Tuesday, February 3, 2015

মুশরিক ও মুর্তিপুজারীদের প্রতি একটি মশার চ্যালেঞ্জ...পারবে কি খন্ডাতে কস্মিনকালেও?


বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম


একটি মশা...হ্যা, এই একটি মশা মুর্তিপুজারীদের চ্যালেঞ্জ করে... চোখের সামনে দেখিয়ে দেয় একজন মুশরিক ও মুর্তিপুজারীর বিশ্বাসের চাইতে এই সামান্য মশার শক্তি কত বেশি, কত যুক্তিবাদী।

শত শত বছর ধরে এই মশার মত এত ছোট প্রাণী পৃথিবীর সকল মুশরিক ও মুর্তিপুজারীদের চ্যালেঞ্জ করে আসতেছে...অথচ জানেন কি? এখন পর্যন্ত একজন মুশরিক বা মুর্তিপুজারী বৌদ্ধ, হিন্দু, খৃষ্টান বা অন্যান্নরা এই চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়ায় নি...অথচ তারা একজন বুদ্ধিমান মানুষ মনে করে, তারা নিজেদেরকে উন্নত মানুষ মনে করে, তারা এই বৈজ্ঞানিক যুগের আধুনিক মানুষ মনে করে।

এই পৃথিবীর যেখানেই মুর্তি রয়েছে, কোন পাহারের পাদদেশ বা পাহারের উর্ধপানে, বা রয়েছে প্রত্যেক এলাকায়, এগুলো তাদের গডের স্থানে রয়েছে। সেই কারণে এগুলো তাদের পূর্ণ সম্মানের সাথে থাকে, তাদের দৃষ্টিতে এরা অতিপ্রাকৃত, সৃষ্টিকর্তা এবং তাদেরকে দেখাশুনা করে, লালন-পালন করে। এসস্ত সম্মানের কারণে এসব মুর্তিগুলোকে প্রত্যেকটাকে উন্নত ধরণের জিনিস খেতে দেওয়া হয়।

এগুলোর সম্মানের জন্য দেওয়া হয় গডের সামনে এবং এ সম্মানিত ব্যক্তির সামনে নিশ্চয় উন্নত ধরণের জিনিসই শ্রদ্ধা হিসেবে দেওয়া হয়। এ সম্মানের বস্তু গডের জন্য যার সাথে অন্য কারো কোন তুলনা চলে না। কারণ গড-মুর্তি হল সম্মান, শক্তির আধার ও সকল বস্তুর উর্ধে। তাই এইসব শ্রদ্ধামিশ্রিত উন্নত খাবার একজন মানুষ নিতে পারে না, নেওয়াটা পাপ, এ পাপের শাস্তি ভয়াভহ- কারণ এটা চরম গর্হিত কাজ, গডের খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার কাজ্‌-অবশ্যই বড় ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

কিন্তু যে কারণে একজন মানূষকে মারা হচ্ছে্‌, শাস্তির মুখোমুখি করা হচ্ছে, সেই একই শাস্তির কাজ করে যাচ্ছে একটী মশা, তাও আবার প্রতিনিয়ত অর্থাৎ একটি মশা নাকের ডগায় এই মুর্তির(গড) সামনে থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছে অথচ এর শাস্তি হচ্ছে না। একটু চিন্তা করুণ তো...একটি মশা, সৃষ্টীকর্তা, লালন-পালনকর্তা, গড একজন শক্তিশালী অসীম সত্ত্বার সামনে থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছে, যেই খাবারগুলো একমাত্র গডের জন্য উতসর্গকৃত, যা উন্নত ধরণের খাবার , এগুলো মুর্তির সামনে থেকেই একটি মশা খাচ্ছে এবং এটি কি মানুষটির চাইতেও অধিক গর্হিত কাজ হচ্ছে না?
এই মশা যদি এই মুর্তির সৃষ্টি হয় এবং মুর্তিটি যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তবে নিশ্চয় মশার উচিৎ মুর্তিকে সম্মান করা, মুর্তির ধর্মকে মেনে চলা অথচ এই মুর্তির সামনে একজন মানুষ প্রার্থনা করছে এবং এর সামনে থেকেই খাবার হতে একটি অতি দুর্বল ছোট মশা মুর্তির খাবার নিয়ে খাচ্ছে অথচ মুর্তির কিছুই করার ক্ষমতা নেই। একজন প্রার্থনাকারী/মুর্তিপুজকদের সামনেই একটি মশা দেখিয়ে দিচ্ছে এই মুর্তির প্রতি প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসের ভঙ্গুরতা।


এই মশার এমন কর্ম তো একজন মানুষের নেওয়া জিনিস থেকেও বেশি মন্দ কর্ম তাই না?

কেন বেশি গর্হিৎ কাজ হবে মানুষের চাইতে?


একটি মশা কত জায়গায় গমন করে-

দুর্গন্ধযুক্ত টয়লেটে,

রাস্তার পাশে পচা ড্রেনে,

মৃত প্রাণীর দেহে,

পচা পানির কোন ভাংগা বোতলে, বা আরো নুংরা জায়গায়,

মানুষের শরীরের পচা-পুজে ভরা অঙ্গে,


এগুলোর আষ্টে নিয়েই একটি মশা যাচ্ছে গডের খাদ্যে মুখ দিতে, পা দিতে, খাদ্য তুলে আনছে অথচ যেই কারণ একজন শক্তিশালী মানুষকে প্রচন্ড শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছে সেই একই কাজ আরো নুংরাভাবে, এমনকি জঘন্যভাবে করছে একটি মশা অথচ কেউ কিছুই বলছে না...কেন? কেন বলছেনা জানেন?

আমরা নিশ্চয় জানি এই পৃথিবীতে মশা অন্যতম দূর্বল সৃষ্টি যা হাতের একটি পিষ্টতেই পিশে ফেলতে পারেন আপনি, মনে হবে যেন এখানে কিছুই ছিল না। এতই দূর্বল ও সামান্য সৃষ্ট এই মশা। অথচ এই দূর্বল সৃষ্টির সামনে কে অসহায়? একজন গড? একটী মুর্তি?...এই কি গডের শক্তি যে নিজেই নিজের খাদ্যের হেফাজত করতে পারে না পৃথিবীর অত্যন্ত দুর্বল সৃষ্টি থেকে...অথচ এই মুর্তিগুলোই নাকি সৃষ্টিকর্তা-গড!।

তাহলে এই দুর্বল সৃষ্টি নিয়েই একটু বলি.....



একটি মশার সৃষ্টি? পারবে কি?


ভারতের কথাই ধরি...

তাদের রয়েছে পারমানবিক বিজ্ঞানী,

সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানী,

টাটা উৎপাদন করার মত কারখানা,

রয়েছে ‘র’ গোয়েন্দা সংস্থা,

রয়েছে বিখ্যাত অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্ব,

রয়েছে অনেক বাইক কারখানা,

রয়েছে পলিসি মেকার,

রয়েছে অনেক এমন প্রতিষ্ঠান যা তাদেরকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

এদের মাঝে অনেকেই বা বেশিরভাগ ই চরম উগ্রবাদী হিন্দু, রয়েছে ধর্মপালনে নিষ্ঠাবান হিন্দু। কিন্তু এরা কি পারে না তাদের গডের সম্মানকে ধরে রাখতে? নাকি তাদের কাছেই তাদের গডের মূল্য নেই?

একটি মানুষ যখন মুর্তির খাবার খেতে আসে তাঁকে চরা মূল্য দিতে হয়, হতে হয় চরম অত্যাচারের শিকার, তাকে বইতে হয় অমানষিক নির্যাতন। কিন্তু এই একি কাজ তাদের সামনে একটি সামান্য অথচ অতি দুর্বল সৃষ্টি মশা দুর্গন্ধযুক টয়লেট থেকে এসে মুর্তির সামনে সম্মানিত শ্রদ্ধামিশ্রিত খাবারের উপরে বসে সেই খাবার খাচ্ছে, শত শত লোকের সামনে থেকে এই খাবারে উড়ে বেড়াচ্ছে, এই খাবারে গন্ধযুক্ত পা রাখছে !! অথচ মুর্তিগুলোর কিচ্ছু করার নেই??? এত নুংরা অপমানের প্রতি কিছুই করার নেই??

এও কি সম্ভব?... এই ছোট্ট মশা, এত ছোট্ট, হা এতই ছোট যে আমরা খালি চোখে এর অনেক কিছুই দেখতে পাই না, এতই ছোট যে এর কয়টা চোখ আছে দেখতে পারি না, এতই ছোট যে এটা নিমিশেই উড়াল দিয়ে চলে যায় ভালো করে দেখার আগেই, এতই ছোট যে হাত দিয়ে মারার পর মাটিতে পড়ে গেলে মাটির তুলনায় বুঝতেই পারা যায় না এটির অস্তিত্ব।



এই ছোট্ট একটি মশাই মুশরিক-মুর্তিপুজারীদের হাজার বছর ধরে চ্যালেঞ্জ করতেছে !!!


কিন্তু মুর্তিপুজারীরা? ...হাজার বছরের চ্যালেঞ্জের সামনে একজন মুর্তিপুজারী ব্যর্থ, একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান ব্যর্থ, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সব বৈজ্ঞানিকরাও ব্যর্থ।

এই ছোট্ট মশা কি শিখাচ্ছে জানেন?


তোমরা পৃথিবীর বড় বড় বৈজ্ঞানিক হতে পারো, তোমরা হতে পারো বড় বড় কারখানার মালিক, হতে পারো বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মনে করতে পারো আধুনিক বিশ্বের সর্বোচ্চ বুদ্ধিমানলোক কিন্তু আমার মত এই ছোট্ট মশার কাছে তোমাদের গডের খাবারে আমি টয়লেটযুক্ত পা দেই, ...তোমরা যাকে সম্মানিত মনে করো, তোমরা যাকে গড মনে করো, তোমরা যাকে সর্বোচ্চ আসনে বসিয়েছে- সে আমার মত ছোট্ট দুর্বল একটা মশাকে কিছুই করতে পারে না...তার খাবারে আমি টয়লেটের গন্ধ এটে দেই সে কিছুই করতে পারে না, তার সামনেই আমি থাকি এই নুংরা ময়লা দিয়ে কিন্তু সেই কিছুই করতে পারে না...সে নিজেও নিজের খাবারের হেফাজত করতে পারে না, সে এতই দূর্বলতর যে আমার মত একটি মশার চেয়েও অধিক দূর্বল ও শক্তিহীন, ক্ষমতাহীন, নির্জীব একটা বিকার মূল্যহীন।

তবুও তোমাদের মত বৈজ্ঞানিকরা এই শক্তিহীন বস্তুর সম্মান করো যে নিজেই নিজের সম্মান রক্ষা, করতে পারে না,তোমাদের মত জ্ঞানীরা এই মুর্তির কাছে মাথা নত করো যে নিজেই টয়লেটের দুর্গন্ধের খাবার নিয়ে কিছু করতে পারে না অথচ একজন মানুষ সেটা করলে চরম অত্যাচার করো।

একটি ছোট্ট মশা, এত ছোট মশা যা মুর্তিপুজারীদের প্রত্যহ দেখিয়ে দিচ্ছে তাদের বিশ্বাসের ভঙ্গুরতা, তাদের বিশ্বাসের গডের শক্তিহীনতা, সম্মানহীনতা- তবুও তাদের বিবেকে নাড়া দেয় না?


অথচ...

তারা...

যুক্তিবাদী?

আধুনিক?

উন্নত কলা-কৌশলের অধিকারী?

বিজ্ঞানমনস্ক?

অথচ একটি মশা তাদের সামনে শত শত বছর ধরে চ্যালেঞ্জ করে তাদের সেই বিশ্বাস ও বিশ্বাসী গডের চুড়ান্ত ভঙ্গুরতা দেখিয়ে দিচ্ছে...তাদের বিবেক কোথায়?

আসুন সর্বশেষ চ্যালেঞ্জের সেই আয়াতের দিকে গভীরভাবে একটু দৃষ্টি দেই...

সূরা হাজ্জের ৭৩ ও ৭৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

“হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো,অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন;

তোমরা যারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর,তারা সকলে একত্রিত হলেও কখনোই একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়,তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না,প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়,উভয়েই শক্তিহীন।” (২২:৭৩)

এখানে চ্যালেঞ্জের উপমাতে কী কী আছে ?


১। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো(মুর্তি বা অন্য কিছুর) পুজা করে

২। তারা সকলে মিলিত হয়েও(সমস্ত মুশরিক এক হয়েও, সমস্ত পৃথিবীর কয়েক কোটি মুশরিকরা একসাথে মিলিত হয়ে প্রজেক্ট নিয়েও যদি পারে...)

৩। একটি মাত্র মশা সৃষ্টি করতে পারবে না( পারলে শুধুমাত্র একটি দূর্বল সৃষ্টিকেই সৃষ্টি করে দেখাক না তারা সমস্ত বিশ্বের মুশরিকরা মিলে...)

৪। মশা কোন কিছু ছিনিয়ে নিলেও তা উদ্ধার করার ক্ষমতা নেই ( এই তুচ্ছ অতি দূর্বল মশাই যদি ছিনিয়ে নিলে এইসব মুর্তির কিছু করার ক্ষমতা না থাকে তবে এই পৃথিবীর সব জটিল জিনিসের পরিচালনা তো অসম্ভব)

৫। যারা প্রার্থনাকারী(মুর্তিপুজক ও মুশরিক) এবং যার কাছে প্রার্থনা করা হয়(মুর্তি) তারা উভয়েই দূর্বল( এই মশাই যদি এত দুর্বল হয় এবং এর সামনে মুর্তি কিছুই করতে পারেনা, তাহলে এই মুর্তি সে তো এই মশার চাইতেও দুর্বলতর...তাহলে এই মুর্তি অতি দুর্বলতর এবং এই দুর্বলতর মুর্তির কাছে যারা কিছু চায় তারাও অতি দুর্বলতর – অর্থাৎ মুর্তি এবং মুর্তিপুজক উভয়েই মশার চাইতেও দুর্বলতর )

আল্লাহ এভাবেই শিরকের স্থানেও তাওহীদের শিক্ষা দেন...যদি কোন মানুষ দয়াময় আল্লাহর রহমতের কাছে আসতে পারে, তাঁর রহমতের বিনীত ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতের পথে হয়ত কেউ আসবে শিক্ষা নিয়ে।

সৎ পথ পাওয়ার প্রথম শর্ত চিন্তা করা, আল্লাহ চিন্তা করার জন্য এইসব নিদর্শনের উপমা দেন যাতে আমরা এ সামান্য ছোট্ট জিনিস থেকেও শিক্ষা নেই।