Friday, February 6, 2015

অর্ধনগ্ন নারী ও একজন মুসলিম যুবক ;দাওয়ার সর্বোচ্চ মূলনীতি


বিসমিল্লাহীর রাহমানীর রাহীম

আমেরিকার একজন ব্যক্তি। যিনি ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারক। যুবক বয়সের এই ধর্ম প্রচারকের বাস্তববিক গল্পটি তার-ই।

তিনি কোন একদিন যাত্রাপথে লিফটে উঠলেন। কোন এক ফ্লোরে লিফট থেমে গেল। একজন মেয়ে উঠলো লিফটে-যে ছিল অর্ধ নগ্ন। ছেলেটি তার দৃষ্টি নিম্নগামী করে নিল-মেয়েটির দিকে একটুও তাকাল না। মেয়েটি অস্থিরতা প্রকাশ করল, বিরক্ত হল। জীবনে এই প্রথম কেউ তার দিকে তাকাচ্ছে না !!

মেয়েটি সেই যুবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে, উচ্চ শব্দও করছে আকৃষ্ট করার জন্য। লিফটের ভেতরে কেবল তারা দু’জনই ছিল। কিন্তু ছেলেটির দৃষ্টি ছিল অধগামী; নিম্নমুখী দৃষ্টি।যুবক ছেলেটি কোন কথাও বলল না। লিফট থেমে গেল কিন্তু মেয়েটি নামল না। মেয়েটি আরো উপরে যেতে ইচ্ছুক হল। যখন ছেলেটি উপরে গিয়ে নামল, মেয়েটি ছেলের পেছনে পেছনে নেমে গেল। নেমে গিয়ে মেয়েটি কথা বললঃ

হেই ?! দেখুন,আমি অনেক রাগান্বিত হয়েছি আপনার উপর- আমি কি খুবই খারাপ !, এতোটাই নোংরা আর কুৎসিত যে আমার দিকে একটু তাকাতে ইচ্ছে হয় না ?!

এবার ছেলেটি কথা বলল- দেখুন বোন, আমি একজন মুসলিম এবং আমি প্রকৃতপক্ষেই আপনাকে অনেক সম্মান করি আর এ কারণেই আমি আপনার দিকে তাকাইনি। আর আমার স্ত্রী আছে।

আর আমি আপনার দিকে তাকিয়ে আমাকে এবং আপনাকে অসম্মান করার ইচ্ছা পোষণ করি না।

বোন, আমি আপনার দিকে তাকিয়ে কী পাবো ? এবং এভাবে ছেলেটি খুব সন্দরভাবে বর্ণনা করে বুঝালো মেয়েটিকে।

এবার মেয়েটি ঐ মুসলিম যুবকটির নাম্বার চাইল। এবং সম্মানের সাথেই ছেলেটি তার নাম্বারটি দিল।  ছেলেটি গভীরভাবে ভাবল- আমি অন্য মুসলিম ও মুসলিমাদের তার সংস্পর্শে এনে তাকে আরো সুন্দর পন্থায় বুঝাতে পারি।

কিছু সময় পর মেয়েটি ইসলাম গ্রহন করল। সুবহানাল্লাহ !

এবং মেয়েটি বলল – Islam has liberated me, from being a person who can’t leave the home without half an hour in front of the mirror, without spending on different types of designer clothing. Islam has liberated me, I just put on a black cloak and I walk out, and it doesn’t have to be black but the dark colors are better because it makes you less conspicuous.

-- মুফতি ইসমাইল মেংক

উত্তম চরিত্র দাওয়াতের সর্বোচ্চ মূলনীতি


আমরা কি পাই এই লেখা থেকে ?

একজন মুসলিম যুবকের বাস্তবিক ও ইসলামের বুদ্ধিমত্তাসূলভ জ্ঞানের দৃষ্টান্ত। আমরা অনেকেই জানি না যে আল্লাহ একজন মানুষকে কতটুকু সম্মানিত করেছেন !! আর এই অজ্ঞতা থেকেই অন্যের সাথে জেনে বা না জেনে অনেক মন্দ ব্যবহার করে থাকি।যার কারণে অসংখ্য মানুষ সৎ পথের দিকে আসার উন্মোক্ততা থেকেও অনেক দূরে সরে যাচ্ছে হয়ত ।
একটিবার কি ভেবে দেখেছেন-আল্লাহ নিজ হাতে যাদের সৃষ্টি করেছেন আমরা তাদেরকে অসম্মানিত করবো কীভাবে ? আল্লাহ বলেন

“আর আমি অবশ্যই বনি আদমকে সম্মানিত করেছি”

-- সুরা বানী ঈজরাইল – ৭০

একটুও কি ভাববেন না যে আল্লাহ যেখানে একজন মানুষকে এত সম্মান দিয়েছেন সেখানে আমি তাকে কেন অসম্মানিত করব ? কেন তাকে না জেনে দূর্ব্যবহার করে ‘রাহমা’ থেকে বঞ্চিত করব ? এর দায় কি অজ্ঞতার কারণে আমার উপরই পড়বেনা ?

রাসুল সা. বলেন –

“সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার, যে তার পরিবারের উপর রহম করে না আল্লাহ তার উপর রহম করবেন না।“

--- এই মেয়েটি অর্ধ নগ্ন হতে পারে, কিন্তু সে যে সঠিকভাবে কোথাও দাওয়াত পেয়েছে তার কি কোন ধারণা আছে আমাদের ? তবে কেন আমরা না জেনে মন্দকে মন্দের মত করে ব্যবহার করে তাকে আরো মন্দের দিকে ঠেলে দিব ? মন্দকে মন্দ দিয়ে নয় , ভালো দিয়েই পরিবর্তন করতে হয়-এটাই ইসলামের মূলনীতি।

রাসূল সা এর হাদীসের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বুঝতে পারি ইসলামের মুল উদ্দেশ্য কি ? রাসূল সা. বলেন –

“নিশ্চয় আমি প্রেরিত হয়েছি মানব চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্য”।

যে ব্যক্তি যে বিষয়ে জানে না তাকে কি সেইজন্য শাস্তি দেওয়া যাবে ? না। তাহলে যে কখনই ভালো কিছুর ছোঁয়া পায়নি তাকে কেন আমরা অবজ্ঞা,নিম্নমুখিতা,অসম্মানিত করে দেখব ? এখন তো আমাদের দায়িত্ব তাকে সুন্দরতম পন্থায় সুন্দরকে উপস্থাপন করা । সুন্দরকে মন্দভাবে প্রকাশ করাও সুন্দরকে অসুন্দরে পরিণত করে। আল্লাহ বলেন –

“এটা আল্লাহর খুবই অনুগ্রহ যে , তুমি লোকদের প্রতি খুবই বিনম্র। যদি তুমি কঠোর ও রুঢ় ব্যবহারকারী হতে, তবে এসব লোক তোমার চতুস্পার্শ হতে সরে যেতো”।

(সুরা আলে ইমরান-১৫৯)

ইমাম গাজ্জালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন –

“নরম-কোমল কথামালা পাথরের চাইতে কঠিন হৃদয়কেও কোমল করে দেয়,

কর্কশ-কঠিন কথাবার্তা রেশমের চাইতে কোমল হৃদয়কেও কঠিন করে দেয
়।”

কিন্তু আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন বিষয় দেখতে পাই যেখানে প্রমানহীনভাবেই শুধুমাত্র ধারণার উপর এমন কিছু কথা বলে থাকে যা ঐ সম্বোধিত ব্যক্তিদেরকে আর কখনই হয়তো এই সব ধারণাপ্রসূত মিথ্যা অভিযোগের কারণে তাদেরকে চিরতরে আমাদের প্রতিপক্ষ ও তারা হেদায়েতের আলোকবর্তিকার আভা থেকে দূরে সরে যাবে।

নাস্তিক-সেকুলারদের ফেইসবুকে/ব্লগে যুক্তিহীনভাবে যেভাবে গালিগালাজ করা হয় তা ইসলামের মূলনীতির বিরুদ্ধেই যায়। মন্দকে মন্দ দিয়ে , সাধারণীকরণ করে(দোষী ও নির্দোষী সবাইকে একই অভিযোগ দেওয়া) যেমন বলা হয় তারা সবাই ফ্রি সেক্স করে, মায়ের সাথে সেক্স করার কথা বলে- অথচ হয়তো দেখা যাবে অনেকেই নতুন সেকুলার হয়েছে,নাস্তিক হয়েছে – অথচ সে নাস্তিক বলেই হয়ত ‘পতিতা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে । আর এই ব্যক্তিকে ‘পতিতা’ বলার কারণে হয়ত আর ইসলামের দিকে ঘুর্ণাক্ষরেও ফিরে তাকাবে না কেবল উত্তম ব্যবহার না করার কারণে, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দেওয়ার কারণে ।

অথচ আমাদের উচিত কি ছিল ?

রাসূল সা. সেটা বলেন – “হয় উত্তম কথা বল নতুবা চুপ থা”।

এই হাদীসের দিকে একটু গভীরভাবে দৃষ্টি দিন ।

1. উত্তম কথা- যাকে উপদেশ দিবেন (সে গ্রহন করলে)তার উপকারে আসবে

2. আর (বাজে কথা থেকে বিরত থাকলে)চুপ থাকা- আমার উপকারে আসবে। দুটোতেই কল্যাণ।

কিন্তু আমরা যেই গালি দিলাম, অভিযোগ দিলাম সেটাও বাজে কথা, সাথে ইসলাম বিরোধীও বটে- আর দাওয়ার মাধ্যমে যেই সওয়াব হত, তা না হয়ে উলটো পাপের বুঝা আমাদের উপর আপতিত হচ্ছে ।(এ কারণেই পূর্ববর্তীরা বলত আগে জ্ঞানার্জন কর)।

মুফতি ইসমাইল মেংক বলেন -

“অন্যদেরকে অপমান করাটা কখনই তাদের সংশোধন করার উপায় নয়, বরং এতে আরো বেশি ক্ষতি হয় এবং তা প্রমাণ করে দেয় যে আমাদের নিজেদেরই সাহায্য প্রয়োজ।”

আর এ কথার উদাহরণ ইসলামের ইতিহাসে অসংখ্য যারা ইসলাম গ্রহন করে সাধারণ মুসলিমদের থেকেও অনেকগুন বেশি ইসলামের খেদমত করেছেন- মুরাদ হফফ ম্যান,মুহামাদ আসাদ,ইমাম সুহাইব ওয়েব, শাইখ হামযা ইউসুফ, বিলাল ফিলিপস,ইনগ্রিড ম্যাটসনসহ আরো অনেকেই। আর পূর্বেকালের ইতিহাস ঘাটলে তো দেখতেই পাই যে ডাকাত থেকে ইসলামের স্কলার হয়েছে।

বাংলাদেশে হয়তো ৩০% এর বেশি কোনভাবেই দাওয়াতী কাজ সম্পন্ন হয়নি। সেখানে স্ট্যান্ডার্ড ইসলামীক মান তো দূরের কথা। যারা ইসলাম নিয়ে কাজ করে তাদের নির্দিষ্ট কয়েকটা সিলেবাস দেখলেই প্রচুর কষ্ট হয়।

বাস্তবিক জীবনে মানুষকে দাওয়াত দিয়ে, কল্যাণমূলক কাজ করে, সমাজের সাথে ভালো কাজের সম্পৃক্ত হয়ে যদি আমরা ইসলামের প্রায়োগিক কল্যাণমুখী দিক দেখাতে পারি তবে ভার্চুয়াল লাইফে হয়ত বা আমাদের এত সময় অপচয় করতে হবে না।

আল্লাহ বলেন - হে ঈমানদারগণ কোন লোকসমষ্টি যেন অন্য কোন লোক সমষ্টিকে উপহাস/বিদ্রূপ না করে । হতে পারে তারা ওদের চেয়ে উত্তম । কোন নারী যেন অপর কোন নারীকে উপহাস বিদ্রূপ না করে । হতে পারে তারা ওদের চেয়ে উত্তম ।তোমরা একে অন্যকে আপমান/insult করো না । একে অপরকে নিকৃষ্ট নাম ধরে সম্বোধন করো না ।ঈমান গ্রহণের পর ফাসেকী নামে খ্যাত হওয়া বড়ই খারাপ কথা । যারা এ থেকে তওবা করবে না, তারাই জালেম -

-- সুরা হুজুরাত -১১

মুসলিমদের জন্যই যদি এই অবস্থা হয় তবে অমুসলিমদের জন্য,যারা দাওয়াত পায়নি কখনো বা পেলেও সঠিকভাবে সুন্দরভাবে ও সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে যৌক্তিক ব্যাখ্যা পায়নি, তাদের ক্ষেত্রে তো এটা আরো ভালো হওয়া উচিত। আর এটা করতে পারলে হয়ত অনেক সুফল বয়ে নিয়ে আসবে।

তারিক রামাদান বলেন -

“আপনি আজকে যা করছেন তা হয়ত আমি পছন্দ করি না, কিন্তু তাই বলে আমি আপনাকে ছোট করবো না। কারণ, আগামীকালের আপনি আপনি হয়ত আজকের আমার চাইতে ভালো হবেন”।-

ইসলাম একটি শ্রেষ্ট ধর্ম যদি এর ব্যবহার বাস্তবিক জীবনে প্রায়োগিক হয়। শ্রেষ্ট ধর্মের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা যদি বাস্তবতায় আমাদের ও মানুষদের উপকারে না আসে তবে তার মাঝে চারিত্রিক শ্রেষ্ঠত্বের কোন ছোঁয়া ও কল্যাণ নেই। তাই আমাদের জানা উচিত –

“আমরা যা শিখছি তা যদি আমাদের বিশ্বাসের উপর কোন প্রভাব ফেলতে না পারে, আমাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যেতে না পারে, আমাদের বিশ্বাসকে আরো মজবুত করতে না পারে… তাহলে এর অর্থ হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্যে, নিয়্যতে ভুল আছে”

– ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস

যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত, সে কল্যাণ থেকেও সম্পুর্ণরুপে বঞ্চিত।

- (মুসলিম)

 একজন মানুষ হয়ত তার পরিবেশের সাথে থেকে, চারিপাশের দৃশ্যাবলী দেখে, মন্দ মুসলিমদের দেখে ফিতরাতের উপর মন্দ প্রভাব ফেলেছে। হয়ত অনেক মানুষ অনেক মন্দ কাজ করে, তাই বলে তাকে অবজ্ঞা করার কিছু নেই...চিন্তা করে দেখুন, ওমর (রা) ইসলামে আসার আগে নারী আর মদ নিয়েই থাকতেন, কত সাহাবীরাই কত ছোট কন্যান শিশুদেরকে হত্যা করেছে, কত ডাকাত ছিল যারা পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছে।  আমরা মানুষের ফিতরাহ জানি না, জানি না তাদের ফিতরাতের উপর কী প্রভাব ফেলেছে কিন্তু আমরা জানি আমাদের যে দাওয়াতী লক্ষ্য দিয়ে আল্লাহ পাঠিয়েছেন সেখানে আল্লাহর দাওয়াত দিতে হবে আল্লাহর দাওয়াতী মূলনীতি দিয়েই।

"আপনার উত্তম চরিত্র আপনার সর্বোচ্চ দাওয়াহ" - উস্তাদ নুমান আলী খান
 আমাদের চারিপাশের লোকজন আমাদের অন্তরের ভেতরকার বিশ্বাস দেখে না কিন্তু আমাদের বাহ্যিক আখলাক বা উত্তম চরিত্র দিয়েই আমাদের ভেতরকেও বুঝতে চেষ্টা করে। আমাদের বাহ্যিক চরিত্র যদি উত্তম না হয় তবে আমাদের ভেতরের বিশ্বাস যতই উত্তম হোক না কেন, সেটা তারা গ্রহণ করবে না। আল্লাহ আমাদের উত্তম ব্যবহারকারী হওয়ার তাওফীক দিন। 

আমীন।