Saturday, August 1, 2015

Rules or Essences? নিয়ম নাকি মর্মার্থ? – ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্য কোনটি?

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম


আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাহমাতাল্লিল আলামি মানবতার মুক্তির দূত আল্লাহর নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর। শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার, আহল ও সাহাবা ও সালফে-সালেহীনদের উপর। আল্লাহুম্মা আমীন।

বাংলাদেশে ইসলাম উপলব্ধির ক্ষেত্রে অনেক বড় কিছু সমস্যা দেখেছি এবং এখনও দেখছি- আলেম সমাজ থেকে শুরু করে আমরা যারা নতুন ইয়ং জেনারেশন তাদের মাঝেও এর ফল আমরা ফেইসবুক ও লেখালেখিতে প্রতিনিয়ত দেখছি তিক্ততার সাথে। এর মৌলিক গলদ কিন্ত ইসলাম উপলব্ধিতে; উপলব্ধি মানে আমাদের কাছে বই-পুস্তকে বা আলেমদের থেকে যা পেয়েছি সেটাই নয় বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা যেভাবে বোঝাতে চেয়েছেন কুরআনে এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহ দিয়ে যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন সেগুলোকে চাতুর্মুখিক, প্রাসঙ্গিক ও হিকমাহপূর্ণভাবে বোঝ।


যেকোনো কাজ করতে গেলে উদ্দেশ্য এবং এর পথ বা নিয়ম জানতে হয়। এদুটোর মাঝে পার্থক্য বাংলায় জানা থাকলেও ইসলামের ক্ষেত্রে কেন যেন পার্থক্য মানা তো হয়-ই না, বরং অনেক ক্ষেত্রে একটার ওপর বেশি জোড় দিতে গিয়ে দুইটাই হারায়ে ফেলি। ফলে আমরা আসলে আদতে দুইটার কোনোটাই যে বুঝি নাই, সেইটা প্রমাণিত হয় দৈনন্দিন জীবনাচরণে- ব্যক্তিগত বা অনলাইনে জীবনেএদিক বিবেচনা করেই মৌলিক গলদের জায়গায় কিছুটা হাত দিতে চেষ্টা করলাম। 


Rules বা নিয়ম-কানুন-ই কি উদ্দেশ্য নাকি নিয়ম-কানুন তৈরি করা হয় কোনো উদ্দেশ্যকে অর্জন করার জন্য? ইসলামে নিয়ম আগে নাকি উদ্দেশ্যই প্রধান এবং একে কেন্দ্র করেই সমস্ত রুলস-ফিকহ এসেছে? নিয়মের ভ্রান্তি ঘটলে উদ্দেশ্যের কি হবে? বা নিয়ম ঠিক থাকলেও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হলে – তখনও কি সেটা ইসলাম থাকবে? না থাকলে মৌলিক সমস্যা কোথায় এবং কেন?


নিয়ম নিজেই উদ্দেশ্য নয়, বরং এটি Process to Purpose বা উদ্দেশ্যকে পাওয়ার জন্য পথ।


আর তাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত অফিস করাটা উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হলো বেশি কাজ করা, বিক্রি বৃদ্ধি করা, লাভ পাওয়া। কিন্তু আপনি যদি এই সময়ের চাইতেও বেশি কাজ করেন কিন্তু কোম্পানী লাভবান হতে পারতেছে না, তাহলে নিশ্চিত থাকুন কোম্পানী বন্ধ হয়ে যাবে। লাভ-ই মূল, নিয়মটা মৌলিক নয়। নিয়ম পাল্টিয়েও যদি মূল জিনিস অর্জন হতে পারে তবে পূর্বের নিয়মের কোনো মূল্যই থাকে না।

green-islam

১৬ ঘন্টা কাজ করেও যদি কোম্পানী লাভবান হতে না পারে তবে কোম্পানী বন্ধ হবেই। আর ৬ ঘন্টা দক্ষতাপূর্ণ কাজ করেও যদি কোম্পানী লাভবান হয় তবে কোম্পানী চলবে। কারণ কোম্পানীর উদ্দেশ্য কতঘন্টা কাজ সেটা নয়, মূল উদ্দেশ্য লাভ করা।

তাহলে নিয়ম কেন?- উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এনালিসিস করেই নিয়ম করা হয় যাতে পূর্ণ উদ্দেশ্য ভালোভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সহজেই সাফল্য আসে। নিয়মের লক্ষ্যই থাকে উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করা। এবং এজন্য নিয়ম করা হয় ঐসব চিন্তা-চেতনা, অভিজ্ঞতা, এনালিসিস, প্রজেকশন এর আলোকে যাতে উদ্দেশ্য ভালোভাবেই অর্জন করা যায়।


–কিন্তু যত নিয়মই পালন করা হোক না কেন, উদ্দেশ্য যদি পূর্ণ না হয়…শত এনালিসিস, অভিজ্ঞতা, নিয়ম-শৃংখলা ব্যর্থ এবং বলা হয় এই ক্ষেত্রে নিয়মাবলী খাটে না; নিয়মে ভুল আছে।
কিন্তু ওহীর ক্ষেত্রে নিয়মে কি কোনো ভুল থাকতে পারে? – নাহ। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা সবই জানেন, আমরা যা জানি না তাও—অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত, আমাদের সাইকোলজি, মানুষের সমস্ত চিন্তা-দর্শন, দূর্বল-সবল দিক— সুতরাং কোথায় কোন মেকানিজম কাজ করবে, কোথায় করবে না সবই তাঁর আয়ত্বে তাই স্রষ্টার মেকানিজম সৃষ্টির জন্য নির্ভুল এবং এটি চিরন্তন-অসীম সময়ের জন্য প্রযোজ্য এবং এতে কোনো ব্যত্বয় ঘটবে না—নিয়ম ও উদ্দেশ্যের বিবেচনায়

এজন্য দুনিয়াবী নিয়ম-কানুন তৈরিতে ভুল-ক্রটি থাকতে পারে কিন্তু ওহীর দ্বারা যে নিয়ম-কানুন তৈরি হয় তাতে কোনো প্রকার ক্রুটি-বিচ্যুতি নেই, এমনকি সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু মানুষ যখন এই ওহীকে ব্যাখ্যা করে সেখানে ভুল থাকতেই পারে, কারণ মানুষ আল্লাহ নয় বা তাঁর ব্যাখ্যা ওহী নয়। এজন্য সমস্ত ইসলামী দল বা গ্রুপের মাঝে কিছু কিছু আমরা ভুল দেখতে পাই

ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্য আল্লাহর পথে নিয়ে যাওয়া, তাঁর সাথে সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলা, হেদায়েত পাওয়া। একারণে ইসলামে এসবের আলোচনাও বেশি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন মানুষকে বেশি করে সুসংবাদ দিতে, দ্বীনকে সহজ করতে। বিপরীতে মন্দ সংবাদ কম দিতে বলেছেন এবং দ্বীনকে মানুষের কাছে কঠিন করতে নিষেধ করেছেন। কারণ বিভিন্ন ব্যক্তির লেভেল আলাদা কিন্তু সুসংবাদ সবাই চায়, সবাই সহজ চায় এবং এভাবে আল্লাহর পথে সবার আসাও সহজ। কারণ আল্লাহর উদ্দেশ্য কাউকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া নয় বরং জান্নাতের পথে সবাইকে নিয়ে আসা। এজন্যই রাসূল সা কে ‘রাহমাতাল্লিল আলামীন’ বলে সর্বাজ্ঞে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘রাহমাতাল্লিল আলামীন’ নিয়মের মাঝে বাঁধা নয় বরং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এবং ‘উসওয়াতুন হাসানা’ আমদের এই দুটোর সমন্বয়ের মাধ্যমে ইসলামের নিয়ম ও উদ্দেশ্য কীভাবে একীভূত এবং চূড়ান্ত হেদায়েত ও প্রশান্তির পথ দেখিয়ে দেয়।


নিয়ম নয় বরং এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ইসলামী উসুল আল-ফিকহে একটি মূলনীতি রয়েছে – Blocking The Means For Blocking The Ways অর্থাৎ মন্দ উদ্দেশ্যের দিকে নিয়ে যাবে এরকম নিয়ম হারাম। আঙ্গুর বপন করা বা খাওয়া হারাম নয় কিন্তু হাদীসে আঙ্গুর চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে যদি এটি দিয়ে নেশা জাতীয় জিনিস তৈরি করা হয়। যেহেতু নেশা জাতীয় জিনিস স্বাভাবিক বুদ্ধির জন্য ক্ষতিকর এবং এ ক্ষতির সাথে অন্যান্য আর্থিক, সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষতিও নিহিত এবং হেদায়েত থেকে পথভ্রষ্টার চূড়ান্ত সম্ভাবনা রয়েছে- তাই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঐ নিয়ম বা পথকেও রোধ করার ব্যবস্থা ইসলাম দিয়ে দিয়েছে।
আমরা কি ইসলামের নামে এরকম মন্দ পথ দিয়ে ভালো করার চেষ্টা করি না? দাওয়াহ একটা ভালো উদাহরণ হতে পারে। কারণ আমরা কাউকে সকল ধরণের যুক্তি দিয়ে, কুরআন দিয়ে, বিজ্ঞান দিয়ে দাওয়াত দেই। শেষে না মানলে কি করি?—গরম মেজাজ ঢালি, উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে-তাই শুনাই, জাহান্নামে পাঠিয়ে দেই!! অথচ ভালো ব্যবহার করাটাই ইসলামের একটা উদ্দেশ্যই বটে এবং হেদায়েতের মালিক আমরা নয়; আল্লাহ—এটিও ভুলে যাই নিয়মের ছকে আটকে গিয়ে উদ্দেশ্যকে ভুলে গিয়ে।


অথচ ইসলামের নিয়মে যেমন ভুল নেই, তেমনি উদ্দেশ্যেও ভুল নেই—কারণ দুটোই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছেকিন্তু আমরা বেশিরভাগ-ই নিয়মের মাঝে বিশালাকারে আটকে পড়ি; যা ইসলামের উদ্দেশ্য নয় আর এভাবে ইসলামের আনাড়ি উপলব্ধির কারণে গভীর খাতে পড়ে যাই। এখান থেকেই মৌলিক গলদ এবং পথভ্রষ্টতার পুনরায় শুরু হয় মুসলিমদের-ই।

এখানে তিনটি সমন্বয়ের বিষয় খুব ভালোভাবে মনে রাখুন।      

১। আল্লাহর দেওয়া নিয়ম ও উদ্দেশ্য অবিচ্ছিন্ন।

২। ওহীর প্রত্যেকটা দিকেরই দুইটি অংশ – আল্লাহ এবং ব্যক্তিক সমন্বয়।

৩। ইসলামের সবগুলো দিকই দুইটি দিকের বিবেচনায় করা হয়েছে – আধ্যাত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমন্বয়।


১ নং এ- জাকাত, দান, সাদাকা, সুদবিহীন সমাজ এবং হালাল ব্যবসা —সবগুলোর সমন্বয় হলেই আল্লাহ দারিদ্রহীন যেই সমাজের কথা বলেছেন সেটা পাওয়া যাবে। আজকের অধিকাংশ পুজিতান্ত্রিক ব্যবসাগুলো হয়তো সুদের সাথে জড়িত, অথবা ব্যবসা করা হয় গরিবদের ওপর জুলুম করে এবং ব্যবসার জাকাত দেয় না—যার কারণে নিয়মের মাঝে সমস্যা রয়ে গেছে এবং এজন্য উদ্দেশ্যও সাধিত হয় না।


বিদ’আতকারীদেরকে হাওজে কাওসারের পানি পান করানো হবে না এবং তাদেরকে জাহান্নামে দেওয়া হবে। কেন? অথচ তাদের সালাতের কারণে তারা যে অযু করতো সেগুলোর কারণে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম) চিনতেও পারবে (অযুর অংশগুলোর নূর দেখে)। তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হলো তারা সুন্নাহ বা আল্লাহর দেওয়া নিয়ম না মেনে নিজেদের দল বা মতের মতো করে নিজেরাই নিয়ম তৈরি করে নিয়েছিল। যার ফলে একটি সুন্নাহর নিয়মের যে উদ্দেশ্য ছিল তাঁর আর পূরণ হয়নি। নিজেরাই যেহেতু আল্লাহর দেওয়া নিয়মের বিপরীতে নিয়ম তৈরি করে নিয়েছিল, অর্থাৎ ইবাদাহ তারাই তৈরি করে নিয়েছিল আর এদিক থেকে আল্লাহ হুকুমদাতা সেটাও তারা নিজেদের কাধে তুলে নিয়ে শিরকে লিপ্ত হলো – এভাবে নিয়মের ধ্বংসের কারণে উদ্দেশ্যও ধ্বংস হয় আর তারা পথভ্রষ্টতার চূড়ান্ত গন্তব্যও পেয়ে যায়।


২ নং এ – জাকাত দেওয়া আল্লাহর আদেশ আর এভাবে দারিদ্র বিমোচন হয়—আল্লাহর অন্য সৃষ্টিগুলো ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। এভাবে জাকাতদাতা তাঁর মাল-সম্পদকে পবিত্র করে, নিজেকে আল্লাহর আদেশের অধীনে নিয়ে যায়, নিজেকে পুতঃপবিত্র রাখে। এভাবে আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে সমন্বয় হয়।


কাউকে দাওয়াত দিলেন। মানলো না আর আপনি ইচ্ছামত যা খুশি তাই বললেন। এখানে যদিও আপনি ভাবছেন একজন ব্যক্তিকে ভালো কাজের দিকে আহবান করা সত্বেও সে আসলো না আর তাই ইচ্ছামত যা খুশি তাই বলতে পারেন। কিন্তু আল্লাহ আপনার এই ‘ইচ্ছামত যাচ্ছে-তাই’ বলার জন্য আপনাকে ধরবে। কারণ সেও ব্যক্তিও আল্লাহর সৃষ্টি যেরুপ আপনিও আল্লাহর বান্দা। সুতরাং আপনিও আল্লাহর বান্দা আর সেও আল্লাহর বান্দা। আল্লাহর বান্দাকে আপনি তাঁর হেদায়েত না পাওয়ার কারণে যা খুশি তাই বলতে পারেন না। এভাবে বান্দার সাথে বান্দার সম্পর্কও আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত। কারণ সবাই আল্লাহর সৃষ্টি।
৩ নং এ – আপনার নিজের চোখের সামনে অনেককে পথভ্রষ্ট হতে দেখেছেন। দুইজনের পথভ্রষ্টতার কারণ দুই লেভেলের।


একজন হাফেযকে দেখেছেন পূর্ণ কুরআন তাঁর ভেতরে আছে, ইসলাম সম্পর্কে জানেও ভালো। তা সত্বেও ভার্সিটিতে মেয়েদের দিকে না তাকায়ে থাকতে পারে না, এসাইনমেন্ট গ্রুপে মেয়েদের সাথেই যায়, রাতে কথাও বলে মেয়েদের সাথে – এভাবে যেই ছেলেই ইন্টার বা আলিমে থাকতে ভালো ছিল—হঠাৎ করে ভার্সিটিতে এসে পরিবর্তন এসে গেলো এবং মহা পরিবর্তন- একেবারে পথভ্রষ্টতা। এর অভাব ছিল আধ্যাত্বিক। কুরআন ও ইসলামী জ্ঞান ভেতরে ছিল কিন্তু কুরআনের উদ্দেশ্য আল্লাহকে স্মরণ(কুরআনের নাম), সালাতের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহকে স্মরণ(আকিমিস সালাতা লিজ-জিকর) এভাবে হেদায়েতের ওপর অটল থাকা। কিন্তু যেহেতু কুরআনের অর্থ জানতো না আর সে কি পড়তেছে তাও জানতো না- অথচ উপলব্ধির বা স্মরণের জন্য বোঝ দরকার- যা তাঁর ছিল না। এভাবে আধ্যাত্বিকতা না থাকার কারণে পথভ্রষ্টতা আসলো।


আরেকজন ব্যক্তিকে দেখবেন সে ইসলাম সম্পর্কে তেমন না জানলেও সে অভিভূত ইসলামের সুন্দর ব্যবহার, ভাতৃত্বের বন্ধন, একে অন্যের খোঁজ নেওয়া, অন্যের বিপদে সহায়তা করা, সহানুভূতি দেখানেও ইত্যাদি কারণে। গ্রামে থাকতে বা প্রাক্তন স্কুল-মাদ্রাসায় থাকতে হয়তো তাহাজ্জুদ সালাতও আদায় করতো, লম্বা দাড়ি ছিল, ভালো ছেলেদের সাথে উঠাবসা ছিল।


ছেলে পড়তে গেলো শহরে। হঠাত করে সে দেখতে পেলো কিছু ব্যক্তি নিতসে, ফুকো, রাসেল, মার্ক্স, হাক্সলি, ডারউইন, স্টিফেন হকিংস ইত্যাদির ছোয়ায় ইসলামের গোঁড়াটাকেই উপড়ে ফেলে দিলো। ছেলে তো হতভম্ব!! ইসলামের মধ্যে এতো গুলমাল! কমিউনিজম কত ভালো—সাম্যের কথা বলে, ফ্রিডমের কথা বলে, সবার অধিকারের কথা বলে। এই ছেলেও পথভ্রষ্টতার শিখরে চলে গেলো। এখন সে ইসলাম দেখা তো দূরের কথা নাম শুনাতেও চরম এলার্জি আছে তাঁর। এর আধ্যাত্বিকতার অভাব ছিল না, এর ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের চরম অভাব।
 
দুটোই পথভ্রষ্টতা কিন্তু দুই ধরণের কারণ নিহিত।


আমাদেরকে বনী ইজরাঈলদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইসলাম আমাদের দেওয়া হলো কেন? কারণ তাদের খৃষ্টানরা ছিল অনেক আধ্যাত্বিক, ইবাদাতে তারা ছিল উচু শ্রেণির কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তায় তারা বন্ধ্যা ছিল। যার কারণে ধর্মকে জ্ঞানহীন বানিয়েছিল যেখানে বুদ্ধি, Intellect বলতে কিছু ছিল না। এটাই তাদের পথভ্রষ্টতার কারণ ছিল। তাদের ধর্মে অন্য কেউ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন করতে পারতো না। একারণে পুরোহিতরাই ইচ্ছামত স্বেচ্ছাচারিতা করে অর্থ আত্মস্বাদসহ সব ধরণের অন্যায় করত। এভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার অভাবে খৃষ্টানরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একারণ সূরা বাকারায় যেহেতু বেশিরভাগ অংশ খৃষ্টানদের এসব পথভ্রষ্টতার কথা এসেছে আর সেজন্য বিভিন্ন ধরণের চিন্তাশীলতার কথা এসেছে যে কেন তারা চিন্তা করে না, আকল খাটায় না, উপলব্ধি করে না।


বিপরীতে ইহুদিরা ছিল প্রচন্ড জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী আর এ কারণে তারা নিজেরাই নিজেদের বুদ্ধির জোড়ে মনে করতো যে তারা হেদায়েতের উপর আছে। অথচ হেদায়েত যে চাওয়ার জিনিস, আল্লাহর দয়া এটা, এই জিনিসটা তারা মানতো না। এ কারণে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একারণে সূরা আলে ইমরানে ইহুদিদের প্রসঙ্গ আসলে কীভাবে মুসলিমরা হেদায়েত পাবে সেই দিকগুলো বর্ণনা করা হয়েছে যে আল্লাহর কাছে যেতে হবে – আধ্যাত্বিক হতে হবে—এভাবেই হেদায়েত আসে।


সুতরাং যেই দুটি কারণে ইহুদি-খৃষ্টানরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল –ইহুদিরা আধ্যাত্বিকতার অভাবে আর খৃষ্টানরা বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের অভাবে…কিন্তু ইসলাম যেহেতু তাদের পথভ্রষ্টতার জন্যই আমাদের দেওয়া হয়েছে আর তাই আমরা হয়েছি ঐ দুটি দিকেরই অধিকারী মধ্যমপন্থী জাতি(সূরা বাকারাহ-১৪৩, সূরা আলে ইমরান-৭,৯ এবং ১৯১)


দুই জাতির দুই কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, পথভ্রষ্ট হয়েছিল। তাই আমাদেরকে ইসলাম দেওয়ার আগেই আমাদের হেদায়েতের যে দুয়া ছিল সূরা ফাতিহা – সেখানে আমরা এই দুই দল থেকেই মুক্তি চেয়েছিলাম এবং যারা নেয়ামত প্রাপ্ত (আধ্যাত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ধর্ম উপলব্ধি করতো, পালন করতো)। অর্থাৎ আমরা যেন দুই দলের কোনোটিতেই না পড়ে মধ্যমপন্থী হই। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করে আমাদের মধ্যমপন্থী বানালেন (সূরা বাকারাহ-১৪৩) আর আমাদের আধ্যাত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিকও শিখিয়ে দিলেন যা হেদায়েতের চূড়ান্ত পথ (সূরা আলে ইমরান-৭,৮,১৯১—জিকর-চাওয়া, দোয়া, সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা –আধ্যাত্বিক। আর চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা ইত্যাদি বুদ্ধিবৃত্তিক)


সুতরাং চূড়ান্ত ও শক্তিশালী হেদায়েতের দুটি নিয়ম – আধ্যাত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিকের সমন্বয় (নিয়ম) আর এর মাধ্যমে উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে (চূড়ান্ত হেদায়াত) যা ইহুদি-খৃষ্টানদের থেকে আমাদের দেওয়া হয়েছিল ঐ দুটি দিক পূর্ণ করতে না পারার কারণে।

সুতরাং নিয়ম এবং উদ্দেশ্য – দুটি থেকে যখন আল্লাহ ও ব্যক্তিক সমন্বয়ের সেতু বন্ধন, এবং আধ্যাত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমন্বয় বাদ দিবেন, তখন আমাদের জন্য ইসলাম দেওয়ার যে উদ্দেশ্য সেটা আর বাকী থাকে না।

সেকারণে কেবল হালাল-হারাম, হুদুদ, নিজের অধিকার আদায়ের জন্য স্বামী-স্ত্রীর দলীল পেশ করা…এগুলো কিছু নিয়ম-কানুনের সমষ্টি যেগুলোর সাথে যদি আল্লাহর উদ্দেশ্য – তাকওয়া, রাহমাহ, ইহসান, ইনসাফ-আদল ইত্যাদি সম্পৃক্ত না হয় তবে সেটাও বিকৃতি হয়ে যায় আর এটা হয়তো ইহুদিদের পথভ্রষ্টতার দিকে যাবে অথবা খৃষ্টানদের পথভ্রষ্টতার দিকে যাবে।


সমাজের যতগুলো অপরাধ ঘটে বা সমাজে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঘটে তার অন্যতম এবং বড় কারণ অর্থনৈতিক সংক্রান্ত। ড্রাগ আনা-নেওয়া করা হয় কাদের মাধ্যমে? – পথশিশু। পাচারের শিকার হয় কারা?—গরিব। পতিতালয়ে বিক্রি হয় কারা?—গরিব। পতিতালয়ে যায় কারা?—যারা টাকার কারণে বিবাহ করতে পারে না বা টাকার জন্য শহরে রিক্সা, সিএনজি, বাস-ট্রাক চালায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন জাকাত, দান, সাদাকার উদ্দেশ্য এসব সমাজে অস্থিতিশীল অবস্থার বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধান রয়েছে। অন্যদিকে একজন ব্যক্তি নিজের আধ্যাত্বিক উন্নতি করে নিজেকে পবিত্র করে, অন্যের প্রতি নিজের দায়িত্ব পূর্ণ করে এবং যাদেরকে এ টাকা-সম্পদ দেওয়া হয় তারাও শয়তানের পথ থেকে ফিরে আল্লাহর পথে আধ্যাত্বিকতায় চলতে শুরু করে সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে উঠে।


আপনি যদি হুদুদ বা ইসলামী শরীয়াত কায়েমের নিয়মগুলো কুরআন থেকে পড়েন সেখানে কখনই কেবল আইন (নিয়ম) পাবেন না বরং সেখানে একই সাথে আধ্যাত্বিক বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং ইসলামী আইন আধ্যাত্বিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তাই, ইসলামী আইনকে যখন আধ্যাত্বিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে নেবেন, তখন এখানকার অনেক কিছুই মিস হয়ে যাবে এমনকি আধ্যাত্বিকতা না থাকার কারণে একটি অংশ মিসিং হওয়ার কারণে হুদুদও কায়েম হবে না এর উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে!! এভাবে মৌলিকত্ব ও মৌলিক উদ্দেশ্যই হারিয়ে যাবে।


কুরআনে হালাল-হারামের আয়াত পাবেন মাত্র ৩০০ এর মত। আর বাকী সব???? কিন্তু আমরা গুরুত্ব দেই কোনগুলোর উপর? আমরা আল্লাহর চাইতে বেশি বুঝতে শুরু করেছি? আর বাকীগুলো কি? আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক উন্নয়ন, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পথভ্রষ্টতা থেকে হেদায়েত কীভাবে পাবে, সৃষ্টির উদ্দেশ্য, চারিপাশের প্রকৃতি ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা, নবী-রাসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য, তারা সমাজের কোন কোন চিন্তার গলদে হাত দিয়েছন এবং সৎ পথে ডেকেছেন কীভাবে আন্তরিকতা সহকারে, অন্তরের পবিত্রতা, চারিত্রিক বিশুদ্ধতা-আখলাক, ঈমান আনয়ন, কুফুর ও নিফাক- এগুলো থেকে বাচার ঔষধ, মানুষের সাথে সদাচারণ, সৎ কর্মের ফিরিস্থি, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য, তাওহীদের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা, মুসলিমদের বন্ধন, জান্নাতের অসীম নেয়ামত, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তির জন্য সতর্কবার্তা, নবীদের কাহিনী থেকে বিভিন্ন শিক্ষা ও দৃঢ় পথে থাকার দৃষ্টান্ত ইত্যাদি।


সুতরাং আমরা যদি আল্লাহর বর্ণনা মত মৌলিক বিষয়াবলীতে জোড় না দেই, কেবল নিয়ম নিয়ে পড়ে থাকি, তবে উদ্দেশ্যের জন্য যা দরকার সেগুলোও অবশ্যই ব্যহত হবে আর আমরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবো। 


এখানেই ইসলামী শরীয়াহর মৌলিক দিক – আল্লাহ দেওয়া সকল নিয়ম ও উদ্দেশ্য অবিচ্ছিন্ন। সঠিকভাবে নিয়ম না মানা মানে, উদ্দেশ্য ব্যহত হওয়া। 


এখানেই বুঝতে পারবেন, ইসলামী শরীয়াহর যেসকল উদ্দেশ্য রয়েছে, সেগুলো আল্লাহ প্রদত্ব নিয়মের মাধ্যমে যদি ঠিকমত না আসে, তবে এখানে নিয়মের কোনো ভুল নেই, এখানে অবশ্যই আমাদের উপলব্ধির ভুল, নিয়মকে সঠিকভাবে জানার ভুল এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করার ভুল—নিয়ম বা এ নিয়মের মাধ্যমে যে উদ্দেশ্য আসার কথা সেগুলোর কোনটিতেই কোনো ভুল নেই, থাকতে পারে না—কারণ যার মাধ্যমে নিয়ম ও উদ্দেশ্য এসেছে—তিনি সবই জানেন, সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান, তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বদৃষ্টা, সর্বজ্ঞানী, রাহমান, রাহীম। 


সুতরাং সালাত আদায় করেও যখন আপনি অন্য স্কলারদেরকে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে না জেনে নিজেদের দলের বিপরীতে গিয়ে গীবত, বুহতান বা মিথ্যা কথা বলতেছেন—নিশ্চিত থাকুন আল্লাহর নিয়ম ও উদ্দেশ্য পূর্ণ বিশুদ্ধ, আপনার মাঝেই সমস্যা রয়ে গেছে—আপনার ইবাদাহ কবুল হচ্ছে কি না ভাবা দরকার ইসলামী উদ্দেশ্যের বিবেচনায়। কারণ উদ্দেশ্য পূর্ণ না হলে আপনার নিয়মে সমস্যা রয়ে গেছে—কারণ পার্থিব মানুষের তৈরি করা নিয়মে ভুল থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহর দেওয়া নিয়মের মাঝে ও এর উদ্দেশ্যেকে বাস্তবায়ন করতে কোনো ভুল থাকতে পারে না।


এভাবে উদ্দেশ্যের কথা চিন্তা করে আমরা অনেক কিছুই পাই—নিয়ম ঠিক হয়নি আর এ কারণে উদ্দেশ্যও সাধিত না হয়ে উল্টো ফল হয়।

তাহলে কুরআন-হাদীস থেকে এরকম কিছু উদাহরণ দেখা যাক।

সম্পদ অর্জন করা হারাম নয় কিন্তু যখন এটি হালাল পন্থায় (নিয়মে) অর্জন না করা হয় বা এ থেকে জাকাত না দেওয়া হয় তখন এ সম্পদই তাকে বাঁচানোর পরিবর্তে আযাব ডেকে নিয়ে আসে।


নিয়ত (নিয়ম) যখন বিশুদ্ধ না হয়, তখন আলেম, দানকারী বা জিহাদকারীও জাহান্নামে যাবে। কারণ নিয়তের উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হয়েছে আর এসব যে উদ্দেশ্যে করা হয় সেসব উদ্দেশ্যও সাধিত হয় নি।


কিছু মানুষ হাফেজ হবে কিন্তু তাঁর কুরআন তিলাওয়াত(নিয়ম) কন্ঠ বেয়ে আর নিচে নামবে না(সঠিকভাবে সেই অনুযায়ী আমল না করার কারণে)।


হারাম পথে উপার্জন করে সাওয়াবের আশায় দান করা কুফুরী। কারণ দান করার উদ্দেশ্য উপকারিতা কিন্তু যেই হারাম পথে উপার্জন করা হয়েছে—সেখানে অবশ্যই অন্যের অপকারিতা করেই উপার্জন করা হয়েছে। সুতরাং যেই উদ্দেশ্যে দান করা হয় সেই উদ্দেশ্যকে আগেই ধ্বংস করা হয়েছে। সুতরাং নিয়ম যখন অশুদ্ধ, উদ্দেশ্যও তখন পূর্ণ হয় না।

আপনার জ্ঞান কমের কারণে হোক, বিশুদ্ধ নিয়তের অভাবে হোক, নিরপেক্ষভাবে দেখার অভাবে হোক—-যখনই আপনি অন্য কারো নামে পূর্ণ ও ভালোভাবে না জেনে কথা বলতে যাবেন— যখনই আপনি তাদের নামে কোন কিছু বলার পূর্বে এসব ইসলামী নিয়মবালী পালন না করে কিছু বলেন —- সেটা গীবত হয়ে যায়, অপবাদ হয়ে যায় (কাফির বা দালাল উপাধি দেওয়া)…সাওয়াবের পরিবর্তে সেটা কেবল চরমই নয় বরং চূড়ান্ত পাপের কাজ করলেন যা কবিরা গুনাহ এবং হাক্কুল ইবাদ নষ্ট করলেন। সেটা হোক ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ), জাকির নায়েক, আনওয়ার আল-আওলাকী (রাহিমাহুল্লাহ), নুমান আলী খান, আশরাফ আলী থানবী (রাহিমাহুল্লাহ) বা যেকোনো ব্যক্তির নামে—হোক সে কাফির বা মুশরিক কিন্তু গীবত করেছেন বা অপবাদ দিয়েছেন। আপনি ইসলামী নিয়ম অনুসরণ করেন নি, একারণে কবীরা গুনাহ ও শাস্তির কাজ-ই করেছেন।


অনেক বড় মাপের একটা উদাহরণ পাবেন রাসূল সা এর গীবত নিষেধ করার নিয়মের মাঝে। গীবতের উদ্দেশ্য অন্যের কাছে আরেকজন মুসলিম বা মুমিন ভাই এর নামে মন্দ বলা। এতে কি হয়? অন্যের নিকটে ভাইটি খারাপ হয়ে যায়। এভাবে সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পথে ধাবিত হয়। গীবতে যা বললেন সবই সত্য কিন্তু তবুও হারাম!! কারণ? ইসলামের উদ্দেশ্যসমুহ বাস্তবায়নের পুরোপুরি বিপরীত দিক এটি। এর মাধ্যমে ভার্তৃত্বের বন্ধন, সামাজিক বন্ধন, ইসলামী সমাজ বিনির্মানের পথ, মুসলিমদের মাঝে সম্পর্কের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলন- সবই ব্যহত হয়। বুঝতেই পারছেন সত্য বিষয়কেও উদ্দেশ্যের বিপরীতে হওয়ার কারণে ইসলাম হারাম করে দিয়ে কতটা প্রজ্ঞার স্থান দিয়েছে।
জিহাদের উদ্দেশ্য কি? অন্যায় দূর করা, যুলুম দূর করা, ইনসাফভিত্তিক ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা—এভাবে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।


এখন যদি ফেইসবুকে দেখেন একজন ব্যক্তি তাঁর বিরোধীদেরকে গালি দিচ্ছে, ইচ্ছামত অপবাদ দিচ্ছে — তাহলে তাঁর জিহাদি চিন্তাধারার সাথে ইসলামী জিহাদের উদ্দেশ্যের কোন গড়মিল পাচ্ছেন? গালি দেওয়াই ফাসেকি, গালি দিয়ে যুলুম বন্ধ করা যায় না, গালি অন্যের সম্মানহানীকর, গালি ইসলামী ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মানে কাজ দেয় না। তাহলে বুঝতে পারছেন জিহাদের (নিয়ম) উদ্দেশ্য আর গালির (নিয়ম) উদ্দেশ্য ভিন্ন। সুতরাং নিয়ম যেখানে ভুল সেটার উদ্দেশ্যের দিকে এই নিয়মের মাধ্যমে যাওয়াও ভুল উদ্দেশ্যকেই সাধিত করবে। সুতরাং গালিদাতারা কখনই জিহাদি হতে পারে না।


সালাত শব্দের অর্থ সংযোগ…আল্লাহর সাথে সংযোগ। যেকেউ তাঁর প্রিয়র মত চলতে পছন্দ করে—কারণ তাকে ভালোবাসে, অনুসরণ করে, তাঁর মত চলতে চায়। আর আল্লাহর মত চলতে গেলে তাঁর যাবতীয় নিয়মের মাধ্যমে উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করা। তেমনি সালাতের সংযোগের মাধ্যমে ভালোবাসার এ নিয়েমের মাধ্যমে উদ্দেশ্য থাকে যাবতীয় অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা (সূরা আনকাবুত) ও প্রশান্তি(সূরা মুজাম্মিল)।


কিন্তু আপনি সালাতে মনোযোগ দিতে পারছেন না, সালাতে প্রশান্তিও পাচ্ছেন না, খুশু নেই, ইসসানের দেখা তো দূরের কথা। কেন জানেন? কারণ সালাতের বাহিরে আপনার মাঝে আল্লাহকে স্মরণের মাধ্যমে যে খুশু আসার কথা, সেই খুশু নেই…সালাতের বাহিরে আপনি গীবত করেন অন্য দলের, অন্য স্কলারের—কারণ আপনার মতের সাথে মিলে না-এই অজুহাতে। আল্লাহ সূরা মুমিনুনে বলেছেন মুমিনরা সফলকাম, বলেননি সালাত আদায়কারীরা সফলকাম—আপনার সারা জীবনের সমস্ত সালাত দিয়েও কাজ হবে না অনেক কারণেই। যেই মুমিন সফলকাম তাঁর জন্য আল্লাহ ‘আফলাহা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ চাষ করা। একজন কৃষক দীর্ঘ একটা সময় ধরে চাষাবাদের সাথে লেগে থাকে এবং সর্বশেষ সে ফল তুলে কয়েকদিন ধরে। তদ্রুপ আপনি যদি সারা বছর ভালো কাজ না করে গীবত করতে থাকেন, সমালোচনায় ব্যস্ত থাকেন, তাহলে আপনার আধ্যাত্বিকতা এমনিতেই নষ্ট হয়ে যাবে…তাঁর মানে সারা বছর আপনাকে সৎ আমল দ্বারা চাষ করলেন না আর সালাতে দাড়ালেই অমনি আপনার ঈমান এভারেস্টের চূড়ায় উঠে সালাতে খুশু আসবে—এটা না ভাবাই উচিত।


ফেইসবুকে আপনার পছন্দ হয় না বা আপনার মতের সাথে মিলে না এমন দল বা স্কলারের নামে ইচ্ছামত প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য গ্রুপে সমালোচনা করেন। সম্পূর্ণ লেকচার না দিয়ে নিজেদের শাইখদের সমালোচনায় কাফির বা ইসলামবিদ্বেষীদের মতই অপ্রাসংগকিভাবে এক টুকরা লেকচার দিয়ে তাকে তুলোধুনা করেন অন্য স্কলারদের। আপনার সালাত কখনই শান্তিময় হবে না। কারণ আপনার সারা দিনের বাহন গীবত ও বুহতান। একারণেই আল্লাহ গীবতকে মৃত মানুষের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। কেন জানেন? কারণ আপনি একজন মৃতের নামে বাজে কিছু বললেও আপনাকে কিচ্ছু করতে পারবে না। কারণ সে এখন মৃত, সেন্সলেস। আর মৃত ভাই বলেছেন কারণ সে ঈমান এনেছে—লা ই লাহা ইল্লাহ মতে আপনার ভাই। আপনি যখন আপনার দ্বীনের ভাই এর নামে প্রসঙ্গহীনভাবে, মতের মিল না হওয়ায়, প্রকাশ্য বা গোপন গ্রুপে গীবতে(সত্য কিন্তু মন্দ) লিপ্ত হচ্ছেন বা বুহতান(মিথ্যা এবং অপবাদ) করছেন…তাহলে আপনার সালাত কখনই আপনার কাজে দেবে না। কারণ যেই সালাতের বাহিরে আপনি আল্লাহর আদেশ মানছেন না, সেই একই আল্লাহর সালাতে প্রশান্তি, ইহসান ও তাকওয়া চান কীভাবে? আপনি নিয়মের মাঝে আটকে থেকে উদ্দেশ্য পেতে পারেন না।


সালাত হলো নিয়ম কিন্তু উদ্দেশ্য হলো যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা। কিন্তু সালাতের বাহিরে আপনি মন্দ কাজ, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ থেকে বিরত থাকতে পারছেন না, আপনার সালাত হচ্ছে না। আপনি কওমি মাদ্রাসার বড় হুজুর নাকি স্কলার অথবা ফেইসবুকের সেলিব্রেটি সেটা ধর্তব্য নয়—আপনি আল্লাহর উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ, সুতরাং আপনি ব্যর্থ। নিয়ম আপনাকে জান্নাত দেবে না, জান্নাত দেবে নিয়মের উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করার মাধ্যমে।


রামাদানের উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। আর তাই কেবল খাওয়া-দাওয়া পরিহারই যথেষ্ট নয়। একারণে যারা সিয়াম রাখে কিন্তু মিথ্যাকে পরিত্যাগ করতে পারে না, অন্যের সাথে মিথ্যা বলে ঠকায়, তারা তাকওয়ার বিপরীত কাজ করে, তাই কেবল উপুষ থাকার আল্লাহর দরকার নেই। অর্থাৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের জন্য সিয়াম রাখা হয়। আর যদি সিয়ামের (নিয়ম) মাধ্যমে মিথ্যা (নিয়ম+উদ্দেশ্য==অন্যকে না ঠকানো ইত্যাদি; তাকওয়া বহির্ভূত কাজ) থেকে নাই বিরত থাকতে পারেন, তবে উদ্দেশ্যও বাস্তবায়িত হবে না, তাই রাখারও দরকার নাই।
হজ্জ করলে হজ্জকারী ব্যক্তি একদম নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে যাবে। ৪০দিন তাঁর দোয়া কবুল হয় এবং এজন্য অন্যরা তাঁর কাছে দোয়া চাইতে যায়। কিন্তু হজ্জের নিয়ম-কানুন তো এটা করে দেবে না। এটা কীভাবে করলে নিষ্পাপ হওয়া যাবে সে জন্য কুরআন-হাদীস এবং ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) ও ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এর ইতিহাসে যেতে হবে। হজ্জের আয়াতগুলো পড়লে দেখতে পাবেন উদ্দেশ্যগুলো।


আপনি হজ্জ করে এসেও আল্লাহর ইচ্ছামত দাস হিসেবে চলেন না, তাঁর হালাল-হারাম বেছে চলেন না, হজ্জের টাকা অন্যের সম্পদ মেরে খাওয়ার টাকা। পরিবারের লোকদের মাঝে, আপনার অধীনদের মাঝে ন্যায়বিচার করেন না, গালি-গালাজ ছাড়তে পারলেন না, ঝগড়া ছাড়তে পারেন নি, অশ্লীল কাজ করেন, পাপ কাজে সাহায্য করেন,(সূরা বাকারাহ, সূরা মায়িদা) —- অর্থাৎ যেই ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) ও ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) ও মা হাজেরার(আলাইহাস সালাম) ইতিহাসের সাথে আল্লাহর জন্য হজ্জ নিবেদিত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল খাস ঈমান, তাওহীদ, তাকওয়া। কিন্তু আপনি তাদের নিয়ম- কানুন অনুসরণ করলেন কিন্তু অর্জন করতে পারলেন না নিয়মগুলোর উদ্দেশ্য – অবিশ্বাসী বা কুফুরী কাজই করলেন সব—তবে উদ্দেশ্য কীভাবে পূর্ণ হবে?! আপনি নিষ্পাপ হওয়া তো দূরের কথা, আপনার হজ্জ-ই তো কবুল হয়নি। হজ্জের উদ্দেশ্যই ছিল সমস্ত পাপ, কুফুরী থেকে বিরত থাকা, এটাই উত্তম পাথেয় আল্লাহর পথে (সূরা বাকারাহ-১৯৭), কিন্তু সেগুলো করতে পারেন নাই, তবে হজ্জ হলো কিভাবে?


বিবাহে এতো তালাক হচ্ছে কেন? বা এতো অশান্তি ও জুলুম হচ্ছে কেন? আল্লাহ বিবাহের উদ্দেশ্যগুলোকে বললেন সুকুন(প্রশান্তি), মুওয়াদ্দাতাহ (প্রচন্ড উচ্ছশিত ভালোবাসা) ও রাহমাহ (দয়া)।


এইগুলো আমরা খুজি কোন কোন নিয়মের মাধ্যমে? মোহর কত হবে, বাসাটা কত বড় হবে, শারীরিক চাহিদার ফ্যান্টাসি, গহনা কত দিবে, আলাদা বাসা, সৌন্দর্য, অন্য দম্পতির সাথে নিজেদের তুলনা করে নতুন কিছু চাওয়া ইত্যাদি কারণে। এগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর উল্লেখিত জিনিসগুলো চাই। কিন্তু একটি বিবাহের এই সম্পর্কের উদ্দেশ্যগুলো আল্লাহ কীভাবে দেবে সেদিকে একটুও লক্ষ্য করি না। আল্লাহর দেওয়া উদ্দেশ্য আমাদের চাহিদা মত, আমাদের নিয়ম মত চাই!! আল্লাহ, আল্লাহর নিয়ম এখান থেকে বাদ পড়ে গেছে!! তাহলে উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে কীভাবে?


একজন নারী যেমন অধিকার সচেতন, পুরুষও তেমনি অধিকার সচেতন। একজন নারী যেমন ইচ্ছামত অধিকারের হাদীস শুনান ভুলভাবে, পুরুষও তেমন করে। এদের প্রধান সমস্যাগুলো ‘নিজেদের অধিকার’, ‘একজন আরেক জনকে হালাল-হারামের ফতোয়া’তে ফেলে নিজদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করা। এ অধিকার আদায় করতে গিয়ে একেজন আরেকজনের ইতিহাস টেনে এনে কত কিছুই করে যা কবীরা গুনারহর অন্তর্ভূক্ত; সেদিকে কোনো খবর নেই, অথচ তারা নাকি অধিকার আদায় করতে ব্যস্ত এবং ইসলামিস্টও বটে!!
এখানেই সমস্যাটা। নিজেদের অধিকার আদায় নিয়ে তারা এতো ব্যস্ত যে আল্লাহর অধিকার আদায়ে তাদের ভ্রক্ষেপ নেই। এবং সমস্ত সমস্যার উৎপত্তি এখান থেকেই। আল্লাহ যে নিয়মের মাধ্যমে বিয়েতে সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ ও রাহমাহ দিবেন- সেদিক তারা ভ্রক্ষেপও করে না বা জানেও না আর এর বিপরীতেই সকল সমস্যা—আল্লাহর নিয়ম বাদ দিয়ে নিজেদের নিয়মে আল্লাহর উদ্দেশ্যসমূহকে খুঁজে।


বিয়েসহ সমস্ত সম্পর্ক শুরু হয় আল্লাহর সম্পর্কের ভিত্তিতে (সূরা নিসা এবং বিয়ের খুৎবা)। এই আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতেই বিয়েতে “প্রশান্তি, মুওয়াদ্দাতাহ (প্রচন্ড ভালোবাসা), রাহমাহ” এবং অন্যান্য সবই আবর্তিত হয়। এই আল্লাহর সম্পর্ক তুলে ধরেছেন সূরা নিসায়। কুরআনের রেয়ার কেস, এখানে দুইবার ‘তাকওয়া’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন আল্লাহর সম্পর্কের ভিত্তিকে তুলে ধরতে। রামাদানের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে ‘তাকওয়া’র অর্জন। কিন্তু আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ভিত্তি, বান্দার সাথে বান্দার এবং এদের সাথে আল্লাহর সম্পর্কের ভিত্তি বর্ণনা করতে দুইবার ‘তাকওয়া’ শব্দ বলেছেন এবং দুইবারই আদেশসূচক শব্দে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কত গুরুত্বপূর্ণ আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে এই ‘তাকওয়া’র জীবন্ত আবর্তন।


আল্লাহর সাথে এই ‘তাকওয়া’র ভিত্তিই ছিলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি অথচ এর পরিবর্তে নিজেদের অধিকারে নিয়ে নিজেদের স্বার্থে হাদীসকে ইচ্ছামত ব্যবহার, একে অপরের এমন সবকিছু বলা যা অধিকারের চেয়ে কবীরা গুনাহই বেশি হয়।—অধিকারের পরিবর্তে কি হয়? সমস্ত কবীরা গুনাহ। যা হওয়ার কারণ হলো আল্লাহর অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হয়ে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কারণে স্বার্থপরতার শুরু।


অথচ পরস্পর যদি আল্লাহর অধিকার আদায়ে সচেতন হতো, তবে আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে কিরুপ তাকওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলোর ব্যাপারেও সচেতন থাকতো। এভাবে বিচ্ছেদ বা পারস্পপারিক দ্বন্দের পরিবর্তে বিবাহের যাবতীয় উদ্দেশ্য, স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন হতো আল্লাহর তাকওয়ার সম্পর্কের জন্য। কারণ তাদের তখন মূল লক্ষ্য থাকবে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করে তার যাবতীয় অধিকারের আওতায় সব মেনে, সমস্ত পাপ থেকে বিরত থেকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তখন কারো প্রতি কোনো অন্যায়, অনাচার, অসদাচার করতে পারে না। তাকওয়া, আদল, রাহমাহ-ই হবে তাঁর মূল লক্ষ্য।


বিয়ের যাবতীয় প্ল্যানে থাকে ‘নিজ অধিকার আদায়’ এর চিন্তা, আল্লাহর অধিকার আদায়ের চিন্তা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে মানসিকতা। সেকারণে আল্লাহ এই বিয়েতে তাঁর নিয়মও দেন না, বিয়ের উদ্দেশ্যও পূর্ণ হয় না।


সমস্ত বিশ্বে মাযহাব এবং মাযহাবী নয় এমন ভাগ হওয়ার কারণগুলো অনেক হতে পারে। এসব মাযহাব এবং মাযহাব নয় এভাবে ভাগ হয়েছে কিসের ভিত্তিতে? অবশ্যই উসূল(মূলনীতি) ও ফিকহের (মাসয়ালা উপলব্ধি) উপলব্ধির ভিন্নতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ একই আয়াত বা একই হাদীস একেক জন একেকভাবে বুঝেছে তাদের উস্তাদ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, জ্ঞানের ভিন্নতা ইত্যাদি ভিন্নতার কারণে। এভাবে ভিন্নতা থেকেই মাযহাবের উৎপত্তি। কিছু ক্ষেত্রে জাল বা জয়ীফ হাদীসের কারণে, এবং অবশ্যই জাল হাদীসের কারণে নিয়ম ও উদ্দেশ্য-দুটোই ব্যহত হয় এবং এটা অবশ্যই বর্জনীয়।


ভিন্ন ভিন্ন ফিকহ বা মাযহাবের উদ্দেশ্য কী? যেকোনো সমস্যার সমাধান(দলীল জাল হোক বা বিশুদ্ধ যাইহোক, উদ্দেশ্য অভিন্ন—সমস্যার সমাধান)। কিন্তু সমাধানের উদ্দেশ্য কি?—সমস্যা মেটানো। সমস্যা মেটানোই যেখানে উদ্দেশ্য—আজকের দিনে মাযহাব এবং মাযহাবী নয়—এদের মাঝে যেরকম ঘৃণা, গীবত, অপবাদ, অহংকার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যতা, আদবহীনতা, চারিত্রিক বক্রতা, ফরজকে গুরুত্ব না দিয়ে নাফলের ফাতাওয়াতে ঐক্যের রশিকে নষ্ট করা ইত্যাদির চর্চা হচ্ছে—আপনার কি মনে হয় মাযহাব বা সমস্যার সমাধানের জন্য যেসব ফিকহ উদ্ভব হয়েছিল সেগুলোর উদ্দেশ্য বা ইসলামের উদ্দেশ্য আছে বা চর্চা হয় আদৌ? যা কিছু চর্চা হয় সব কবিরা গুনাহ। এবং এটা সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যের চাইতে নতুন সমস্যা উদ্ভবের চর্চাই বেশি হয় মনে হয়। আমি-আপনি কোথায়, কোন মাযহাব বা দলে আছি সেটার ভিত্তিতে আল্লাহ বিচার করবেন না, জান্নাত বা জাহান্নাম দিবেন না। এটা পূরোটাই হবে আল্লাহর নিয়ম এবং উদ্দেশ্যকে আপনি সঠিকভাবে পালন করেছেন কি না। সুতরাং আপনার ভিন্নতা কি আল্লাহর নিয়ম-উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন? না হলে ভিন্নতার মাঝেও আল্লাহর উদ্দেশ্যগুলোকে সম্মুখে নিয়ে চলুন; নতুবা আখিরাতে চরম ক্ষতিগ্রস্থতা প্রস্তুত রয়েছে।


মাযহাব বা মত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সগভীরভাবে লক্ষ্য করেছেন একটা বিষয়? কেউ কি উদ্দেশ্যকে ভিন্ন ভিন্ন বলেছেন? অর্থাৎ সালাফিদের সালাত একরকম, মালেকিদের সালাতের নিয়ম আরেক রকম, হানাফিদের সালাতের নিয়ম অন্য রকম…কিন্তু উদ্দেশ্য? উদ্দেশ্য তো একই। অর্থাৎ উদ্দেশ্য আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই – খুশু অর্জন(সূরা বাকারাহ, সূরা মুমিনুন), মন্দ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকা(সূরা আনকাবুত), প্রশান্তি ও শক্তি সঞ্চয় করে পূনরায় ইসলামী কাজে যুক্ত হওয়া(সূরা মুজাম্মিল), সালাতের কুরআন পাঠ করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলা (আকিমিস সালাত লিজ জিকর) ইত্যাদি ইত্যাদি।


এবার লক্ষ্য করুন, আল্লাহর মৌল উদ্দেশ্য ঐগুলো। কিন্তু নিয়মের ভিন্ন উপলব্ধির কারণেও উদ্দেশ্যের ভিন্নতা হয়নি। এহেন ক্ষেত্রে সালাফি, হানাফি, শাফেয়ী, মালেকিদের মাঝে এই সালাতের ফিকহ নিয়ে গীবত হয়, দ্বন্দ হয়, ঝগড়া করে, মন্দ ব্যবহার করে, বুহতান করে বিরোধীদের স্কলারদের নিয়ে, ব্যঙ্গ করে মাযহাবের নাম ও স্কলাদের নাম নিয়ে, নিজেদের স্কলারদের নিয়ে অতিরঞ্জন করে মিথ্যা করে হলেও এবং যাচাই করে না, আর অন্য স্কলারদের খাটো করে মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি করে, বিভিন্ন বাজে ট্যাগ লাগায়——এবার বলুন, উদ্দেশ্য প্রধান নাকি নিয়ম? অবশ্যই উদ্দেশ্য (এবং নিয়মও বিশুদ্ধ হওয়া চাই অবশ্যই, কারণ আল্লাহর নিয়মও নির্ভুল)। তাহলে ফিকহ কেন্দ্রিক মত পার্থক্য থাকার কারণে এই যে এইসব কাজ করলেন তাতে কি মনে হয় আপনার সালাত হয়েছে? সালাতের আল্লাহর দেওয়া মৌল উদ্দেশ্য অর্জন হয়েছে? আপনার কত বছর ধরে এটা হচ্ছে আরেকটি বার চিন্তা করে দেখুন… হাদীসটি মনে আছে না? কিয়ামাতের দিন সালাতের হিসাব নেওয়া হবে সর্বপ্রথম। যার সালাত ঠিক হবে, তাঁর অন্যান্য আমাল সহজ হয়ে যাবে…এই ঠিক হওয়া মানে কি? আপনার মতে আপনার দল বা মাযহাবের বিশুদ্ধ নিয়ম?…আর উদ্দেশ্য?!! এটাই কি প্রধান নয়? সুতরাং কোথায় আছেন আরেকটু ভাবুন।


দাওয়াহ ও বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনসমূহের অবস্থা একটু পরখ করে দেখা যাক… 


“তোমার রবের পথে আহবান করো হিকমাহ এবং উত্তম উপদেশ সহকারে। আর তাদের সাথে ডিবেট করো সুন্দরতর পন্থায়”।


এটি দাওয়াতের আয়াত। কিন্তু বাংলাদেশে দাওয়াতের এই আয়াতের প্রধান অর্থ কোথা থেকে শুরু হয় জানেন? হিকমাহ থেকে অর্থ শুরু হয়!!! সুবহানাল্লাহ।


আমরা আল্লাহর একটি আয়াতের দুইটি দিক বাদ দিয়ে অনুবাদ শুরু করি আর আল্লাহর পথে দাওয়াত শিখতে চাই!!! আল্লাহর আয়াতের প্রত্যেকটি অংশ ভালোভাবে না বুঝলে সেটার ওপর আমল করবো কিভাবে? আর উদ্দেশ্য উপলব্ধি?…আয়াতই তো বুঝতে পারলাম না আবার উদ্দেশ্য!!


দাওয়াতের আয়াতে ‘দাওয়াত’ শব্দটাই বুঝি না আর আমরা করবো দাওয়াত? আর মাধ্যমে উদ্দেশ্য কী সেটাই বা বুঝবো কিভাবে? —


দাওয়াত শব্দের অর্থ আহবান করা। কেউ দাওয়াত দিলে সেটি কবুল করা রাসূলের সুন্নাহ। কিন্তু মূল কথা হলো একজন মানুষ কাকে দাওয়াত দেয়? নিশ্চয় আপনজনকে, যাকে সে পছন্দ করে, ভালোবাসে। একজন মানুষ যাকে সে পছন্দ করে না তাকে কি কেউ দাওয়াত দেয়? নাহ। তাহলে দাওয়াহর উদ্দেশিত ব্যক্তিকে ভালোবাসা হয়, পছন্দ করা হয় বলেই দাওয়াত দেওয়া হয়। তার মানে যে ব্যক্তিকে আপনার অপছন্দ হয়, দেখতে পারেন না, আপনার ভালো লাগে না, ভালোবাসেন না—তাকে তো দাওয়াত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না শব্দগত, সুন্নাহ ভিত্তিক প্রয়োগ আর পারিভাষিক সংজ্ঞায়ন অনুযায়ী।


মনে করেন কিছু মানুষের ভুল আছে, প্রকাশ্য ভুল, শিরকে লিপ্ত আছে, বিদয়াত করে, বাড়াবাড়ি করে—এদেরকে কি বলে দাওয়াত দিবেন?


‘এই শালা কুফফার, আমি তোর ভালো চাই, আমার বাড়িতে তোর দাওয়াত, তুই আসবি আগামীকাল, তোরে সত্য-সুন্দর ইসলামের দাওয়াত দিলাম’,


‘ ঐ হাফানির দল, তোরা তো আবু হানিফারেই মানস, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলরেও মানস না, তোরা কুফফার, বুচ্ছস? হিন্দুরা জান্নাতে যাইতে পারবে কিন্তু তোদের সম্ভব না। আমার কাছে বুখারী-মুসলিমদের দলীল আছে যা সব চাইতে বিশুদ্ধ…এইটা না মাইনা জাল দলীল মানলে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নাই’


‘তোরা আহলে হাদীস তো ইংরেজদের দালাল,জুকার নায়েক ইহুদি-খৃষ্টানদের দালাল। আমরা ইমামে আজমকে মানি, যিনি সবচেয়ে বড় ইমাম এবং এমন ইমাম যিনি একাধারে ইশার অযু দিয়ে ফজর পড়তেন’


— আচ্ছা দাওয়াতের অর্থ মনে আছে? আহবান করা। কাকে আহবান করা? যে ব্যক্তিকে আপনি ভালোবাসেন, যার কল্যাণ চান। কিন্তু আপনি কি আপনার বিরোধীকে দাওয়াত দিতে পারবেন? দাওয়াত যাকে দেবেন তাকে আগেই বিরোধী ভেবে নিচ্ছেন???!! তাহলে কি তাকে ভালোবাসতে পারবেন? কল্যাণের পথে সুন্দর করে ডাকতে পারবেন? তাহলে ওপরের তিনটি উদাহরণের জায়গায় আমাদের নিজেদের দল, ইমাম, মাযহাব, আন্দোলনের সাথে অন্য দল, ইমাম, মাযহাব, আন্দোলনের লোকদের সাথে কিরুপ ব্যবহার করি একটু ভালোভাবে চিন্তা করে দেখুন।


আল্লাহ শব্দ প্রয়োগ করলেন (১) দাওয়াতের আহবানের, (২) রবের পথে (৩) হিকমাহ-সুন্নাহ দিয়ে (৪) উত্তম উপদেশ দিয়ে এবং সর্বশেষ উপরেরগুলো কাজ না লাগলে আল্লাহ আরো ভালোভাবে দাওয়াত দিতে গিয়ে বললেন (৫) অধিকতর উত্তম পন্থায় ডিবেট কর…

১- তাহলে দাওয়াত হয় ভালোবেসে, কারো জন্য কনসার্ন হলে, কল্যাণ চাইলে

২- রবের পথে ভালোবেসে আহবান করার পদ্ধতি কার হবে? আল্লাহর পদ্ধতিতেই হবে…সেটা কীভাবে?

৩- হিকমাহ বা আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক। সুতরাং আপনার দাওয়াতের বৈশিষ্টের সাথে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাক্কী জীবনের দাওয়াহর সাথে একটু মিলিয়ে দেখুন কার দাওয়াহ করতেছেন…আল্লাহর দাওয়াহ নাকি নিজ দলের দাওয়াহ এবং পন্থা আল্লাহর নাকি আপনার দলের।

৪- এরপর উত্তম উপদেশ দিয়ে বুঝিয়েও দিতে বলা হয়েছে। আর আমরা কি করি? যাকে দাওয়াত দেই তাঁকে খালি ধমকাতেই ব্যস্ত- এইটা বোঝো না, সেইটা বোঝো না ইত্যাদি।
৫- এভাবে সবকিছু দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার পর যখন একজন মানুষ সত্যকে গ্রহন করে না, তখন আমাদের প্রতিক্রিয়া হয় রাগ, ইচ্ছামত ঘৃণার কথা ছুঁড়ে দেওয়া, সম্পর্ক ছিন্ন করা…অথচ আল্লাহ বললেন – ঠিক আছে, ঐগুলো কাজে লাগেনি তো কি হয়েছে, তুমি তো যাকে দাওয়াত দিচ্ছো তাঁকে ভালোবাসো, তাকে কেয়ার করো, তাঁকে সৎ পথে আনতে চাও—-তাহলে তাঁর সমস্ত যুক্তি, বিদ্যা ইত্যাদির বিপরীতে আরো অধিকতর ভালো কিছু দিয়ে চালিয়ে যাও…হতে পারে এতক্ষণ এই লেভেলে আসার আগ পর্যন্ত তার আচার-ব্যবহার, যুক্তি সবই তোমারটার সমান-ই ছিল…তাই সে তোমারটা নিতে চায়নি…কারণ একই বা সমান-ই দুটোই। তাই কাউকে গ্রহণ করাতে হলে আরো ভালো হলেই না সে মূল্যায়ন করবে, মনে করবে আরেহ—তারটা তো আমারটার চাইতে অনেক ভালো…সুতরাং সেইটা নিয়ে আমি উপকৃত হবো না কেন?


আল্লাহর এই দাওয়াতের পদ্ধতির সাথে এর উদ্দেশ্য (কাউকে কল্যাণের পথে ডাকা এবং কল্যাণকর পদ্ধতিতে-নিয়মে) কি মিলে না? দাওয়াতের পদ্ধতি-নিয়ম যেমন কল্যাণকর তাঁর উদ্দেশ্যও কল্যাণকর। একারণে কল্যাণকর উদ্দেশ্যের দিকে ডাকতে কখনই অকল্যাণকর, বাজে ব্যবহার, যাচ্ছে-তাই বলা ইত্যাদি নিয়ম প্রযোজ্য নয়। আমাদের সাথে যাদের মতের ভিন্নতা আছে তাদেরকে আমরা কীভাবে ডাকি? আপনার এতদিনকার দাওয়াতের দিকে একটু তাকাবেন?


আপনার দল, মাযহাব, মানহাজ, আন্দোলন এর বিপরীত কাউকে কীভাবে দাওয়াত দেন বা কথা বলেন? ট্যাগ? গীবত? বুহতান? মিথ্যা? অপ্রাসংগিক উক্তি? যাচাইহীন দলীল? মন্দ আচরণ? রাগ? — আরেকটু ভেবে দেখুন জান্নাত বা জাহান্নাম এবং হিসাবের মালিক কে?
বাংলাদেশে দাওয়াহর নামে যা হয় তা হলো ভিন্ন দল বা আন্দোলন একে অপরের সাথে বা ব্যাপারে কথা বলার সময় কখনই দাওয়াহ করে না। হোক সেটা ফেইসবুক, ব্লগ বা বাস্তবে। বরং প্রত্যেকের উদ্দেশ্য থাকে অন্যকে পরাজিত করা, অপমানিত করা, খাটো করা বা নিজ দলের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রমানাদি নিয়ে অপমান করার তীব্র বাসনা (দাওয়াহ ???!!), অন্য দলকে পচিয়ে নিজ দলের বড়ত্ব দেখিয়ে ভেড়াতে চেষ্টা


এখন দেখুন রাসূল সা এর দাওয়াতের একটা হিকমা-সুন্নাহ-নমুনা।

তায়েফে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাওয়াত দিতে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছিল এটা সবাই জানি। কিন্তু রাসূল সা কি তাদের খারাপ ও মর্মান্তিক জঘন্যতম আচরণের বিপরীতে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন? পাহার উল্টিয়ে ধসিয়ে দিতে জিব্রাইলকে (আলাইহিস সালাম) আদেশ দিয়েছিলেন? নাহ। বরং দোয়া করেছিলেন…কিসের দোয়া? হেদায়েতের দোয়া…কাউকে ভালো না বাসলে তাঁর জন্য হেদায়েত চাইবেন? নাহ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দাওয়াতের কারণে মেরেছিল কিন্তু তাকে মারা সত্ত্বেও তাদেরকে ভালোবেসে হেদায়েতের দোয়া করলেন— এটাই দাওয়াহ। কেউ গ্রহণ করুক বা না করুক, আপনার দাওয়াহর অর্থ প্রতিশোধ নয়, কাউকে ঘৃণা করা নয়, অপছন্দ করা নয়, গালি বা কুফফার ট্যাগ দেওয়া নয়, ইহুদি-খৃষ্টানদের দালাল বলা নয়— বরং ভালোবেসে কল্যাণের পথে আহবান করা, রবের পথে – আর রবের পথে কেউ মন্দ আচরণ করে না, এটা তাঁর প্রতি দাওয়াতও না। কেউ আপনাকে যাই বলুক, যতই আঘাত করুক, যতই মন্দ আচরণ করুক, মন্দ ব্যবহার করুক— আপনি তাঁর সাথে হিকমাহ বা বাস্তবে রাসূল সা যেইভাবে সুন্দরতর আচরণ করেছেন, উত্তম কথা বলেছেন, দোয়া করেছেন সেইভাবে আচরণ করা। মন্দের বিপরীতে মন্দ নয়, অসদাচরণ নয় বরং দাওয়াহ হলো আরো উত্তম উপদেশ দেওয়া। আর ডিবেটে আমার দাওয়াহর কারণে কখনই কেবল সুন্দরই নয়, বরং আমি যাকে দাওয়াহ দিচ্ছি তাঁর থেকে আমার ভাষা, আচরণ, ব্যবহার সুন্দরতর হবে, তাঁর থেকে অবশ্যই উত্তম হবেই—এটাই আল্লাহর ফর্মুলা। কারণ কারো থেকে আমারটা যদি আরো বেশি উত্তম-ই না হয়, তবে সে কেন আমারটা গ্রহণ করবে? মেনে নেবে—কারণ তারটা আর আমারটা সমান হলে তারটাতে থাকতে সমস্যা কোথায়…অধিক কল্যাণ, অধিক ভালো থাকলেই না গ্রহণ বা বর্জনের কথা আসে।


আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলে আল্লাহর ফর্মুলা দিয়েই দিতে হবে, নতুবা বুঝতে হবে আপনার দাওয়াতে অবশ্যই ভুল আছে। সুতরাং আগে দেখুন আপনার দাওয়াত ইখলাসের সাথে আল্লাহর পথে হচ্ছে নাকি নিছক আপনার প্রতি, আপনার ইমামের প্রতি বা আপনার আন্দোলনের প্রতি, আপনার মানহাজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য হচ্ছে। যখনই আপনি আল্লাহর দাওয়াতের মূলনীতিগুলোকে উপেক্ষা করে অন্য ধরণের শব্দ ব্যবহার করছেন, নিশ্চিত থাকুন আপনার দাওয়াতে (নিয়ত-নিয়ম ও উদ্দেশ্য) ভুল আছে। কারণ আল্লাহকে সম্মুখে রাখলে দাওয়াত আল্লাহর ফর্মুলা ব্যতীত হতে পারেই না। বিপরীতে আপনার দাওয়াত প্রথমে যদি আপনার দল, ইমাম, মাযহাব (ফিকহী মাসয়ালার উপলব্ধি ভিন্নতা), আন্দোলন ইত্যাদি সম্মুখে আসে, তবে আল্লাহর ফর্মুলাকেও খাটাতে পারবেন না ঠিকমত। সুতরাং দাওয়াতকে পুনরায় আমাদের ভালোভাবে শেখা উচিৎ। প্রত্যেক নবী-রাসূল তাঁর দেশের বিপরীত পথে গমণকারীদের আহবান করতেন ‘হে আমার গোত্র’, ‘আমি তোমাদের কল্যাণকামী’ ইত্যাদি বলে। আর আল্লাহ নবীদেরকে গোত্রের “ভাই” হিসেবে উল্লেখ করেছেন… “তাদের ভাই সালেহ”, ‘তাদের ভাই লুত’ ইত্যাদি বলে। সুতরাং দাওয়াহ হয় ভালোবেসে, কল্যাণের জন্য, হেদায়েতের জন্য (উদ্দেশ্য) আর এর পথ-পদ্ধতি সবই কল্যাণকর।


দাওয়াতের ভাষা, সংশোধনের ভাষা কখনই হিংসাত্মক, গালি, ট্যাগ, গীবত ইত্যাদি নয়। বরং আল্লাহ শিখিয়ে দিলেন সুন্দর আচরণে শত্রুও বন্ধু হয়ে যায়, আল্লাহর রাসূলের উদাহরণ অসংখ্য আর আল্লাহর শিক্ষায় গড়া শ্রেষ্ট দায়ী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনি ছিলেন যে তাঁর দাওয়াহ কেউ গ্রহণ না করলেও তাঁর ভাষা, আচরণ, ব্যবহার, উত্তমতা, আতিথেয়তা ইত্যাদির প্রশংসা করতে হতই…কারণ এটি ছিল আল্লাহর শিক্ষায়, রবের পথে একজন শ্রেষ্ট দায়ীর দাওয়াহর নমুনা। আর আমরা? আমাদের দাওয়াহর পদ্ধতি? উদ্দেশ্য? পথ?—আমাদের গন্তব্য কোন দিকে?


ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু) কেন চুরের হাত কাটেনি? কারণ কি? দূর্ভিক্ষ? না। মনে করুন দূর্ভিক্ষ ছিল না, কিন্তু গরিবী অবস্থা ছিল, চাকরি-বাকরির অভাব ছিল…তাহলে কি কাটতেন? না, তবুও কাটতেন না। কারণ ইসলামী শরিয়া নিয়ম তৈরি করেছে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, বরং শাস্তি যাতে না পেতে হয়, সেই অবস্থাও যেনো কারো না হয়, সবাই যেন প্রশান্তিতে থাকতে পারেই—সেই ব্যবস্থা করাই উদ্দেশ্য। সুতরাং সেই সব উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করার আগে তো সেই সবের জন্য শাস্তি দেওয়াটাই জুলুম। একারণে দেখবেন ইসলামের ১৪০০ বছরের ইতিহাসে মাত্র ৫ জন লোকের হাত কাটা হয়েছিল!


উপরের এত সবের আলোচনার প্রেক্ষিতে আপনি হয়তো উদ্দেশ্যকেই এখন বেশি গুরুত্ব দেবেন, তাই না? কিন্তু ওহীর ক্ষেত্রে নিয়ম ও উদ্দেশ্য অভিন্ন আগেই বলেছি। অর্থাৎ ওহীর ক্ষেত্রে আপনার তৈরি করা কোনো নিয়ম থাকতে পারবে না। এটা আল্লাহর একমাত্র ইখতিয়ার। এতে আপনার তৈরি করা বা আপনাদের দলে কোন বানানো নিয়ম থাকলে সেটার ফায়সালা আল্লাহর সাথে চূড়ান্তভাবে হবেই। কারণ যে নিয়ম আল্লাহর এখতিয়ারে এবং তিনিই ইন-চার্জ এ আছে, সেখানে আপনার তৈরি করা আইন হলো নিজেকে তাঁর সমকক্ষ ভাবা এবং এভাবে শিরকে লিপ্ত হওয়া যেরুপ ইহুদি-খৃষ্টানরা হয়েছিল।


আর একটি হাদীসে এসেছে কিয়ামাতের দিন… কিছু লোককে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে হাওযে কাওসারের পানি পান করতে দেওয়া হবে না অথচ আল্লাহর রাসূল সা তাদেরকে চিনতে পারবেন মুসলিম উম্মাহ হিসেবে। কিন্তু যেহেতু তারা বিদয়াত করেছিল, নিয়মকে নিজেরা তৈরি করে নিয়েছিল, সেকারণে তাদেরকে ধমকের সাথে বলা হবে সুহকান, সুহকান – তোমরা দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও এবং এদেরকে উল্টো করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।


ইসলামের যাত্রা থেকে যদি দেখেন—মাক্কী জীবনে নিয়ম বা রুলস পেয়েছেন? কতগুলো? কিছু; যা ইহুদি-খৃষ্টান ধর্ম থেকে এসেছিল—যেমন সালাত। এ কারণে দেখবেন মাক্কী সূরায় জাকাতের কথা এসেছে কিন্তু সেটা নিসাবের জাকাত নয়, সেটা ছিল পবিত্রতা(সূরা মুমিনুন)। মাক্কী জীবনের ওহীর সমস্ত-ই ছিল ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে। মাক্কী সূরা বা মাক্কী যুগের হাদীসগুলোর দিকে খুবই গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন ইসলামের উদ্দেশ বাস্তবায়নে কি কি বিষয় উদ্দেশ্যের জন্য মৌলিকভাবে দরকার। আখলাক-সুন্দর চরিত্র, আদাব, নিয়তের পরিশুদ্ধতা, আখিরাতের চিন্তা, সমস্ত পূণ্য কাজ, সবর, আধ্যাত্বিকতা, আল্লাহর রাস্তায় প্রচেষ্টা-মুজাহাদা ইত্যাদি। এজন্য ‘রিয়াদুস সালেহীন’ আমাদের খুবই দরকার। কারণ সেখানে এসব মৌলিক উদ্দেশ্যের বিষয়াবলীই প্রাথমিকভাবে আলোচিত হয়েছে সুন্দর গোছানোভাবে।


মাক্কী যুগের সূরা, আয়াত এবং হাদীসগুলো মূলভিত্তি এবং ফাউন্ডেশন আর তাঁর বাস্তবিক সমাজ হলো মাদানী যুগ এবং এখানেই প্রথম নিয়ম, হুদুদ, আইন ইত্যাদির প্রচলন হয়। সুতরাং মাক্কী যুগের যে ইসলামের ভিত্তি প্রস্তুত হয়েছে সেই ভিত্তি আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন না করে কেবল নিয়ম, নিয়ম আর হুদুদ, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের কথা বললে কি ইসলামের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে? আমার ঈমানের ভিত্তি ঠিক নেই, মানুষের সাথে ভালো আচরণ করি না, স্কলারদের নামে যাচ্ছে-তাই বলি আর বিভিন্ন রিচুয়াল বা নিয়ম মানতে বললেই কি আল্লাহ আমাকে জান্নাত দিয়ে বসিয়ে রাখবে??!!


রাসূল সা বলেছেন ‘তোমাদের মাঝে শান্তি ছড়িয়ে দাও’—এ শান্তি কেবল মুসলিমদের মাঝে নয়, বরং প্রতিবেশি অমুসলিম হলে তাকেও শান্তিতে রাখতে হবে, শান্তির পথে শান্তিতে দাওয়াত দিতে হবে ‘মাকারিম আল-আখলাক’ দিয়ে…কেবল হালাল-হারাম নিয়ম দিয়ে এ শান্তি হয় না, উদ্দেশ্যের পথে বিশুদ্ধ পথকে আকরে ধরে চলতে হবে আল্লাহর রাসূলের মাক্কী যুগের ভিত্তিকে সর্বাজ্ঞে নিয়ে পথ চলা…।


জীবনে সকল ক্ষেত্রে যদি ‘উসওয়াতুন হাসানা’র নিয়মে ‘মাকারিম আল-আখলাক’ অর্জনের পথে না যেতে পারি, তবে আমাদের ইসলাম উপলব্ধি আর রাসূল সা ও সালফে-সালেহীনদের ইসলামের মাঝে পার্থক্য রয়ে গেছে। ‘মাকারিম আল-আখলাক’—সকল সৎ চরিত্র; সে হোক সালাতে, হোক ফিকহে, হোক সে দাওয়াতে, হোক সে ব্যক্তিগত বা অনলাইন লাইফে— এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই চলতে হবে। রাসূল সা মাসজিদে থেকেছে খৃষ্টানরা এবং যিশুর মূর্তির পূজা করেছে—রাসূল সা কিছু বলেছে? মন্দ আচরণ করেছে? মসজিদে প্রস্রাব করেছে, সাহাবারা মারতে গিয়েছে কিন্তু রাসূল সা তাকে টুকা দেওয়া তো দূরের কথা, সাহাবাদের থামিয়েছে, তাকে প্রস্রাব পূর্ণ করতে দিয়েছে…কেন? মক্কার সেক্যুলার মুশরিক কুরাইশরা তাঁকেসহ সাহাবাদের কত অত্যাচার করেছে কিন্তু বিপরীতে তিনি কি প্রতিশোধ পর্যন্ত নিয়েছেন? মন্দ আচরণ তো দূরের কথা। কর্কশভাষীকে আইশা রা অভিশাপ দিয়েছেন বিপরীতে রাসূল সা সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করলেন…কেন? – এগুলোর পরের ফল আমরা সবাই জানি, রাসূল সা এর এরুপ উসওয়াতুল হাসানার মাধ্যমে যে মাকারিম আল-আখলাক এসেছে এবং এর মাধ্যমে কোন উদ্দেশ্যের দিকে চলেছে সেই ইসলামী সমাজ—সেটাও দেখেছি।


সুতরাং ফিকহ-কেন্দ্রিক মতভিন্নতার কারণে উদ্দেশ্যকে এড়িয়ে যাওয়া বা এ মতভিন্নতা যখন আপনাকে ইসলামের উদ্দেশ্য থেকে পিছিয়ে রাখে, বিরত রাখে, মন্দ পথে নিয়ে যায় তখন আপনি হবেন মহা ক্ষতিগ্রস্থদের একজন। তাই সালাত, সাওম, হাজ্জ ইত্যাদিতে এসবের নিয়মের সাথে মৌল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে চলতে থাকুন। আপনার সালাতে যদি খুশু, তাকওয়া, ইহসান না, মন্দ কাজ থেকে বিরত না থাকতে পারেন, ফাহিশা কাজ থেকে বিরত না থাকতে পারেন, তবে মূল এবং উদ্দেশ্য ব্যর্থ। আপনার জাকাতের মাধ্যমে সম্পদের পবিত্রতা না আনলে জুলুম করলেন আপনার প্রতি, মানুষের প্রতি—আপনি পবিত্র হতে পারবেন না। আপনার হাজ্জ করার পরেও যদি অন্যকে কষ্ট দেন, তাওহীদের বিপরীতে তাগুতের আনুগত্য করেন, ঝগড়া করেন, তাকওয়া অবলম্বন না করেন, তবে মৌলিক জায়গায় সমস্যা এবং উদ্দেশ্যও থাকবে না। পারস্পারিক ব্যবহারে অন্যদের সাথে যদি সম্মান দিয়ে কথা বলতে না পারেন, আপনার আন্দোলন, মাযহাব বা মানহাজের মতভিন্নতার কারণে যদি তিক্ততায় নিয়ে যায়, স্কলারদের নামে গীবত ও বুহতান করেন, নিজদেরকে শয়তানের চিহ্ন বড়ত্বের কারণে অহংকার দেখান—তবে মৌলিক উদ্দেশ্যই থাকে না— জান্নাত আর আল্লাহর দীদার সেটাতো নিয়ম এবং উদ্দেশ্য দুটোর সমন্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহর দয়ার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আবার একটু ভাবার সুযোগ হবে কি আমাদের এতদিনকার জীবনের ইসলাম পালনের মৌলিক সমস্যা মেটাতে?


আল্লাহ  বলেন – “রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক, আর আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তি দাতা”। (সূরা হাশর-৭)

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের নির্দেশ দিলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে কোন এখতিয়ার থাকে না, আর যে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয় সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টটায় পতিত হয়”।(সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৬)

“তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর”।(সূরা আনফাল, আয়াত: ১)

“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দিবেন, আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু”। (সূরা আলু ইমরান: ৩১)

“তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মাঝেই রয়েছে উত্তম আদর্শ, এটা তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। (সূরা আহযাব: ২১)


…বিশুদ্ধ নিয়মে না যাওয়াটা পথভ্রষ্টতা আর কিয়ামাতের দিন হাওজে কাওসারের পানি না দিয়ে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এক শ্রেণির মুসলিমদেরকেই; যাদের জন্য শাস্তি রয়েছে প্রচন্ড। আর এসকল বিশুদ্ধ নিয়মের ক্ষেত্রে ‘মাকারিম আল-আখলাক’ এর পূর্ণতার উদাহরণ আমরা নিয়ম ও উদ্দেশ্য দুটোর সমন্বয়ের মাধ্যমে দেখি ‘উসওয়াতুন হাসানা’-মানবজাতির জন্য উত্তম আদর্শ নবী মুহাম্মাদ সা এর জীবনীতে। সুতরাং নিয়ম যেমন সুন্নাহ মোতাবেক হবে তেমনি এসব নিয়মের মাধ্যমে উদ্দেশ্যকেও বাস্তবায়ন হতে হবে…কারণ হেদায়েত দুটোর সমন্বয়ে এবং ইসলামের সকল ইবাদাহর নিয়মের ভেতরের উদ্দেশ্যসমূহের বাস্তবায়ন করে চূড়ান্ত হেদায়েত দেখিয়ে দিয়ে গেছেন ‘উসওয়াতুন হাসানা’য় ‘মাকারিম আল-আখলাক’কে বাস্তবায়ন করে।


হাদীসে কুদসিতে রাসূল সা বলেন; আল্লাহ বলেন; আমি যদি দুনিয়াকে মশার একটি ডানার সমপরিমাণ গুরুত্বও দিতাম তবে একজন কাফিরকেও খাওয়াতাম না। সুতরাং দুনিয়া এত তুচ্ছ বিষয় আর আখিরাতে এর তুলনায় সবই…সুতরাং আমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনে যেন ব্রুতি হই এবং সুন্নাহ(নিয়ম) পদ্ধতিতে আল্লাহর উদ্দেশিত বিষয়গুলো অর্জন করতে পারি। আল্লাহুমা আমীন।


সর্বশেষ দুইটি হাদীস দিয়ে শেষ করি…আর্টিকেলের মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে।


হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, এক নারীর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ, সে বেশি বেশি (নফল) নামায পড়ে, রোযা রাখে, দুই হাতে(প্রচূর পরিমাণে) দান করে। কিন্তু যবানের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় (তার অবস্থা কী হবে?)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে যাবে। আরেক নারী বেশি (নফল) নামাযও পড়ে না, খুব বেশি রোযাও রাখে না আবার তেমন দান সদকাও করে না; সামান্য দু-এক টুকরা পনির দান করে। তবে সে যবানের দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না (এই নারীর ব্যাপারে কী বলেন?)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে জান্নাতী। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৬৭৫; আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ১১৯)


প্রথম মহিলা প্রচূর নিয়ম পালন করতো কিন্তু এসব কিছুর উদ্দেশ্য? আল্লাহর উদ্দেশ্যকে সে পালন করতে পারেনি এসব নিয়মের মাধ্যমে… ফরজের পরেও এতো বেশি নফল সালাত আদায় করতেন, ফরজ জাকাত এর পরেও এত প্রচূর দান করতেন যে সে প্রসিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল…কিন্তু বিপরীতে কি পেল সে? জাহান্নাম। কারণ?—এত কিছুর যে উদ্দেশ্য ছিল বিপরীত কাজ —কষ্ট দেওয়া। যা আল্লাহর উদ্দেশিত পথের বিপরীত।


একবার রাসুলূল্লাহ (সাঃ) তাঁর পাশে উপবিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)কে বললেন-“তোমরা কি জানো,নিঃস্ব কে ?” সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন-আমাদের মধ্যে তো নিংস্ব তাদেরকে বলা হয়,যাদের কাছে ধন- সম্পদ,টাকা-পয়সা না থাকে। তখন রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন-“প্রকৃতপক্ষে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিংস্ব সে,যে কিয়ামতের দিন নামায,রোযা,যাকাত, সবকিছু নিয়ে উঠবে,কিন্তু তার এ কর্মগুলো থাকবে যে,সে দুনিয়াতে কারো সাথে মন্দ আচরন করেছে,কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে,কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে,কাউকে আঘাত করেছে,কাউকে খুন করেছে ইত্যাদি,তাই এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার কিছু নেকী একে দিবে,কিছু নেকী ওকে দিবে। এভাবে দিতে দিতে বান্দার হক আদায়ের পূর্বে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়,তাহলে এই হকদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”(মুসলিম)


‘নিংস্ব’ বলা হয়েছে অথচ তাঁর নেকিও আছে- সালাত, সাওম, জাকাত সবই পালন করতো। দেখা যাচ্ছে এসব নিয়ম পালনের মাধ্যমে কিছু নেকিও পেয়েছে – কিন্তু এসবের উদ্দেশ্য? সালাত, সাওম ও জাকাতের উদ্দেশ্যগুলো (আর্টিকেলের প্রথমদিকে লেখা হয়েছে) আসেনি…তাহলে লাভ কী হলো? নাহ—উদ্দেশ্য না আসলে জাহান্নামই আসবে—সালাত, জাকাত, সিয়াম পালনের পরও এবং এদের কিছু সাওয়াব থাকা সত্বেও।


ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্যগুলোকে উপলব্ধির জন্য কিছু সময় হবে কি পুনরায়?

Some For Further study

  1. Islam is all about Good Manners – Majed Mahmoud
https://www.youtube.com/watch?v=XtgtGE8nxpM 
  1. কার কাছ থেকে দীন শিখছেন সে ব্যাপারে সতর্ক হন – শাইখ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
http://tinyurl.com/q2bhc37
  1. The Goals of Islamic Laws – Dr Tariq al Suwaidan
https://www.youtube.com/watch?v=2bKtWiJ0oTI 
  1. Now Focus On Your Character – Dr. Mufti Abdur-Rahman ibn Yusuf Mangera
http://tinyurl.com/mb7h22h 
  1. Etiquettes of The Students Of Knowledge – Shaykh Dr. Yasir Qadhi
http://tinyurl.com/n22a2zl
  1. Kamal el Mekki – Acting upon Knowledge: Why do we not apply what we Learn
http://tinyurl.com/l37nf45
  1. Islam: A Comprehensive Introduction: An English Translation of Mizan – by    Javed Ahmed Ghamidi
http://www.al-mawrid.org/pages/dl.php?book_id=82
  1. Foundations of Faith | Nouman Ali Khan
https://www.youtube.com/watch?v=dkhuSgi3maA
  1. Relationship with Others – Yassir Fazaga – Faith in Action
https://www.youtube.com/watch?v=igBr4gGfQNc
  1. The Heart of Islam: Enduring Values for Humanity – Dr. Seyyed Hossein Nasr
http://tinyurl.com/nb5g7mq 
  1. ইসলামের সামাজিক আচরণ- আইয়ুব হাসান
http://www.amarboi.org/book/detail/346 
  1. ইসলামের স্বর্ণযুগে সামাজিক ন্যায়নীতি সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ – (র)
http://tinyurl.com/ngyot3e 
  1. ‘মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ সা. – নঈম সিদ্দিকী
http://tinyurl.com/qjg5444
  1. রিয়াদুস সালেহীন
http://www.icsbook.info/1866/shibir


যেকোনো সাজেশন – alsabanow13@gmail.com
আর্টিকেলটির Pdf লিংক – http://tinyurl.com/o22x6n8