিনি এটাকে এডিট করে প্রকাশ করেন। এজন্যই আমরা যখন সিরাতে ইবনে ইসহাক ও ইবনে হিশামকে তুলনা করে দেখি, তখনই একই দেখতে পাই। কারণ সিরাতে ইবনে হিশাম নেওয়া হয়েছিল সিরাতে ইবনে ইসহাক থেকে। হামিদুল্লাহ যখন এ দুটোকে তুলনামূলক দেখতে লাগলেন, তিনি সিরাতে ইবনে হিশামকে খুবই নিখুঁত পেলেন। কারণ তিনি তিনি সিরাতে ইবনে ইসহাক থেকে অনেকাংশই বাদ দিয়েছিলেন প্রয়োজনের ভিত্তিতে।

ইবনে হিশাম কি বাদ দিয়েছিলেন?

ইবনে হিশাম তাঁর সিরাহ থেকে বড় বড় কবিতা ও আরবের বংশ তালিকা বাদ দিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি যখনই ইবনে ইসহাক একটি নাম উল্লেখ করতেন, তিনি একে নূহ (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত ৫০-৬০টি বংশধরের তালিকা দিতেন। এখানে ইবনে হিশাম যখন তিনি কাট-ছাট করে সংক্ষিপ্ত করলেন, তিনি এখানে  প্রত্যেকবারই এই যতবারই এই বংশ তালিকা আসত, তিন মাত্র ৪-৫ জনের নাম উল্লেখ করে রাসূল ﷺ  নাম পর্যন্ত তালিকা দিতেন সিরাহ লিখতে গিয়ে। এভাবে সিরাহতে যতগুলো নাম আসত এবং তাদের বংশ তালিকা আসতো, সবগুলোই তিনি কেটে সংক্ষিপ্ত করতেন। হামিদুল্লাহ যখন তাঁর পাওয়া কপির সাথে ইবনে হিশামকে তুলনা করলেন, তিনি একে বিশুদ্ধ পেলেন এবং এখন আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারি আমরা বিশুদ্ধ সিরাহ পাচ্ছি যা সনদের ভিত্তিতে রচিত হয়েছিল সিরাতে ইবনে ইসহাক এবং এটি থেকেই সংক্ষিপ্তাকারে সিরাতে ইবনে হিশাম পাচ্ছি। আমরা এখন বলতে পারছি যে আমরা রাসূলের মৃত্যুর মাত্র ১০০ বছর পর যে সিরাহ রচিত হয়েছিল, সেটি পড়ছি!!

হাদীসের সাথে তুলনা করলে দেখেন হাদিস সংকলিত হওয়ার কত আগেই সিরাহ সংকলিত হয়েছে। ইমাম বুখারি মৃত্যুবরণ করেন ২৫৬ হিজরীতে, ইমাম মুসলিম ২৬১ হিজরীতে কিন্তু ইবনে ইসহাক মৃত্যুবরণ করেন ১৫০ হিজরীতে। তিনি সিরাহর বইটি ১৩০ হিজরীর দিকে লিখেন। তাঁর মানে রাসূলের মৃত্যুর মাত্র ১০০ বছরের মাঝেই এটি পুরো সংকলিত হয়ে যায় আর আমরা এর বিশেষ অংশ ও কিতাবাকারে পাচ্ছি সিরাতে ইবনে হিশামের মাধ্যমে।

এছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারে আর বলা যায় আমাদের নতুন যারা ফিকহুস সিরাহ লিখতেছেন বা নতুন করে কোনো সিরাহ লিখতেছেন, তারা সবাই কিন্তু ক্লাসিকাল সোর্স বা হাদীস থেকেই রেফারেন্স নিচ্ছেন। সিরাহ গ্রন্থ হিসেবে যে সনদের বিশ্বাসযোগ্য ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেই এসেছে সেটার প্রমাণ আমরা দেখেছি।

এছাড়া অন্যান্য যেসব সিরাহ আমরা পাই মুহাদ্দিস ও ইসলামী আলেম থেকে, সেগুলোতেও বিশ্বস্ত হওয়ার কারণ তারা প্রত্যেকেই সনদ ও বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিখ্যাত ছিল। এরকম আমরা পাই ইবনে কাসির, ইমাম নববী বা ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) এর সিরাহ। এদের প্রত্যেকেই কিন্তু সনদ ও বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সতর্ক-ই ছিল। সুতরাং এগুলোর বিশুদ্ধতার জন্য এদের থেকে বর্তমানে যেসব সিরাহ বা ফিকহুস সিরাহ আসতেছে, সেগুলোর ব্যাপারেও আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে এগুলোও বিশুদ্ধ হিসেবেই আছে।

সিরাহর কয়েকটি ধারা  ও বৈশিষ্ট


১। কুরআন-হাদীস-সিরাহ থেকে সিরাহ – সিরাতে ইবনে কাসির।
২। ফিকহুস সিরাহ – আধুনিক ধারার অনেক সিরাহ-ই রয়েছে।
৩। সিরাতের কিতাব – সিরাতে ইবনে হিশাম
৪। কুরআন-হাদীস থেকে সিরাহ

সিরাতে ইবনে কাসিরের বৈশিষ্ট হলো এটি ইউনিকলি কুরআন এবং হাদীস থেকে নেওয়া হয়েছে এবং সিরাতের কিতাব থেকে কেবল ঐ জায়গায় নেওয়া হয়েছে যেখানে কুরআন বা হাদীসে স্পষ্ট ও বিস্তারিত নেই। ইসলামী স্কলার বা আলেমরা প্রায় প্রত্যেকেই একে রেফারেন্স হিসেবে আনেন এবং স্কলাররা যেহেতু ভালো জ্ঞান রাখেন সেজন্য এসব রিসোর্স থেকে নিয়ে তারা আমাদেরকে ফিকহুস সিরাহ হিসেবে আধুনিককালের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাগুলোকে তুলে ধরেন। যেমন অডিও আকারে করেছেন ইমাম আনওয়ার আল-আওলাকী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ আব্দুন নাসির জাংদা ও ভিডিও করেছেন শাইখ ড. ইয়াসির কাদি।

এছাড়া আমরা যতগুলো নাম উল্লেখ করেছি পূর্বে, সেগুলোর অধিকাংশ-ই সিরাহর শিক্ষাগুলো নিয়ে আধুনিক সময়ের প্রয়োজনের ভিত্তিতে সাজানো অর্থাৎ ফিকহুস সিরাহ।

ফিকহুস সিরাহ-ই এক্ষেত্রে আমাদের মত আম জনতার জন্য সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ট। সিরাত পড়ে কিছু ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলবে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমাদের জীবনের সাথে একে সম্পৃক্ত করতে পারবো না। এজন্য আমাদেরকে সিরাহকে যখন বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়, এ থেকে শিক্ষাগুলোকে সমকালীন যুগের সমাধানের উপযোগী করা হয়, তখন এটি আমাদের জন্য জীবন্তরুপে ধরা দেয়। আধুনিককালের এই ট্রেন্ড আমাদেরকে রাসূলের তথা ইসলামের জীবন্তরুপ এনে দিয়েছে।

পশ্চিমা মুসলিম ও অমুসলিমদেরও লেখা কিছু সেরা সিরাহগ্রন্থ রয়েছে। যেমন একটি মার্টিন লিংকস এর (ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন)। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শেক্সপিয়রের উপর প্রফেসর ছিলেন। এজন্য তাঁর লেখা সিরাহ ইংরেজিতে সর্বাপেক্ষা অলংকার ও বাগ্মীতাপূর্ণ। কিন্তু এর মাঝে ২-৩টি ঘটনায় সমস্যা রয়েছে। গুগুলে দেখে নেওয়া দরকার। যেমন একটি ঘটনা নবীকে তিনি যায়নাবের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে দিয়েছেন। এটি ভুল ঘটনা। এ নিয়ে শাইখ ইয়াসির কাদি লেকচারও দিয়েছেন ইয়েল ইয়নিভার্সিটিতে।

ড. আলী মুহাম্মাদ আস-সাল্লাবী তাঁর বিখ্যাত সিরাহর বই Noble Life of The Prophet তে বলেনঃ

“প্রত্যেক মুসলিমের উচিৎ আল্লাহর রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন করা। প্রকৃপক্ষে আমাদের জীবনের অনেক ইসলামী দায়িত্ব-ই রাসূলের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুর ওপর নির্ভরশীল। যেমন প্রত্যেকের উচিৎ রাসূলকে ভালোবাসা কিন্তু তাকে না তাঁর সম্পর্কে না জেনে কিভাবে সেটা করবো? রাসূল যখন কুরাইশদের কাছে দাওয়াত পৌছাচ্ছে তখন আমরা জন্মগ্রহণও করিনি। সুতরাং রাসূলের সাথে পরিচিত হবার ও তাকে ভালোবাসার একটি মাত্র পথ বাকী থাকে, সেটা হলো তাঁর কথা ও কাজ অধ্যয়ন করা। আমরা কথা ও কাজ না জানলে কিভাবে তাকে অনুসরণ করবো। এক্ষেত্রে তাঁর জীবনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো “প্রসঙ্গ”- কোন প্রসংগে তিনি কোন কথা বলেছিলেন বা কাজ করেছিলেন”।

নন-মুসলিম লেখকদের সিরাহ থেকে তিনটি সাবধানতা


নন-মুসলিমদের সিরাহ থেকে উপকৃত হতে পারি কিন্তু সতর্কতার সাথেই নিতে হবে। এর কারণ হলো – নন-মুসলিমদের মধ্যে অনেকেই বিকৃত করে রাসূলকে উপস্থাপন করে। অনেকেই অনেক ভালো লেখে কিন্তু সেটা ইসলামের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করে না, তারা করে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে।

ড. রাজেহ আল-কুরদী  তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন কেন নন-মুসলিম লেখদের উপর বেশি ভরসা করা উচিৎ নয়।

১। তাদের রিসার্স ও রেফারেন্স মুসলিমদের জন্য ব্যবহারিক বা প্রয়োগযোগ্য নয়। কেননা তারা বেশিরভাগ সময়েই দার্শনিক বা যৌক্তিক দিক তুলে ধরেন। অথচ এগুলো কাউকে ঈমানের কাছে আনার জন্য বেশি কার্যকরী নয়। এই ধরণের অ্যাপ্রোচ কাউকে ইসলাম উপলব্ধি করতে সাহায্য করে না বরং ইসলাম উপলব্ধির ধারা থেকে দৃষ্টিকে সরিয়ে রাখে।

২। অনেকেই অনেক ভালো লেখেছেন এবং এগুলোর গ্রহনযোগ্যতাও রয়েছে আমাদের মাঝে। কিন্তু এইসব লেখাও ইসলামের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে হয়নি এবং এজন্য রাসূলের জীবনীকে ইসলামকে উপস্থাপনার জন্য যেভাবে তুলে ধরা দরকার, সেভাবে হয়নি। এজন্য এই জীবনীর মাধ্যমে ইসলামের উপলব্ধি বা প্রকৃত দৃষ্টান্ত আসে না।

৩। অনেক লেখকের নিজের ফিলোসফি, ধারণা, বুদ্ধিবৃত্তি ও আদর্শ রয়েছে। তারা জীবনী লিখতে গিয়ে নিজেদের এইসব আদর্শকে রাসূলের জীবনীর মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলে ধরে। এভাবে তারা রাসূলের জীবনীকে কিছু দিককে প্রাধান্য দেয় দেয় আর অন্যগুলোকে ছেড়ে দেয়। যেকারণে ইসলামের একটা দিক না আসার কারণে অন্যদিকগুলোও সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপিত হয় না আর এভাবে ইসলামকেও তারা কিছুটা অপূর্ণ ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে।

ড. জামাল বাদাওয়ী বলেনঃ আমি ড. কুরদীর তিন পয়েন্টেইর সাথেই একমত। কারণ নন-মুসলিমরা অনেক সময়েও ইসলামের একপেশে উপস্থাপন করে রাসূলের জীবনীকে তাদের নিজেদের আদর্শের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করে। অনেকেই আবার প্যাগানিস্টিক ধারায় জীবনীকে উল্লেখ করে। এজন্য নন-মুসলিমদের সোর্স নেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবেই সতর্ক থাকা দরকার যেন ইসলামের উদ্দেশ্যসমূহ থেকে আমাদের দৃষ্টি কোনোভাবেই সরে না যায়।

ফিকহুস সিরাহ

  1. অনেকেই হয়তো জীবনী পড়েই নি-তারা হয়তো ইসলামের এইখান থেকে একটু, ঐখান থেকে একটু নিতে নিতে ইসলামকে পূর্ণভাবে মিলাতেই পারছে না…মনে হয় ইসলাম পরিপূর্ণ নয় বা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
  2. আপনি রাসূল (সা)এর একটা বা দুইটা জীবনী পড়ে ভাবছেন যাক, রাসূল(সা)এর জীবনী জানতে পারলাম।
  3. অনেকেই জীবনী পড়েছেন কিন্তু বাস্তবিক জীবনে এখন কীভাবে প্রয়োগ করবেন সেটা খুঁজে পাচ্ছে না।

1 নং পয়েন্টে – এসব বিবেচনায় এনেই স্কলাররা কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক খোঁজে পেলেন। রাসূল (সা) এর পূর্ণাংঙ্গ জীবনী না পড়লে তাঁর পক্ষে ইসলামকে পূর্ণাংঙ্গ ও ধারাবাহিকতা খোঁজে পাবেন না-বলতে পারেন তাঁর কাছে ইসলামের অনেক অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়বে-যেহেতু কোরআন-সুন্নাহতে ধারাবাহিকতা নেই আর সেইজন্য রাসূল (সা) এর জীবনীই এই কোর’আন-সুন্নাহর ধারাবাহিক দলীল হওয়ায় এটি পড়ার মধ্য দিয়েই ইসলামের প্রাথমিক সূচনা হতে পারে, হতে পারে পূর্ণাঙ্গ ধারাবাহিক সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাথমিক ও মৌলিক সিলেবাস।

2 নং পয়েন্টে – একটি বা দুইটি জীবনী যারা পড়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা তৈরি হয়। সুন্নাহ অনুযায়ী রাসুল (সা) এর জীবনীকে প্রায় ১১-১৩ বিভিন্ন ভূমিকায় ভাগ করা যায়। নবী হিসেবে, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে, মানব হিসেবে, কনসালট্যান্ট হিসেবে…। এভাবে প্রত্যকটি ডাইমেনশন যদি না জানেন তবে রাসূল (সা) কে কীভাবে পূর্ণাংঙ্গভাবে জানতে পারলেন? মানে ইসলামকে কীভাবে পূর্ণাংঙ্গরুপে জানতে পারলেন? কেবল এদিক থেকেই নয়, বরং ১১-১৩ ভূমিকার সাথে বর্তমানকালের জীবনী লেখাতে আরো কিছু বিষয়যুক্ত হয়। এর মাঝে আধ্যাত্বিক জীবনী, যুক্তিভিত্তিক জীবনী, তুলনামূলক জীবনী, পশ্চিমাদের অভিযোগখন্ডনমূলক জীবনী। এভাবে কেউ লিখেছেন রাসূল(সা)কে ভালোবেসে, কেউ লিখেছেন যুক্তি দিয়ে, কেউ লিখেছেন পূর্ণাঙ্গ জীবনের শিক্ষাগুলো নিয়ে।

এসবগুলো ডাইমেনশন জানার মধ্য দিয়েই আপনি রাসূল(সা)এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী তথা ইসলামের পূর্ণাংঙ্গ রুপ দেখতে পারবেন বিশাল আকাশের মত রুপ হওয়া সত্বেও।

3 নং পয়েন্টে – রাসূল (সা) এর জীবনী এযাব অনেক সিরাহ লেখা হয়েছে। এ সিরাহগুলো ছিল ইতিহাস এবং সনদ নির্ভর। কিন্তু পরবর্তীতে যখন উম্মাহর মাঝে ইসলামী কর্মী থাকা সত্বেও তাদের মাঝে প্রাণ খোঁজে পাওয়া গেল না, তখন স্কলাররা নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন, কেন এই সমস্যা হচ্ছে? তখন তাদের মাঝে অনেকেই বুঝতে পারলেন যে সমস্যা ইসলামের নয়, সমস্যা আমাদের উপলব্ধিতে, সমস্যা ইতিহাসকে জীবন্ত না করার মাঝে, আজকের দিনের মুহাম্মাদ (সা) এর অভাব। আজকের দিনে মুহাম্মাদ (সা) থাকলে কি করতেন? এখন তো আর মক্কা-মদিনার সেই সহজ সামাজিক জীবন-ব্যবস্থা নেই। তাই এই জটিল সামাজিক জীবন-ব্যবস্থায় তিনি কি করতেন? অর্থাৎ ইতিহাস নির্ভর জীবনী নয়, আমাদের দরকার সেই জীবনীর বর্তমানের বাস্তবিক প্রয়োগের দিক-নির্দেশনা। সেখান থেকেই স্কলারদের অবদানে উঠে আসে নতুন জীবনী, ইতিহাসের অতীতকালের সাথে লেগে থাকা জীবনী নয় বরং বাস্তবিক জীবনে আজকের দিনে কীভাবে রাসূল(সা) কে এর শিক্ষাগুলোকে উপলব্ধি করব ও প্রয়োগ করবো- সেই থেকে ‘ফিকহুস সিরাহ’র যাত্রা

রাসূল ﷺ এর সমাজের সাথে আজকে উত্তরাধুনিক ও জটিল প্রাযুক্তিক সমাজকে তুলনা করেন হয়তো বেশিরভাগ অংশই মিলাতে পারবেন না কিছু ব্যবহারগত পারিভাষিক শব্দ ছাড়া। আজকের বাংলাদেশের ইতিহাস যদি মাত্র ৪০ বছর আগে দেখতেন তবে দেখতেন ঐ সময় এ দেশ কত সহজ ছিল, ছিল না আধুনিক প্রযুক্তি, এত বুরুক্রেটিক জটিলতা বা আইনের এত বিভাগ। অথচ এর তুলনায় রাসূল ﷺ এর যুগ কত আগের ছিল? প্রায় প-নে-র শত বছর আগের!! চিন্তা করতে পারেন সেই যুগ আর আজকের যুগের মাঝে কত বিশাল পার্থক্য রয়েছে?

আজকের যুগে যদি মসজিদে বসে দেশ পরিচালনা করতে যান তবে স্কলাররা এটা শুনে হাসতে বাধ্য হবে আর আপনি ভাববেন এটাই তো রাসূল ﷺ  করে গেছেন। পার্থক্য? না, রাসূল ﷺ ভুল করেন নি। তিনি দুনিয়াকে পরিচালনা করেছেন মূলনীতির আলোকে যা আজকের যুগের বাস্তবতার সাথে ঐসব মূলনীতি দিয়ে এই জটিল প্রাযুক্তিক উত্তরাধুনিক সমাজকেও পরিচালনা করা সম্ভব। হ্যা, এই সম্ভব হওয়ার কারণেই ইসলাম বৈশ্বিক ও সর্বশেষ ধর্ম। এর জন্য দরকার ফিকহুস সিরাহ। শুধু সিরাহ পড়ে আপনি অনেক কিছুই এবং বেশির ভাগ অংশই আজকের যুগের চিন্তার সাথে মেলাতে পারবেন না। মনে হবে কোনো এক প্রাচীন ইতিহাস পড়ছি যার সাথে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, এত যুক্তি-মতবাদ, এত জটিল সমাজের সাথে যার বিন্দুমাত্র মিল নেই। এ কারণেই ইসলাম বিদ্বেষীরা বা নাস্তিক-সেক্যুলাররা ইসলামকে বৈশ্বিক মানতে নারাজ। তারা এটাকে আরবীয় ইতিহাসের ধর্ম মনে করে যার সাথে আজকের যুগের কোন সম্পর্ক নেই। আজকের যুগের এই জটিলতম পৃথিবীতে এই ধর্ম অচল। এটি ছিল আরবের প্রাচীনকালে ধর্ম যা আমাদের এই উত্তরাধুনিক যুগে এলিয়েন বা মিথের মত।

সমস্যা তাদের নয় বরং এর দায় আমাদেরই; যুগের সাথে আমাদের প্রাসঙ্গিক উপলব্ধিহীনতা। আমরা তাদেরকে রাসূল   কে এমন কোনো  জীবনীগ্রন্থ দিতে পারিনি যা দেখে সে অভিভূত হবে; বুঝতে পারবে যে আজকের যুগের এত এত সমস্যাকে কীভাবে সেই পনের শত বছর আগের সেই মুহাম্মাদের জীবনীর মাধ্যমে নিশ্ছিদ্র সমাধান দেওয়া হয়েছে!!

তবে বাংলাদেশে দুংখ ও দূর্ভাগ্য এটাই যে ফিকহুস সিরাহর ধারণা স্কলাররাও কম দিয়েছেন আমাদের- ফিকহুস সিরাহর অনুবাদ মাইক্রোস্কোপ দিয়ে একটা পাওয়া যেতে পারে, তাও পূর্ণাঙ্গ নয় বা সব কিছুকে কাভার করেনি বা সম্ভব হয়নি!! এর ফলে আমরা ইসলাম নিয়ে কথাও বলি আবার ফেইসবুকের কমেন্টে, মতবিরোধে, অন্য দলের লোকদের প্রতি…যাক আর না বলি; এগুলো সবাই মোটামুটি জানে। মূল কথা হলো আমরা এখনো রাসূল (সা) কে বুঝতে পারিনি, উপলব্ধি করতে পারিনি, ইসলামকে হৃদয়ংগম করতে ব্যর্থ হয়েছি।

এখানে এই তিনটা ডাইমেনশনকে লক্ষ্য রেখেই রিসোর্সগুলো দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যদি ১০-১৫টি ফিকহুস সিরাহ অনুদিত থাকত- কত বড় রিসোর্স-ই না হতো!!…একজন সেকুলার বা নাস্তিক বা অমুসলিমকে দেওয়ার মত কোন ভালো জীবনী আছে? যা দেখে মনে করবে আজকের দিনের এই মুহাম্মাদ (সা) এর শিক্ষাই পারে দুনিয়ায় ন্যায়বিচার, সুস্থ সমাজ ও প্রশান্তি আনতে। বোধ হয় নেই, আরবের একজন মানুষের ইতিহাস আজকের উন্নততর ও জটিল প্রাযুক্তিক সমাজে সেকেলেই মনে হয়, তাঁর প্রাসঙ্গিকতা খোঁজে পাওয়া দুষ্কর…কিন্তু অনেক স্কলার কাজ করে গেছেন, দূর্ভাগ্য বাংলাদেশে আলেম সম্প্রদায় ও ইসলামের কর্মীদের, যে তারা সবগুলো ডাইমেনশনগুলোর ফিকহুস সিরাহ অনুবাদে আনতে পারনি!! আমরা নিজেরাই ইসলামের শিক্ষা বুঝতে এখনও বহুত বাকি, তো সমাজে কায়েমের চিন্তা আরো বহুত দূর রাখলেই ভালো হয়!!

অথচ স্কলারদের উচিৎ ছিল জ্ঞানের জগতে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ক্রিটিকাল মনন তৈরি করে সচেতনতা বাড়ানো এবং এবং ইসলামিক স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখা, কোনো দেশে কোনো স্কলারদের ভালো বই বের হলেই সেটিকে অনুবাদ করা…আমাদের দেশের এরকম বৈশ্বিক যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম আছে কি?!!

ড. মোস্তফা হুসনি আস-সিবাই (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর অসুস্থতা থাকা অবস্থায়ও এত চমৎকার ফিকহুস সিরাহ লিখেছেন এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলে গেছেন যেন সবাই সিরাহকে ভালোবেসে অধ্যয়ন শুরু করে – এই অনুপ্রেরণা দান করা। তিনি যে এই ক্ষেত্রে অকেব বড় সফলতা পেয়েছেন তা বলা বাহুল্য-ই হবে। কারণ তিনি দেখিয়েছেন রাসূলের শিক্ষা, আদর্শ, উদাহরণ, সংস্কার- সবই জীবন্ত এবং এটি সকল দাঈ ও সংস্কারকদের জন্য অভিজ্ঞতার ঝুড়ি, অনাদিকাল পর্যন্ত, সকলের জন্য।

ড. তারিক রামাদান মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার জন্যই উপন্যাসধর্মী কিন্তু ইসলামের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই লিখেছেন অসামান্য সিরাহর বইটি। সেখানে তিনি বলেনঃ

“আমাদের প্রধান ফোকাস থাকবে রাসূলের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান, আচার-ব্যবহার অথবা কথার ওপর জোড় দেওয়া এবং দেখবো এগুলো মুহাম্মাদের ব্যক্তিত্বের মধ্য দিয়ে সমকালীনযুগে আমাদের জন্য কি শিক্ষা বয়ে নিয়ে আসে।…এজন্য আমাদের প্রাথমিক চিন্তা হলো মুহাম্মাদের জীবনের গভীরে ডুব দেওয়া এবং এ থেকে চিরন্তন শিক্ষাগুলোকে তুলে আনা। তাঁর জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, ঘটনায় জর্জরিত, বিভিন্ন অবস্থা ও দিক- সবই আধ্যাত্বিক উন্নতির চরম শিখরে অবস্থিত…আমরা মুহাম্মাদের জীবনকে আমাদের সময়ের অ্যাপ্রোচে নিয়ে দেখবো আমাদের সমসাময়িক সময়ে কি শিক্ষা নিয়ে আসে…”

ফিকহুস সিরাহ ও সিরাহ রিসোর্স


আমরা এখানে সিরাহর ক্ষেত্রে বিখ্যাত ও সিরাহর গভীর উপলব্ধিসম্পন্ন রিসোর্সসমূহ-ই দেবো যেগুলো আমাদের জীবনকে আরো উন্নত করতে সাহায্য করবে, ভালো মুসলিম হওয়ার পথ দেখাবে, ইসলামের এবং সিরাহর উদ্দেশ্যগুলোকে তুলে ধরবে। এজন্য বিখ্যাত স্কলার ও বিশেষজ্ঞদের সিরাহ ও ফিকহুস সিরাহর রিসোর্স দেবো এখানে। যেগুলোর সফট কপি পেয়েছি, সেগুলোর লিংক দিয়ে দিয়েছি। আর যেগুলোর পাইনি সেগুলোর লিংক দিয়ে দিয়েছি যাতে কোনো মাধ্যমে পেতে পারেন।   যেসব স্কলার ও বিশেষজ্ঞদের রিসোর্স দিয়েছি, সবার নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয়, রিসোর্সের নামগুলোকে গুগুলে সার্চ দিয়ে তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন। তবুও এখানে কিছু উল্লেখ করে দিচ্ছি।  

 বর্তমান শতাব্দীর প্রথম পর্যন্ত যে কয়জন শ্রেষ্ট ইসলামী আলেম ছিল, তাদের মধ্যে সর্বাজ্ঞেই রাখা যায় ড. সাঈদ রামাদান আল-বুতীকে (রাহিমাহুল্লাহ, মৃত্যু-২০১৩)। তাঁর সিরাহ-ই এযাবতকালে ফিকহুস সিরাহর জন্য সর্বাজ্ঞে থাকবে। উনার আগে কি কেউ এত গভীরভাবে ভাবতে পেরেছেন? বোধ হয় সেভাবে কেউ পারেনি। উনার নিজেও সেই স্বীকৃতি যে এই ফিকহুস সিরাহর উপর উনার সর্বাপেক্ষা বেশি মনোযোগ দিয়ে শিক্ষাগুলোকে অতুলনীয়ভাবে তুলে এনেছেন রাসুলের জীবনীর মধ্য দিয়ে।  

 ড. তারিক রামাদান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক ইসলামী স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও প্রফেসর। ইসলাম ও নিৎসে (ফিলোসফি) – দুই দিকেই পিএইচডি রয়েছে। বিশ্বের ১০০ জন বিজ্ঞানী ও চিন্তাবীদের একজন। ফ্রান্সের নিকোলাস সার্কোজী প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার সাথে ডিবেট করেছেন – সে দিক থেকে বুঝতেই পারছেন তিনি কতটা উচূ লেভেলের লোক হলে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাথে ডিবেট করে। সত্যের প্রতি অকোতোভয় থাকার কারণে বুশের ইরাক যুদ্ধের সমালোচনা করার জন্য তাকে অক্সফোর্ড থেকে কয়েকবছর দূরে থাকতে হয়। তাঁর ফিকহুস সিরাহটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্বিক ভ্রমণের চূড়ান্ত উদাহরণ এবং একারণেই মুসলিম-ননমুসলিম নির্বিশেষে সবার কাছে এটি সারা ফেলে দেয়।  

 শাইখ ড. মোস্তফা হুসনি আস-সিবাঈ (রাহিমাহুল্লাহ)। রামাদান আল-বুতীর মত ইনিও সিরিয়ার প্রফেসর ছিলেন। উনার সুন্নাহর উপর পিএইচডি (কালামুল্লাহতে পাওয়া যায়) তো সারা বিশ্বেই রেফারেন্স হিসেবে আনেন। উনার ফিকহুস সিরাহ থেকে দাঈ ও সংস্কারকদের জন্য অতুলনীয়ভাবে রাসূলের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকে তুলে এনেছেন।   

বর্তমানে আরব বিশ্বের প্রথম শ্রেষ্ট বক্তা হিসেবে রয়েছেন ড. আমর খালেদ (দ্বিতীয় ড. তারেক আল-সুয়াইদান – Dr. Tareq Al-Suwaidan) । তিনি মসজিদ উন-নববীর পাশেই দীর্ঘ একমাস রাসূলের জীবনীর উপর লেকচার দিয়েছেন এবং তাঁর জীবনী থেকে এত সুনিপুনভাবে শিক্ষাগুলোকে এনে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন বর্তমানের আলোকে, ভাবতেই অবাক লাগে আমাদের মাঝে রকম গভীর পান্ডিত্বসম্পন্ন লোক রয়েছেন!!  

পাকিস্তানের নঈম সিদ্দকী (রাহিমাহুল্লাহ) সিরাহটিও মানবতা, রাষ্ট্রনায়ক ও ডিফেন্ডের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হিসেবে থাকবে।  

 বর্তমানে মুসলিম দার্শনিকদের মাঝে একজন বেঁচে আছে যিনি সারা পৃথিবীতে গ্রহণীয় এবং পশ্চিমাবিশ্বে ইসলামিক মিউজিয়ামসহ অনেক কাজ করে গেছেন মাওলানা রুমি, সুফি ট্রেডিশন, সাইন্স, আর্ট, ইন্টারফেইথ ডায়ালগ, ফিলোসফি ইত্যাদি নিয়ে। তিনি ড. সাইয়্যেদ হুসেইন নাসর। যিনি বার্ট্রান্ড রাসেলকে ইরানে নিয়ে গিয়েছিলেন ফিলোসফির উপর কথা বলতে। তিনি রাসূলেকে একজন মানুষ হিসেবে ইসলামের অসাধারণভাবে পরিচিতি তুলে ধরেছেন।

এভাবে লেখতে গেলে অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে…তাই এখানেই থেমে যেতে হলো। উনাদের অনেককেই চেনে আবার অনেককে হয়তো চেনেন না। যাদের না চেনেন উনাদে নামগুলোকে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন, সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন তাদের চমৎকার পান্ডিত্বময় জীবনের ইতিহাস।

  1. Abdul Nasir Jangda – Getting to Know the Prophet | Halal Tube
2. Honoring Prophet Muhammad (PBUH) – Nouman Ali Khan
3. Suhaib Webb – Synchronized Seerah

ফিকহুস সিরাহ ও সিরাহর বইসমূহ


1. Fiqh us-Seerah – Sheikh Muhammad al-Ghazali
2. In the Footsteps of the Prophet – Dr. Tariq Ramadan
  1. The Jurisprudence of the Prophetic Biography & A Brief History of Rightly Guided Caliphs – Dr. Muhammad Said Ramadan Al-Buti
4. The Life Of Prophet Muhammad: Highlights and Lessons – Dr. Mustafa As Sibaa’ie
5. ‘মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ সা. – নঈম সিদ্দিকী
     http://tinyurl.com/nklz2ja (English)
  1. The Messenger of God Muhammad – M. Fethullah Gulen
  1. Wisdom of Holy Prophet – Muhammad Zafrullah Khan
  1. সিরাতে সারওয়ারে আলম – মাওলানা আবুল আলা মওদুদী(র)
সীরাতে সরওয়ারে আলম – ১ম খণ্ড
সীরাতে সরওয়ারে আলম – ২য় খন্ড
সীরাতে সরওয়ারে আলম – ৩য় ও ৪র্থ খন্ড
সীরাতে সরওয়ারে আলম – ৫ম খন্ড
  1. Muhammad: Man of God – Seyyed Hossein Nasr
  1. Misquoting Muhammad: The Challenges and Choices of Interpreting the Prophet’s Legacy by Dr. Jonathan A C Brown
  1. Sirat Al-Nabi (PBUH) and the Orientalists (Vol-1) – Muhammad Mohar Ali
2nd Part –  http://tinyurl.com/pvcnmsy
12. Muhammad (pbuh) the Natural Successor to Christ (pbuh) by Ahmed Deedat
  1. মুহাম্মাদ(সা), ঈসা(আ)এর উত্তরসূরী এবং বাইবেলে মুহাম্মাদ (সা)- শেখ আহমাদ দীদাত
  1. The Characteristics of Prophet Muhammed (pbuh) – Imam Abi Iassa Muhammed At Tirmidhi
  1. Muhammad A Biography of The Prophet by Karen Armstrong
  1. MUHAMMAD – his life based on the earliest sources by Marin Lings
  1. Noble Life of The Prophet (Vol-1) – Dr. Ali Muhammad As-Sallaabee
  1. নাবি-এ রহমত (সিরাতুন নাবাবীয়া)– সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী (রাহিমাহুল্লাহ)
  1. Muhammad Man and Prophet: A Complete Study of the Life of the Prophet of Islam– Adil Salahi
20.  On the Path to the Beloved 5 DVD Set : English Series by Dr. Amr Khaled
  1. সিরাতে ইবনে হিশাম
  1. আর রাহিকুল মাখতুম – আল্লামা সফিউর রহমান মোবাকরপুরী (রাহিমাহুল্লাহ)
23. Muhammad : Critical Lives Series (Yahiya J. Emerick)
  1. Introducing Muhammad by Ziauddin Sardar  (Author), Zafar Abbas Malik (Contributor)
  1. Al-Sira al Nabawiyya by Imam IBN KATHIR (Rahimahullah)
  1. THE LIFE AND WORK OF THE PROPHET OF ISLAM,. Dr. M Hamidullah
  1. মোস্তফা চরিত – মোহাম্মদ আকরম খাঁ
  1. Zad al Maad –Imam Ibnul Qayyim (Rahimahullah)
  1. বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা

ফিকহুস সিরাহ লেকচার (Extensive)

  1. The Life of prophet Muhammad (PBUH) English subtitled By Dr. Amr Khaled
  1. Seerah – Life of the Prophet By Shaykh Abdun Nasir Jangda
  1. Seerah of Prophet Muhammed (pbuh) by Shaykh Dr. Yasir Qadhi
  1. The Life of the Prophet Muhammad- Imam Anwar Al-Awlaki
5. Honoring the Messenger – Ustadh Nouman Ali Khan (Themes from the           Qur’an, Bayyinah.tv)
6. Life of Prophet Muhammad by Mufti Ismail Ibn Musa Menk
7. On the Path to the Beloved 5 DVD Set : English Series (Amr Khaled)
9.  নবীজির (সা) জীবন [Life of Muhammad SAW by Banda Reza]
   http://tinyurl.com/ojxt5v5
10. Fiqh Us Seerah By Abdul Hakim Quick

অন্যান্ন কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয়!!


  1. Yasir Qadhi – A Mercy to Mankind
  1. Defending the Prophet Against Orientalist Critique – Pt. 1 of 2 – Yasir Qadhi
  1. Defending the Prophet Against Orientalist Critique – Pt. 2 of 2 – Yaser Birjas
  1. Our reaction Beware to insults To Prophet Love Nouman Ali Khan
  1. “In The Footsteps of the Prophet; How Muslims should Contribute to the World” – Prof. Dr. Tariq Ramadan
  1. Ahmad Deedat – Muhammad the Greatest
  1. Workshop: Personal Life of the Prophet (S) pt. 1 – AbdulNasir Jangda
  1. Can I ever be like the prophet? by Sh. Abdul Nasir Jangda
9 .   Jonathan Brown – Abiding Stereotypes About the Prophet Muhammad in the Medieval and Modern West
10.  Dr. Jonathan AC Brown – Book: “Misquoting Muhammad” | Princeton University
11. রাসুল (সাঃ) এর জীবনী – আল্লামা দেলোয়ার হুসাইন সাঈদী

Documentary:


1. The Life of Prophet Mohammed (Peace Be Upon Him)
  1. [TRAILER] Muhammad in Mecca: Transformation through Tribulation
& [TRAILER] Muhammad’s Migration – Hope after Hardship
– 25 Speakers: Nouman A. Khan, Yasmin Mogahed, Amr Khaled, Habib Ali al-Jifri
3. History Channel – Muhammad The Prophet

4. BBC DOCUMENTARY on The life of The last Prophet Muhammad pbuh

5. The biography of Prophet Muhammed part 1 ( English Subtitled)

Movie:


  1. The messege

2. ৪ হাজার ২শ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত: ‘মুহাম্মদ’ – ইরানের বিখ্যাত চলচিত্রকার মাজিদ মাজিদী পরিচালিত। ডলার হিসেবে সেটি প্রায় ৫৫ কোটি ডলার। আগামী ২৬শে আগস্ট নবীবংশের অষ্টম পুরুষ ইমাম রেজা (আ.)’এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইরানে এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে। ১৭১ মিনিটের এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণে ৫ বছর সময় লেগেছে। আর এ ছবিতে সংগীত পরিচালক হিসেবে থাকছেন ভারতীয় সুরকার এ আর রহমান।
                   https://www.youtube.com/watch?v=BOVBCjZZkEo

রাসূল  এর উপর কয়েকটা ওয়েবসাইট

  


আমরা মুসলিমরা আজকে প্রচন্ড সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই সময়ে সিরাহ অধ্যয়নের জন্য আমাদের বিশেষ আগ্রহ থাকা দরকার। মুসলিমরা আজকে সমস্যার সমাধানের পথে ফেরার উপলব্ধিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে যখন তাদের চোখের সম্মুখে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ট জেনারেশনের আদর্শ নমুনা রয়েছে, উসওয়াতুন হাসানাহ।

শেষ করবো একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে। নুমান আলী খান এটি বর্ণনা করেছিলেন।

একজন মুসলিম ব্যক্তি যিনি বিশ্ববিদ্যায়লয়ে যাওয়ার পর ইসলামের প্র্যাক্টিস হারিয়ে ফেলে। ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়।

তিনি একজন খৃষ্টান মেয়েকে বিয়ে করেন। যেহেতু মুসলিম ছেলেটি তখনও ধর্ম পালন করতো না, ধর্মের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছিল, সেজন্য ভিন্নধর্মী হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিয়ে এবং জীবন-যাপনে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। হঠাৎ করে কোনো এক ঘটনার কারণে ছেলেটি আবার ধর্মের দিকে আকর্ষণবোধ করতে থাকে, তিনি আবার ইসলাম পালন করতে শুরু করেন। যেহেতু ছেলে-মেয়ে দুজনই দুজনকে প্রচন্ড ভালোবাসতো এবং বিয়ে করার সময় মুসলিম ছেলেটি ইসলামও ঠিকমত পালন করতো না, সেজন্য দাম্পত্য জীবনে কোনো সমস্যাও হয়নি তখন।

তিনি যখন থেকে ইসলাম পালন করা শুরু করেন, তখন তার স্ত্রী ছেলেটির মাঝে ধীরে ধীর পরিবর্তন দেখতে পান। তাদের মাঝে কথাও হয় এ পরিবর্তনের রেশ ধরে। দুজন দুজনকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। কেউ চাচ্ছিল না সংসার ভেংগে যাক, কিন্তু ছেলেটি দেখলো মতপার্থক্য বা ডিবেট করলে সংসার টিকবে না, মেয়েটিও থাকতে চাইবে না।

ছেলেটি একজন ভালো স্কলারের কাছে গেলো। তাঁর কাছে সব খুলে বলল, পরামর্শ চাইলো। স্কলারটি অনেক দূরদর্শী ছিলেন। তিনি সেই মুসলিম ছেলেটিকে কিছু উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে ইসলাম নিয়ে কোনো কথা বলবেন না, ঝগড়া বা কোনো ডিবেট করবেন না, তিনি করতে চাইলেও আপনি করবেন না, সে টপিকে কথা বাড়াবেন না। আপনি আপনার স্ত্রীর প্রতি কেবল একটি কাজ করবেন…রাসূল  কেমন স্বামী ছিলেন, সেগুলোই আপনার স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব, ভালোবাসা, আনন্দ ইত্যাদি করবেন। অর্থাৎ স্বামী হিসেবে আপনার স্ত্রীর প্রতি ঠিক সেরুপ-ই করার চেষ্টা করবেন যেরুপ রাসূল  তাঁর স্ত্রীদের প্রতি করতেন।

রাসূল ﷺ কেমন স্বামী ছিলেন তার ওপর একটি বই কিনলেন, পড়লেন, সেগুলো তার স্ত্রীর জন্য করতে থাকলেন। এক বছর গেলো, দুই বছর গেলো, তিন বছর গেলো। এর মাঝে মুসলিম ছেলেটি কেবল একটি কাজ-ই করেছে, সেটা হলো রাসূল  ﷺ  তাঁর স্ত্রীদের প্রতি যেরুপ ছিল, ঠিক সেরুপ করার ক্রমাগত করতে চেষ্টা করেছে। এর মাঝে ছেলেটি কিন্তু বাড়িতেও ইসলাম পালন করা শুরু করেছে।

তিন বছর পর, ছেলেটি একদিন সালাত আদায় করতেছিল বাড়িতে। হঠাৎ করে তিনি দেখতে পেলেন তার স্ত্রী ধীরে ধীরে তার ডানপাশে এসে সালাতে দাঁড়িয়ে গেছে!! তিনি সালাতের ভেতরেই অবাক!! অথচ এক সময় তার স্ত্রী-ই তাঁর ইসলাম পালনে বিরোধিতা করতো।

সালাত শেষ, তিনি তাঁর স্ত্রীকে কাছে বিষয়টি জানতে চাইলেন। তার স্ত্রী বললেনঃ
একজন ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর জন্য এত ভালোবাসা দিতে পারে, স্ত্রীর প্রতি এতো দায়িত্বশীল হতে পারে, স্ত্রীর জন্য এতো উদার মনে অধিকারী হতে পারে, স্ত্রীর জন্য এতো আনন্দের খোরাক হতে পারে, স্ত্রীর সকল সমস্যার প্রতি এতো গভীর দৃষ্টি রাখতে পারে, স্ত্রীকে এতো গভীরভাবে নিজের ভালোবাসার মাঝে আগলে রাখতে পারে – এতোটা ভালো মানুষ কোনো ভুল ধর্মের লোক হতে পারে না – This religion can’t be without truth. তাই আমি আজ থেকে এই সত্য ধর্মের অনুসারী হয়ে গেলাম।      

কেন আমি এই ঘটনাটা বর্ণনা করলাম? কারণ একটি—রাসূলের জীবনী থেকে যেকেউ যেই অংশ-ই গভীরভাবে জেনে প্রয়োগ করবেন, সে সেখানে সফলতা দেখতে পাবেন।

রাসূলের চাইতে একজন শ্রেষ্ট দাঈ এই পৃথিবীতে আর কেউ আসেনি, আসবেও না। রাসূলের চাইতে শ্রেষ্ট সমাজ সংস্কারক কেউ আসেনি, আর আসবেও না। রাসূলের চাইতে শ্রেষ্ট স্বামী কেউ হয়নি, কেউ হবেও না। রাসূলের চাইতে শ্রেষ্ট সাংগঠনিক কেউ আসেনি, কেউ আসবেও না। রাসূলের মত মুজাহিদ কেউ আসেই নি, কেউ আসবেও না। রাসূলের মত রাষ্ট্রনায়ক কেউ আসেনি, কেউ আসবেও না। রাসূলের মত প্রিয় পাত্র কেউ আসেনি, কেউ আসবেও না। রাসূলের মত রাহমাতের অধিকারী কেউ আসেনি, কেউ আসবেও না।

এভাবে পৃথিবীর যে কেউ সকল ভালো গুণের সর্বোচ্চ আদর্শের বাস্তবিক নমুনা রাসূল থেকে তার জীবনের জন্য সর্বোচ্চ আদর্শ নিতে পারে, সেই আদর্শে সর্বোচ্চ সফল হতে পারে। এর শর্ত রাসূলের জীবনী গভীরভাবে অধ্যয়ন করা, যাকে আল্লাহ বাধ্যতামূলক জানা ও অনুসরণ করা ফরজ করে দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সবার জন্য ‘উসওয়াতুন হাসানা’ বলে।

তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ – যারা কামনা করে আল্লাহ (এর সাক্ষাৎ) ও আখিরাতকে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে (কুরআন ৩৩:২১)

—————————————————————————————————---------------------------------------------------
  যেকোনো পরামর্শঃ