Wednesday, October 17, 2018

“আল-ফাতিহা” (তাফসির আল শারাওয়ী)

ইমাম শারাওয়ী খুবই উচুমানের আলেম ছিলেন। তাফসিরের জন্য তো অনন্য ছিলেন।
সহজ, যুগোপযোগী, জীবনঘনিষ্ঠতা, আয়াত ও সূরার শৃঙ্খলাপূর্ণ ধারাবাহিকতা, চাতুর্মুখিক জ্ঞানের আলোকে প্রতিটি আয়াতকে ব্যাখ্যা করে আমাদের অন্তরের রুহানি পুষ্টি তৈরি করেছেন।
বাংলাভাষায় একটি পরিবর্তনের সূচনা করবে তাফসিরের ক্ষেত্রে। আনবে গভীরতা ও নতুনত্ব।
এক.
আল্লাহকে প্রাথমিকভাবে চেনা, ভালোবাসা ও সুন্দররূপে ইবাদাহ করার জন্য যেটির সাথে সর্বপ্রথম পরিচয় দরকার সেটি হল সূরা আল-ফাতিহা (রব, আর-রাহমান, আর-রাহীম ও প্রতিদান দিবসের মালিক)। অথচ আমরা বেশিরভাগ সময়েই অন্যের কাছে আল্লাহর ভিন্ন পরিচয় উপস্থাপন করি, ভিন্ন তথ্য দিয়ে। পুরো বইটি আমাদের শুধু সূরা ফাতিহার সাথে অনন্য অসাধারণভাবে পরিচিত করাবে ইন-শা-আল্লাহ।
দুই.
বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যা, দর্শনসমস্যার বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাখ্যা এবং আধুনিক ভোগবাদিতার মুখোস উন্মোচন করে এমনভাবে চাক্ষুস উদাহরণ দেয়া হয়েছে এখানে যা থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য ব্যাখ্যার সুযোগ থাকে না। ফলে আধুনিক মননের চিকিৎসায় এই তাফসির কাজ করবে নিরাময়ক হিসেবে।
তিন.আল-কুরআন পড়তে ভালো না লাগার অন্যতম একটি কারণ হলো আল-কুরআনকে খাপছাড়া ও বিশৃংখল মনে হয়, এলোমেলো মনে হয় আয়াত ও সুরাগুলোকে। অথচ এটি ভুল ধারণা। আল-কুরআনে রয়েছে আয়াত ও সূরাসমূহের মাঝে ধারাবাহিক সুশৃংখলা, রয়েছে ধারাবাহিক অর্থপূর্ণতা। ফলে এই তাফসির পড়তে গিয়ে আপনার কাছে আল-কুরআনকে পড়তে-বুঝতে আর নিরসভাব-বিশৃংখল-এলেমেলো-খাপছাড়া মনে হবে না ইন-শা-আল্লাহ।
চার.
আর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এর জীবনঘনিষ্ঠতা। আল-কুরআন যদি আমার জীবনের সমস্যা নিয়ে না কথা বলে, আমার কথা না বলে, আমার প্রয়োজনের সমস্যার সমাধান না দেয়, কেবল তাত্ত্বিক কথা বলে, তবে আমি কেন পড়বো এটি? এখানেই এই তাফসিরের অন্যতম সফলতা ‒ যুগোপযোগীতা ও জীবনঘনিষ্ঠতা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।”
//তাফসির গ্রন্থ বিবরণী
বইঃ আল-ফাতিহা (তাফসির আল-শারাওয়ী, ১ম খন্ড)
মূলঃ ইমাম মুতওয়াল্লী আল-শারাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ)
অনুবাদকঃ আহমাদ আল-সাবা
মোট পেইজঃ ১৬০, পেপার ঈষৎ ইয়েলো।//



তাফসির আল-শারাওয়ী এর রচয়িতা ইমাম আল-শারাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী , শিক্ষা ও অবদান
মিশরীয় আলেম ইমাম আশ-শারাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ), যিনি কাব্য ও আরবী সাহিত্যে ছিলেন অনন্য। মাত্র ১১ বছর বয়সে সম্পূর্ণ আল-কুরআন হেফজ করেন।
পড়াশোনা করেছিলেন আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পড়িয়েছেন আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আল-আযহারের গ্র্যান্ড মুফতি ছিলেন। ছিলেন তানতা ইনস্টিটিউটের দাওয়াহ বিভাগের ডিরেক্টর। তিনি সৌদি আরবে হাজ্জ্বীদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতেন। মিশরের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান থাকাবস্থায় তাঁর বড় অবদান ছিলো মিশরে প্রথম (১৯৭৯) ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা ।

তিনি আল-কুরআনের ব্যাখ্যার ওপর একটি টেলিভিশন প্রোগ্রাম (নুরুন আলা নুর) শুরু করেন নিয়মিত, আরবী ভাষী ৭০ মিলিয়ন (৭ কোটি) লোক তাকে নিয়মিত দেখতেন তাঁর সহজবোধ্য অথচ জীবনঘনিষ্ঠ আল-কুরআনের আলোচনাগুলো।

আল-কুরআনের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, মমতা ও গভীর জ্ঞানের লেভেল কতটুকু ছিলো? এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ১৯৯৭ সালে একবার গর্ব করে বলেনঃ “১৯৪৩ সাল থেকে আমি আল-কুরআন ছাড়া আর কোনো বই পড়ি নি” (একাধারে ৫৫ বছর)। তিনি তাঁর গ্রামের শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন এবং ৬০ বছর বয়স্ক হওয়ার আগে তিনি আল-কুরআনের তাফসির শুরু করার সাহস করেন নি।
ইমাম শারাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) এর কুরআন ব্যাখ্যার পদ্ধতি কয়েকটি উৎসের উপর নির্ভরশীল ছিলেন।

প্রথমত, তিনি আরবী ভাষা ও এর সুক্ষ্ণতার পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের উপর নির্ভর করেন।
দ্বিতীয়ত, কুর’আনের সমগ্র বাণীকে সামষ্টিক জ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা দিতেন।
তৃতীয়ত, তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোর প্রাত্যহিক জীবনে বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন এবং এগুলোর সামাজিক ব্যবহারের উপর নজর দিতেন।
আর বিজ্ঞান ও দর্শন চিন্তার অপব্যবহারগুলোকে সমস্ত মানুষের আকলের উপযোগী করে শুধরিয়ে দেওয়া তাঁর অন্যতম একটি অনন্যতা।

যোগাযোগ ঠিকানাঃ
Bookish Publisher (বুকিশ পাবলিশার)
মোবাইলেঃ 01645261821
ফেইসবুকঃ https://www.facebook.com/bookishpublisher/ 

Monday, November 7, 2016

সকল ব্লগ আর্টিকেলের লিংক

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 




প্রেম সম্পর্কঃ কষ্টগুলোর আর্তনাদ এবং ভাঙ্গনের সাইকোলজি 



শরীয়া আইন, ইসলামী রাষ্ট্র জিহাদ (অতীত, বর্তমান ভবিষ্যৎ) – শাইখ . আকরাম নাদভী http://alsabanow.blogspot.com/2015/12/blog-post.html


সুন্নাহর সামগ্রিক ভারসাম্যময় উপলব্ধিঃ তিনটি বই পরিচিতি  



. আমর খালেদঃ আরব বিশ্বে ইসলামী নবজাগরণে তরূণদের আলোক প্রদ্বীপ 
 http://alsabanow.blogspot.com/2015/10/blog-post.html


সিরাহর উদ্দেশ্য; সিরাহ নাকি ফিকহুস সিরাহ? কোনটি প্রায়োগিক, বাস্তবসম্মত প্রাসঙ্গিক? – ২য় পর্ব http://alsabanow.blogspot.com/2015/08/blog-post_55.html


সিরাহর উদ্দেশ্য; সিরাহ নাকি ফিকহুস সিরাহ? কোনটি প্রায়োগিক, বাস্তবসম্মত প্রাসঙ্গিক? – ১ম পর্ব http://alsabanow.blogspot.com/2015/08/blog-post_47.html


সমকালীন বিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ-অশান্তি, তালাক কিছু গোড়ার দৃষ্টিভঙ্গি এবং চক্ষুশীতলকারী পরিবারের ভিত্তি প্রসঙ্গে 


Rules or Essences? নিয়ম নাকি মর্মার্থ? – ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্য কোনটি?
http://alsabanow.blogspot.com/2015/08/rules-or-essences.html


তাদাব্বুরে কুরআনঃ কুরআনের স্বাদ, গভীরতা, মুজিযা প্রজ্ঞার আরেক খনি২য় পর্ব http://alsabanow.blogspot.com/2015/07/blog-post_17.html


তাদাব্বুরে কুরআনঃ কুরআনের স্বাদ, গভীরতা, মুজিযা প্রজ্ঞার আরেক খনি১ম পর্ব http://alsabanow.blogspot.com/2015/07/blog-post_13.html


ছোট্ট বুক রিভিউ - The Best of Productive Muslim               
http://alsabanow.blogspot.com/2015/06/best-of-productive-muslim.html


বই পরিচিতিঃ উত্তর আধুনিক মুসলিম মন              



ইসলাম উপলব্ধিঃ রিসোর্সের সিস্টেম্যাটিক গ্রন্থায়ন             
 http://alsabanow.blogspot.com/2015/04/blog-post.html


নারী ক্ষমতায়ন, অধিকার, সম্মানের মৌলভিত্তি নারীবাদীতাউস্তাযা ইয়াসমিন মোজাহেদ http://alsabanow.blogspot.com/2015/02/blog-post_20.html

ফেইসবুক : লুকানো বিপদ ও শঙ্কা – উস্তাযা ইয়াসমিন মোজাহেদ 
http://alsabanow.blogspot.com/2015/02/blog-post_15.html 

সালাত প্রশান্তি                            



. তারেক আল সুয়াইদান উস্তাদ নুমান আলী খানের ভাষাতাত্ত্বিক মুজিযার অনন্য বর্ণনা http://alsabanow.blogspot.com/2015/02/blog-post_78.html


কোর'আনের কথাঃ আল-কোরআনের উপর বাংলা ভাষায় আধুনিক, প্রাসঙ্গিক, যৌক্তিক, যুক্তিখন্ডন, যুগোপযোগী গভীর আলোচনা                        


কোর'আনের ভাষাতাত্ত্বিক মুজিজার উপর একটি লেকচার, ৭০ জন মুসলিম হওয়া , একজন নুমান আলী খান এবং তাঁর অসামান্য অবদান            

দু'টি ওয়েবসাইট: দুটি বিশ্বকে জানা; ইসলামী স্কলার এবং বৈশ্বিক ইসলামী আন্দোলন(ওয়েবসাইট সিরিজ - ৩)                                                                                        
   http://alsabanow.blogspot.com/2015/02/blog-post_1.html


মাহে রামাদান প্রস্তুতি: উপলব্ধি ও সফল প্ল্যান            



বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে অষ্ট প্রহর                         



একজন ডাকাত, একটি আয়াত এবং একটি রুপান্তর          



ইংরেজী ভাষায় কিছু সেরা ইসলামী সাইট (ওয়েবসাইট সিরিজ - )    



অর্ধনগ্ন নারী একজন মুসলিম যুবক ;দাওয়ার সর্বোচ্চ মূলনীতি    



শাইখ আব্দুন নাসির জাংদা : ইসলামের অনুপম বিশ্লেষণের উজ্জ্বল দীপ্তি 



মুশরিক মুর্তিপুজারীদের প্রতি একটি মশার চ্যালেঞ্জ...পারবে কি খন্ডাতে কস্মিনকালেও?   
http://alsabanow.blogspot.com/2015/02/blog-post_49.html


ইসলামিক স্কলার দাঈদের অসাধারণ লেকচার(Best Islamic Lectures)- ১ম পর্ব


বাংলা ভাষায় কিছু ভালো ইসলামিক ওয়েবসাইট (ওয়েবসাইট সিরিজ - )



Monday, February 1, 2016

প্রেম ও সম্পর্কঃ কষ্টগুলোর আর্তনাদ এবং ভাঙ্গনের সাইকোলজি


সামনেই কিছুটা বড়সড় সুরগোল দেখা যাচ্ছে। প্রত্যাশা সেদিকে এগিয়ে যায়। দেখতে পায় নিথর দুটি দেহ পড়ে আছে। রক্তগুলোও তাদেরকে আকড়ে ধরে পড়ে আছে লাশের পাশে। হয়তো তাদের সাথে এ রক্তগুলোও জীবন্ত-সজীবতার সাথে মৃত্যুকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রত্যাশা কিছুই বুঝতে পারে না। শিশু দুটি হয়তো না খেয়ে পড়ে থাকতে পারে কিন্তু রক্তাক্ত কেন?! পাশেই চিল্লাচ্ছে এক বড়লোক দম্পতি। তারাই বা কেন চিল্লাচ্ছে? শিশুরা তো তাদের সন্তান হওয়ার কথা না। আর তাদের সন্তান হলেও তারা কাঁদছে না কেন?! নাকি তাদের কান্নায় জমাটবাঁধা বন্ধ্যাত্ব এটে দিয়েছে কষ্টোগুলো? প্রত্যাশা আর ভাবতে পারছে না রক্তের জীবন্ত মিছিলে পড়ে থাকা দুটি ক্ষুদ্র দেহের দিকে তাকিয়ে থেকে। হয়তো কোনো পিতামাতার স্বপ্ন ও আশাগুলোও পড়ে আছে এ দুটি শিশুর মধ্য দিয়ে।

প্রত্যাশা এ ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনতে পায় ফারজানার-ই এক খালার কাছে। গ্রাম থেকে আসা গরিব ফারজানার বিয়ে হয়েছিল শফিকুলের সাথে। প্রথম সন্তান হয়েছিল কিন্তু সংসারের অশান্তি লেগেই থাকতো। শফিকুল ফারজানাকে এক প্রকার প্রেমে প্রলোভন দিয়েই বিয়ে করেছিল। ফারজানা বুঝতে পারে অনেক পরে। হয়তো ততদিনে শফিকের দেওয়া মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ফারজানার দেহকে ভেদ করে অন্য কোনো নারীর দেহে পৌছে গেছে। ফারজানা ও শফিকের সাথে যখন বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তখন ফারজানা আরেকটি অনাগত সন্তানের আশায় প্রহর গুনছে। সেই স্বপ্ন ও আশারাই খাদ্যের খোঁজে বড়লোকের হাতের রক্তের খাবারে পরিণত হয়েছে।

ফারজানা কিছুটা শিক্ষিত ছিল। ততদিনে সে প্রেমের সাইকোলজি, অবৈধপন্থা ও এর চাহিদা-ফল এবং জীবনের বাস্তবতা বুঝতে শুরু করেছিল, বিচ্ছেদের পর এক অশান্ত মায়ের সন্তানদের অনাগত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। দায়িত্ব না নিয়ে যদি কেউ প্রেম করে, শরীর ভোগ করে, সে এই অবৈধ সুবিধাদী যেমন একটি মেয়ের কাছ থেকে নিচ্ছে, তেমনি এই অবৈধ সুবিধাদী নেওয়ার জন্য হাজারো মেয়েকে প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, ভাঙ্গতেও পারে। কেননা এরকম ‘দায়িত্বহীন সম্পর্ক’, ‘ভোগ’ ও ‘অবৈধ’ সম্পর্কে কিছুই ‘নৈতিক’ ও ‘বৈধ’ থাকে না। তখন সম্পর্কগুলোর ভেতর থেকে সুবিধা ও ভোগ; এসব শেষ হলেই চলে যায় এ সম্পর্ক। তখন শফিকরা ছুটতে থাকে অন্য কোনো মেয়েকে আশা দিতে, স্বপ্ন দেখাতে। কিন্তু সেটাও দায়িত্ব না নিয়ে, অবৈধভাবে – কেবল সুবিধাটুকু পাওয়া পর্যন্ত। এটাই ‘দায়িত্ব’ ও ‘নীতি’ এড়িয়ে সুবিধা আদায়ে শফিকদের সুবিধা ও ফারজানাদের অসুবিধা! পূর্ব সম্পর্ক ভেংগে যায়, কিন্তু একটি মেয়ে সেখানে কিছুই করতে পারে না। কারণ অবৈধ ভোগের মাঝে নৈতিকতা, বৈধতা ও যৌক্তিকতা খাটে না। অবৈধতার মাঝে আমরা বৈধতা খুঁজি না; খোঁজাটা বোকামীও বটে।

আবেগের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে অবৈধতার মধ্য দিয়ে যখন আমরা বাস্তবে ফিরে আসি, তখন আমাদের ক্ষতি অনেক বেশিই হয়ে যায়। ফারজানার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। তাই তারও সাইকোলজি অনেকটতা শানিত হয়েছে। জীবনের সাথে আবেগ মেশানো ও নীতিবর্জিতার ফল বাস্তবিকতায় বড় কঠিন, আবেগে যতটাই রুমান্টিক মনে হোক না কেন কবির ছন্দে; সেটা বাস্তবতায় ফিকে বুলি আর আঁধার পথে ছড়িয়ে থাকা কাটার রাস্তায় হাটার মতো।
ফারজানার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনগুলো প্রেমের ভেতরকার শত প্রতিশ্রুতির বুলি ও বিয়ে পরবর্তী বাস্তবতার মাঝে বিস্তার ফারাকের সাইকোলজি বুঝে ওঠতে চায়। সে আশা খুঁজে পায় এ চিন্তন ফলের ভেতর দিয়ে রক্তিম আকাশের ডুবন্ত সূর্যের মেঘভেদ করা সোনালি আলোকের ঝলকানিতে। সেও তাই স্বপ্ন দেখে কেউ হয়তো আর তার মতো কষ্টের ভেতরে অবৈধতার মধ্য দিয়ে সুখ খুঁজতে গিয়ে গভীর খাঁদে পড়বে না।
সে দেখতে পায় ভালোবাসা আসে Heart থেকে। সেখানে Brain এর জায়গা অনুপস্থিত। তাই ভালো মন্দ বিচার এখানে কাজ করে না। Heart এর কাজ সত্য-মিথ্যা, প্রলোভন, ভালো-মন্দ এগুলোর মাঝে পার্থক্য করা নয়। এগুলো ব্রেন এর কাজ। তাই যখন ব্রেনকে বাদ দিয়ে আমরা Heart দিয়ে প্রেম করি, তখন ভালো-মন্দ বিচারবোধ আমাদের মাঝে থাকে না। কিন্তু আমরা যখন ব্রেন ও এর চিন্তা থেকে শিক্ষা নেই, তখন আমরা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয় করতে পারি, এড়াতে পারি অনাগত অনেক ক্ষতি, আশংকা ও বিপদাপদ।
ফারজানা তার জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সময়ের পূর্ব-পরবর্তী বুঝতে শিখলো, এগুলোর সাইকোলজি ও বাস্তবতাও বুঝে নিল।

ফারজানা এখন বাস্তবতায়। এখন সে Heart দিয়ে চিন্তা করে না, ব্রেন দিয়ে চিন্তা করে। সে বুঝতে শিখেছে ‘দায়িত্ব’ ও ‘বৈধ’-‘অবৈধ’ হলো ব্রেনের কাজ, যুক্তির কাজ, ধর্ম ও নীতির কাজ। এক সময় সে শফিকের শত প্রতিশ্রুতিকে আকাশ ছোঁয়া প্রত্যাশায় রুপ দিয়েছিল। বিয়ের পর বাস্তবতার সাথে সেগুলোর মিল খুঁজে পায় না। Heart এর আবেগ থেকে সে এখন সাংসারিক বাস্তবতায় এসেছে, ব্রেনের জগৎ তার এখন খোলা। কিন্তু আবেগকে প্রথমে রেখে ব্রেনের কাজ চলে না। সে এটা এতদিনে বুঝতে শিখেছে জীবনের চরম বাস্তবতায়, যখন আবেগের জায়গাগুলো ফিকে হয়ে গেছে শফিকের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির সাংসারিক ভঙ্গুরতায়, তখন ব্রেন চলে এসেছে সম্মুখে। সত্য-মিথ্যা ও বৈধ-অবৈধ বিচারিক দৃষ্টি এখন পষ্ট। কারণ সে এখন ব্রেনকে আগে রেখেছে, সে এখন বাস্তবতায়। আবেগের জায়গা ফুরিয়ে গেছে। চিন্তাগুলো বাস্তবতায় ও ব্রেনের বিচারিক ক্ষমতায় শানিত হয়, আশংকামুক্ত থাকা যায়।

আজকের ভোগবাদি দুনিয়ায় প্রেমটা ভোগবাদিতার একটা রুপ মাত্র। সে এই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সম্পর্কের ভেতরের কষ্টের তীব্রতা ও গভীরতা। তার যখন ৪ বছরের মাথায় ছিন্ন ও সাংসারিক বিচ্ছিন্নতা-ভঙ্গুরতায় চলেছে এবং সবশেষ বিদায় হয় এই সম্পর্ক, তখন সে পরিবার বিজ্ঞানীদের কিছু গবেষণা হাতড়াচ্ছিল। পরিবার বিজ্ঞানীরা বলেছিল, তারা গবেষণা করে দেখেছে, যেসব দম্পতিরা বিয়ের পূর্বে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়, তাদের অধিকাংশের বিয়ে ৩ বছরেই ভেঙ্গে যায়।

কেন ভেঙ্গে যায়? ফারজানা এই সাইকোলজিও বের করে ফেলেছে জীবন্ত কষ্টগুলোর ক্ষত থেকে ।

সে একজন ছেলে মনো-দৈহিক বিজ্ঞানীর কাছে গিয়েছিল। সেই মনোবিজ্ঞানী কয়েকটি কথা শুনেই গড়গড় করে কিছু কথা বলে দিয়েছিল। প্রশ্ন ছিল ভালোবাসা, শরীর, বিয়ে, সাংসারিক তিক্ততা ও বিচ্ছেদ পরবর্তী বিভিন্ন কষ্ট নিয়ে।

মনোবিজ্ঞানীর করা কিছু প্রশ্ন ছিল ফারজানার প্রতি।

(১) প্রেমের সময় শারীরিক সম্পর্ক করেছিল কিনা?
(২) ছেলে ফারজানাকে প্রচূর স্বপ্ন দেখাতো কিনা যা তার সাধ্যরও অনেক দূরে?
(৩) এতোটা ইমোশনাল সাপোর্ট দিতো কিনা যা ফারজানা তার প্রতি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে গিয়েছিল এবং এর সুযোগ নিয়েই সে শারীরিক সম্পর্ক করে।

মনোবিজ্ঞানীর কথাগুলো আজও তার কানে বাজে। তার কথাগুলো ছিল এরকম
“ছেলে এবং মেয়েদের অনেক ক্ষেত্রেই সাইকোলজি আলাদা। একটি মেয়ে চায় কেয়ারিং ব্যক্তি, যে তাকে সাপোর্ট দেবে, প্রশংসা করবে, শারীরিক যত্নের প্রতি যত্নশীল হবে এবং তার স্বপ্নগুলো পূরণে সহায়তা করবে। কিন্তু একটি ছেলের প্রথম সাইকোলজি থাকে মেয়ের দেহের প্রতি; সেটা কারো সাথে প্রেম করার ১০ দিনের মাথায়ও করতে পারে আবার ৩ বছর কেটে গেলেও সে যদি মেয়েকে ডিপেনডেন্ট ও বশে আনতে না পারে, তাও সে এই চেষ্টা চালিয়েই যাবে। ছেলেদেরকে এখানে প্রচন্ড ধৈর্যশীল পাবেন। এইখানেই মেয়েরা প্রথম ভুল করে। কাউকে বন্ধুর মত মনে করে, একটু আশার চিন্তায় ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু ছেলে ও মেয়ের সাইকোলজি যে ভিন্ন সেটা মেয়ের সাইকোলজি দিয়েতো আর ছেলের সাইকোলজি বোঝা সম্ভব নয়। একারণেই দেখবেন একটা ছেলে তার গার্লফ্রেন্ডকে সে নিজেসহ অন্যান্য বন্ধুদের দিয়ে ধর্ষণ করে। কারণ দেহ-ই প্রধান আর কাছে। আপনাকে যতটুকু কেয়ার করেছে, সবটুকুই তার প্রতি ডিপেন্ডেন্ট করে দেহ পাবার জন্য। স্বাভাবিকভাবে একটা বাহিরের মেয়ের প্রতি একটা ছেলের দৃষ্টি ও অন্তরকে সেক্স থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়, কখনই।
আপনি ভাবছেন আপনার প্রতি শফিক প্রচন্ড কেয়ারিং ছিল, কিন্তু সেটা আদতেই দেহের প্রতি। তাই আপনার দেহটি যতদিন ভোগ করতে দিয়েছেন, ততদিন সে নিয়েছে। কিন্তু আপনি যখন আপনার সেই আগের কেয়ারিং পাননি, শফিকের দেখানো স্বপ্ন ও বুলিগুলো আপনার কাছে ফাকা মনে হয়েছে ৪ বছরের প্রতিটি বাস্তবিকতায়, তখন আপনি আর থাকতে পারেন নি।

A
সেকারণেই আমরা দৈহিক-মনোবিজ্ঞানীরা কাউকে প্রেম করে বিয়ে করতে বলি না। তার কারণ হলো প্রেম করলে সাংসারিক জীবনের বাস্তবতায় যেসব উপাদান আপনি ফেস করবেন, সেগুলো ভুলেও জানতে পারেন না, জানার সুযোগ হয় না। আমরা ভালো ছেলেদের বৈশিষ্ট বলতে গেলে বলি কয়েকটি গুণ দেখতে

(১) ছেলে ভালো চরিত্রসম্পন্ন কিনা
(২) বন্ধু-বান্ধব ও তাদের চরিত্র কেমন, কাদের সাথে মেলামেশা করে
(৩) ছেলে দায়িত্ববান কিনা।
(৪) আর ক্ষেত্রবিশেষে বড় পরিবার হলে সার্বিক পরিবারের অবস্থা, সামগ্রিক পারিবারিক সহাবস্থান ও চরিত্র কেমন, দেখতে বলি।

আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো এর ঠিক বিপরীত দিকগুলো। কারণ এগুলো আমরা সবাই দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে যেহেতু এগুলো দেখা হয় না, সেজন্য দরকার এগুলোর ঠিক বিপরীতের লুকানো চিত্রাবলী। কারণ এই লোকানো চিন্ত্রাবলী-ই আপনাকে প্রতারণার কৌশল দেখাবে।

মনোবিজ্ঞানী এর বিপরীত জিনিসের প্রতিটি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা শুরু করলেন যেগুলো প্রেমের সম্পর্কে জানা সম্ভব হয় না।

“ভালো চরিত্রসম্পন্ন কিনা। প্রেমের ক্ষেত্রে আপনি জানার সুযোগ পান না যে ছেলেটি ভালো কিনা। কারণ ছেলেটি আপনাকে চায়, আপনার দেহ ভোগ করতে চায়। সেজন্য সে এমন বিষয়াবলী আপনার সামনে উপস্থাপন করবে না যা কিনা আপনার মাঝে সন্দেহ জাগায়। প্রেমটা যদি আপনার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর মাধ্যমে আসে, জেনেই রাখতে হবে যে সে আপনার বান্ধবীকে হাত করে, পটিয়েই আপনার দিকে এসেছে। সুতরাং সেদিক থেকে কোনো দিনই বাজে সিগনাল পাবেন না। আর যেসময় আপনি সমস্যায় পড়ে আপনার বান্ধবীকে দোষ দিতে যাবেন, সেও বলবে ‘তুই ই তো তার সাথে সারাদিন থাকিস, সারাক্ষণ কথা বলিস’ তোরই তো ভালো জানার কথা, আমাকে এত দোষ দিস কেন? ব্যাস, বান্ধবীর দায়িত্ব শেষ আর আপনার কষ্টের পালা শুরু।

সে যখন আপনার সাথে দেখা করতে আসে, ডেটিং এ আসে, কোথাও খাওয়াতে নিয়ে যায়, সে কতক্ষণ ধরে ফ্রেশ হতে থাকে এটা জানেন? না। আপনি বলতে পারেন এটা আমাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলবে? তাহলে মনে রাখতে পারেন, যে ছেলে আপনার কাছে আসার জন্য ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট ফ্রেশ হয়, সেই ছেলে রুমে যেভাবে থাকে, তার অপরিচ্ছন্নতার কথা, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার সাথে শেষ হওয়ার আগেই যে চলে আসে, ভেজা থাকে তার আন্ডারপ্যান্ট প্রস্রাবে। সে যখন আপনার সাথে দেখা করতে যায় দেখতে পান সেরা পোষাকটি, সুন্দর ফ্রেশনারের গন্ধে আন্দোলিত সুবাতাস যা আপনাকে অভিভূত করে রাখে, আপনার মনকে প্রভুল্ল করে দেয়। সেই প্রেম জীবনের সমস্ত দিনগুলো ফুরিয়ে বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় যখন ছেলের অভিনয় জীবন থেকে বাস্তবতার জীবন ফিরে আসে, তখন থেকেই ফিকে হতে থাকে থাকে জীবন। তার বাস্তবতা আপনাকে অস্থিরতায় নিমগ্ন রাখে কষ্টগুলোকে স্বাগত জানানোর জন্য। ভালোবাসার কারো থেকে কেউ একটুও কষ্ট সহ্য করতে পারে না। তাই তার পূর্ব জীবনের সাথে এই জীবনের বাস্তবতা যখন আপনাকে কষ্ট দেয়, কিছু বলতে গেলেও কষ্টগুলো কমে না। বাড়তে থাকে দিনদিন। কারণ ছেলেরা আর যাইহোক, মেয়েদের ফাপড় শুনতে রাজি নয়।

আর সবচেয়ে কুৎসিত ও বড় বিষয় হলো সে তার সমস্ত নেগেটিভ বিষয়াবলী গোপন রাখে, সকল পজিটিভ জিনিস আপনার সম্মুখে উন্মুক্ত থাকে। এর জন্যই একটা মেয়ে দেখে স্বপ্নরাজ্য নেমে এসেছে তার কাছে। অথচ বিয়ের সাথে বাস্তবিক জীবনে যখন একটুখানিও নেগেটিভ জিনিস দেখতে পায়, সহ্য হয় না। রাগারাগি হয়। ভালোবাসার মানুষ থেকে কেউ রাগারাগি পছন্দ করে না। ছেলেরা তো নয়-ই। সেখানে একটা মেয়ে হুকুমদাতা হতেই পারে না। ভুল সে করেছে তাতে কি। বিয়ে করেছে তো কি হয়েছে, তার টাকা-পয়সায় অন্যের হুকুম চলবে না। ব্যাস, সবুজ জীবন ধূসরতায় মলিন হতে থাকে।

এসব কারণেই আমরা মনো-দৈহিক বিজ্ঞানীরা বলি যেখানে প্রেমে Blind Heart দিয়ে সব কিছু দেখে, সেখানে আমরা ব্রেন দিয়ে, খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে বলি – ছেলে ভালো চরিত্রসম্পন্ন কিনা”।

মনোবিজ্ঞানী এবার দ্বিতীয় দিকটি বর্ণনা করা শুরু করলেন এভাবে,

“বন্ধু বলতে যে যাদের সাথে সে চলাফেরা করে। কারণ বন্ধুরা একই চিন্তা ও আদর্শের হয়ে থাকে। এজন্য যদি একজন বন্ধু সম্পর্কেও আপনি খুবই ভালভাবে বোঝতে পারেন, সেটাও অনেক বড় বিষয়। কিন্তু প্রেমে সমস্যা হলো, যেহেতু আপনি রুমান্টিকতায় ভোগেন, তাই এগুলো জানার সুযোগ হয় না। আর একটি ছেলে এতই ধূর্ত যে আপনি তার সাথে যখনই দেখা করতে যান, তার বন্ধুরা তাকে সাহায্য করবেই। এজন্য এদের থেকে সত্যিকার তথ্য কখনই পাবেন না। কারণ ঐ ছেলেরাও জানে তাদের বন্ধুর উদ্দেশ্য একটিই- মেয়েটির শরীর। তাদের কমন সাইকোলজির জন্যই অন্য বন্ধুকে বাঁধা দেওয়ার বিপরীতে আরো উৎসাহ দেয়। এর বিপরীতে আপনার যে বান্ধবীকে হাত করে, তার প্রশংসা করে, তাকে গিফট দিয়ে, সুন্দর করে ‘আপু’ বলে আপনাকে হাত করেছে, সেও যেহেতু মেয়ে এবং রুমান্টিকতায় ভুগে বয়সের সাথে আবেগের খেলায়, সেও নারী সাইকোলজি দিয়ে প্রথমেই আচ করতে পারে না এই ছেলেটি শরীর ভোগ শেষেই চলে যাবে এবং তখন একজন নারীর কি অবস্থা হয়। সার্বিকভাবেই প্রেমের রাস্তায় কখনই বন্ধুদের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবেন না বা আপনিও হয়তো তাদের অবস্থা দেখার জন্য ঘুরবেন না। কারণ আপনি Heart দিয়ে দেখেন, ব্রেন দিয়ে নয়। আপনার মোহগ্রস্থতা একজনকে ঘিরে, যে আপনাকে এই মোহের টুপে ফেলতে সবই করেছে, তাই আপনি অন্ধ, আপনার আবেগ এমনিতেই ব্রেনহীনভাবে অন্ধত্বে ঢুবে আছে”।

মনোবিজ্ঞানী কথাগুলো শেষ হওয়ার পর ফারজানা নিজের স্মৃতিতে ফিরে যায়। তার জীবনের প্রতিটি বাস্তবতার সাথে কেমন যেন হুবহু অধ্যায়ে অধ্যায়ে নয়, প্রতিটি শব্দের সাথে আদ্যোপান্ত জীবন্ত মনে হয় কথাগুলো। যেন তার জীবনের পূর্ব ও এখনকার দুংখের জীবন্ত চিত্রফলা একে দিচ্ছে একজন নিপুন চিত্রকলা।

মনোবিজ্ঞানীর কথায় সে ফিরে আসে স্মৃতির গভীর খাদ থেকে। তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস-ও মনোবিজ্ঞানীর অজানা নয়। তার চোখের চিকচিক বালুকনাগুলোও অতি পরিচিত। এ পানি সাধারণ পানি নয় যা তীব্র ঠান্ডায় জমাট হয়ে যায়। এ এমন পানি যা বরফে জমাট বাঁধে না। কেননা সেগুলো হয়তো হৃদয় থেকে আসা কষ্ট বা তীব্র আনন্দের ফুয়ারা হয় এই দুটি চোখ। ফারজানার চোখের চিকচিক পানির সাথে তার চেহারার অভিব্যক্তিই পষ্ট করে দেয় সেগুলো কষ্টগুলোর ফুয়ারা থেকেই বেরিয়ে এসেছে।

মনোবিজ্ঞানী এবার বলতে শুরু করে,
“প্রতিটি সুবিধা নেওয়ার পেছনে থাকে দায়িত্ববোধ। আপনি কেবল সুবিধাই নেবেন কিন্তু দায়িত্ব নেবেন না, সেটা নীতিহীনতার-ই ফল। এজন্য একজন ব্যক্তি যখন বিয়ের মাধ্যমে সম্পর্ককে সামাজিক ও পারিবারিক ভিত্তি করে নেয়, তখন সেখানে ভোগ-সুবিধা ও দায়িত্ব উভয় থাকে। এজন্য এখানে নীতি কাজ করে, আইন চলে। আর নীতিবান এই লোকেরাও সুখে থাকার প্রয়াস পায়। কিন্তু প্রেমে যেহেতু দায়িত্ব নেই, আদতে দায়িত্বহীন নীতিবর্জিত কাজ সেখানে ঘটলে আপনি না পাবেন সামাজিক সহায়তা আর না পারিবারিক সহায়তা। দায়িত্বহীন এমন প্রতিটি পরিণত ভোগেই রয়েছে নীতিবর্জিতা ও অবৈধতা। প্রেম কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বা নৈতিক বৈধ নীতি নয়। সেজন্য এখানে অধিকারের কথা আসে না, আসে না নৈতিকতা বা বৈধ-অবৈধতার কথাও। এজন্য এখানে শারীরিক মেলামেশার পরেও যারা নীতিকথা দিয়ে একটা ছেলেকে আটকাতে চায়, বিয়ের জন্য চাপ দেয়, এদের সমস্যা হলো আবেগের অনুপলব্ধির মধ্য দিয়ে যখন সর্বনাশ শুরু হয়েছে, তখন অবৈধ জিনিসে বৈধতা খোঁজা, নীতিবর্জিতার মাঝে নীতি খোঁজা আবেগের মনস্তাত্ত্বিক রোগে ভোগে পরিণত হয়।
একটি ছেলে যখন বিয়ের পূর্বেই দায়িত্ব না নিয়েই শারীরিক সম্পর্ক করেছে, আপনার কাছে দাবি করেছে আপনার শরীরকে, তখনই আপনার জানা উচিত এই ছেলে বিয়ের আগেও নীতিবর্জিত, চরিত্রহীন আর বিয়ের পরেও একটি কবুলের মাধ্যমেই চরিত্র ঠিক হয়ে যাবে না। এজন্য এই ছেলেকে চিনতে, এর থেকে কষ্টগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে, আপনাকে কমপক্ষে তিনটি বছর সময় নিতে হয় বিচ্ছেদের জন্য!! আদতে বিচ্ছেদের জন্য সময় নেয় না কেউ, সময় নেয় কষ্টগুলো পাবার জন্য। কষ্টগুলো পেয়ে যখন সহ্য সীমার একান্ত বাহিরে চলে যায়, সেই তিক্ততায় বিচ্ছেদ ঘটে। কারণ ছেলে যে নীতিহীন সেটা বুঝার জন্য তিন বছর সময় লাগেনি মেয়েটির, সেটা কিছুদিন পরেই বুঝেছে। ”

ফারজানার স্বপ্ন ছিল, আশাও ছিল। তার ইচ্ছা ছিল ছেলে-মেয়েদেরকে এই মনো-দৈহিক বৈজ্ঞানিক সাইকোলজিস্টের মত বানাবে। অবৈধতার মধ্য দিয়ে শারীরিক সুখের ভেতরে যে কি বাস্তবিক কষ্ট প্রতীক্ষা করছে সেগুলো জানাবে তার মত মানুষদের। সে কেবল চেম্বার বসে থাকবে না, সারা দেশের মানুষকে নিয়ে কাজ করবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ক্যাম্পেইন করবে নারীদের নিয়ে, সচেতনার মিডিয়া হিসেবে তাদের দুটি সন্তানই যথেষ্ঠ হবে। দেশে নারীদের কষ্টগুলোকে সে দেখতে চায় না। কারণ এরাই হয়তো আমাদের কেউ মা, কেউ বা বোন। সেজন্যই হয়তো ফারজানা তার ছেলে-মেয়ের নামগুলো রেখেছিল স্বপ্ন ও আশা। ফারজানার স্বপ্ন ছিল, আশাও ছিল – দেশে একদিন তার স্বপ্ন ও আশাগুলো ফুটে উঠবে। কিন্ত ফারজানার সেই সেই স্বপ্নগুলো ট্রাকের তলায় আর স্বপ্ন ও আশারা মাটির সাথে রক্তে মিছিলে একাত্ব হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

প্রত্যাশাদের মধ্য দিয়েই একদিন বের হবে স্বপ্ন ও আশা। স্বপ্ন ও আশারাই একদিন আজকের নিথর দেহের স্বপ্ন ও আশাদের বাস্তবিক জীবনের নৈতিকতার আইকন হয়ে উঠবে। সেদিন হয়তো ক্ষমতাশীল জালিমদের কাছে বিচার চাইতে হবে না আমাদের। আমাদের বিচার আমরাই করবো, জালিমদের থেকে কোনো সাক্ষী নয়, বরং মজলুমের সাক্ষ্যই চূড়ান্ত।

আর্টিকেলটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে - https://goo.gl/dBpMPt 

Saturday, December 5, 2015

শরীয়া আইন, ইসলামী রাষ্ট্র ও জিহাদ (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) – শাইখ ড. আকরাম নাদভী

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম

এটি মূলত শাইখের একটি কোর্সের ছাত্রের করা সার সংক্ষেপন। শরিয়া আইনের প্রকৃতি, এর অবস্থান কোথায় এবং ঈমান, ইসলাম ও শরীয়া- এগুলোর মাঝে কোনটির গুরুত্ব কোন জায়গায়। ইসলামী রাষ্ট্র কী? ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার জায়গা কোনটি? ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা উপলব্ধিতে আমাদের ভুল কোথায়?। ইসলামী রাষ্ট্র কী কাউকে ভালো মানুষ বানাতে পারে? ইসলামী আন্দোলনে রাষ্ট্র ইসলাম ও সামগ্রিক ইসলাম – এতদুভয়ের মাঝে ভুলগত বিষয়টা কখন প্রবেশ করেছে। জিহাদ কি? শর্ত কী কী? ইত্যাদি। মৌল একটা প্রশ্ন হলো অধুনা রাজনৈতিক ইসলাম আসার পরে ইসলামকে রাষ্ট্রের বিরোধী হিসেবে দেখানো হয়েছে…পূর্ববর্তী সৎ আলেমদের ভূমিকা কি ছিল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, ইসলামকে রাষ্ট্রের বিরোধী শক্তি না করে কি ইসলামের কাজ করা সম্ভব নয়?
Shariah_PosterA3
ভালো মত পড়তে এই পিডিএফটি ডাউনলোড করতে পারেন – https://goo.gl/NqKmKs

পরিচিতি


শাইখ তার বক্তব্য শুরু করেন শহীদ হাসান আল-বান্না, মাওলানা মওদূদী ও শহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রাহিমাহুমুল্লাহ) কে তিনি কতটা গভীর শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করেন সেগুলো হাইলাইট করার মধ্য দিয়ে। নাদওয়াতুল ওলামা আন্দোলনের মাধ্যমে মাওলানা মওদূদীর যেসব কাজ আরবীতে অনুদিত হয় এবং এগুলোই সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। শাইখ আকরাম নাদভী এসব মহৎ চিন্তাবিদদের সম্মান করেন। তিনি এদের অনেক লেখা পড়েছেন, অনেকবার। তিনি ‘মাইলস্টোন’ এর কিছু অংশও মুখস্ত করেছেন। তিনি এদের অনেক লেখা পড়েই আন্দোলিত হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। এসব উল্লেখের কারণ হলো পাঠক যেন এটা ধারণা না করেন যে তার সমালোচনা-পর্যালোচনা পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিকোণের অবকাশ রাখে।

মতভিন্নতা সত্ত্বেও আমাদের ঐক্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার উদ্দেশ্য প্রত্যেককেই আপনার অনুসরণ করানো নয় (শাইখ আকরাম নাদভী এই বিষয়টি প্রায়শ তিনার সেমিনার উল্লেখ করে একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ত্বারোপ করেন যে, যদি কারো উত্তম বক্তব্য বা যুক্তি থাকে তাহলে সে এটা আলোচনা করতে পারে। কিন্তু মানুষের প্রথমে যথাযথহভাবে চিন্তা করা উচিত এবং এরপরে জানার মধ্য দিয়ে একমত হবে অথবা জানার মধ্য দিয়ে ভিন্নমত পোষণ করবে)।

মওলানা মওদূদী, ইমাম হাসান আল-বান্না এবং সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)-রাই সর্ব প্রথম রাজনৈতিক ইসলামকে (Political Islam) ফোকাসে নিয়ে আসেন। তারা উপলব্ধি করত যে ইসলাম হলো একক ও অভিন্ন এবং সার্বিক (Fully Comprehensive) আর এজন্য বিভিন্ন পরিসরে একই ইসলাম প্রয়োগ করা সম্ভব। তারা ব্যক্তিগত পরিসর, পারিবারিক পরিসর, সমাজ ও সরকারকে অভিন্ন হিসেবে দেখতো। এজন্য যখন তারা সবগুলোকে এক করে দেখা শুরু করলো, তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিসরের ওপর ফোকাস দেওয়া শুরু করলো। কারণ হলো তারা মনে করতো ইসলাম যখন ক্ষমতায় যাবে তখন অন্যান্য সব জায়গায় ইসলাম অনুসরণ করা সহজ হয়ে যাবে। এই আইডিয়াটি মাওলানা মওদূদী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মাধ্যমে সুন্দরভাবে এসেছে তার বই “ইসলামের চারটি মৌলিক পরিভাষা” বইতে। যেখানে তিনি ‘ইলাহ’, ‘রব্ব’, ‘ইবাদাহ’ ও ‘দ্বীনের’ বিস্তারিত ব্যাখা করেন।

ঈমান, ইসলাম ও শরীয়া


প্রাথমিকভাবে ইসলামকে উপলব্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আপনাকে যথার্থভাবে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তার চূড়ান্ত আদেশ হলো আপনি অবশ্যই তার ইবাদাত করবেন। আল্লাহ আপনাকে ব্যক্তিগত পরিসর দিয়েছেন এবং এখানে আপনি অবশ্যই ঈমান ও ইসলাম বাস্তবায়ন করবেন। আপনার ব্যক্তিগত জীবন যদি ছোট্ট পরিসরে আবদ্ধ থাকে ও সেখানে যদি পূর্ণভাবে ইসলাম ও ঈমান অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার ইসলাম পরিপূর্ণ। যখন আপনার পরিসর পরিবার বা সমাজ অথবা রাষ্ট্রে বৃদ্ধি পায়, তখন সেখানে ঈমান ও ইসলাম প্রয়োগ করুন। অন্যান্য ধর্ম ব্যক্তিগত পরিসরের বাহিরে যায় না কিন্তু ইসলাম প্রত্যেকটি Aspect এই প্রয়োগ হয়।

ঈমান হলো অদৃশ্য, আল্লাহ, নবী-রাসূল ও জান্নাত-জাহান্নামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এটা বিশ্বাস করা যে আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য ইলাহ নেই। যখনই আপনি ঈমান এনেছেন তখন আপনি একটা চুক্তিতে প্রবেশ করেছেন। এই চুক্তিতে প্রবেশের পূর্বে আপনি চারিপাশে তাকাতে পারেন, আপনার প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু ঈমানের চুক্তি করার পরে আপনাকে অবশ্যই আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। ঈমান আনার পূর্বে আপনি গ্রহনও করতে পারেন আবার বর্জনও করতে পারেন। কিন্তু ঈমান আনার পর আপনার কোন ইখতেয়ার বা ইচ্ছা থাকতে পারে না কেবল পূর্ণ আনুগত্য ব্যতীত।

আপনি আল্লাহ প্রদত্ত্ব পরিসরে আপনার জীবনে ইসলাম প্রয়োগ করুন। এই পরিসর বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনার জীবনের পরিসর অনুসারে আল্লাহর আইন বাস্তবয়ান করাকেই শরীয়া বলে। এই শরীয়া আপনার ব্যক্তিগত পরিসর থেকে রাষ্ট্রীয় পরিসরের সকল লেভেলে হতে পারে। শরীয়ার একমাত্র স্থান হলো ঈমান ও ইসলাম আসার পরের ধাপ।

কুরআন কখনই বলেনি শক্তি-বলে আইন প্রয়োগ কর; বরং কুরআন বলে আইন অনুসরণ/আনুগত্য কর (নিজেদের দিকে ইঙ্গিত করছে, অন্যের দিকে নয়)। এই আনুগত্য ইচ্ছাধীন হওয়ায় পুরষ্কার মেলে। এটা বলা অনুচিত যে মুসলিম শাসক জনগনের ওপর আইন প্রয়োগ করেন। বরং বলা উচিত মুসলিম শাসক নিজে আইন অনুসরণ করে বলেই আইন প্রয়োগ করেন। দুনিয়াবী কার্যক্রমে সেক্যুলার আইন ও শরীয়া আইনের উদ্দেশ্য অভিন্ন; শৃঙ্খলা, শান্তি ও সমাজের উন্নতি। শরীয়া অবশ্য এর বাহিরেও প্রশস্ত কেননা মুসলিমরা সকল পরিসরেই ইবাদাহ করে। আর এজন্যই ঈমান ও শরীয়া উভয়ের প্রতি বিশেষ জোড় দিতে হবে।

শরীয়ার আইনঃ

মানুষ > (শরীয়া) আইন+আনুগত্য > ন্যায়বিচার+শৃংখলা > আখিরাতে নাজাত = আল্লাহর সন্তুষ্টি

সেক্যুলার আইনঃ
 
মানুষ > (সেক্যুলার) আইন+বলপূর্বক প্রয়োগ > ন্যায়বিচার+শৃংখলা > পার্থিব সফলতা = নিজেকে তুষ্ট করা

এদিক থেকে ক্রমধারা হলো প্রথমে আসবে ঈমান, এরপর ইসলাম এবং শেষে শরীয়া। মানুষ এখন ইসলামকে অধিকারভুক্তি হিসেবে নিয়েছে। জরুরী হলো প্রথমে যথাযথভাবে ঈমান অর্জন। এরপর ইসলাম সঠিকভাবে অনুসরণ করা। প্রকৃত ঈমান হলো যখন পার্থিব দুনিয়ার চাইতে জান্নাতের গুরুত্ত্ব বেশি হয়। এই চিন্তার দাবি প্রমাণ হয় কুরআন ও ইবাদাহর প্রতিফলনে।

ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে শাইখ বলেন, যে ইসলামী অর্থনীতির উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন না করে ইসলামকে আমাদের নিজেদের জন্য ব্যবহার করতেছি আমাদের লাভের জন্য।

  • ইসলামী অর্থনীতি অনেক ধনিক দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে
  • এভাবে আমরা শরীয়াকে আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতেছি (যেমন ইসলামী অর্থনীতি নাম দিয়ে)
  • অথচ শরীয়ার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা
  • এভাবে ইসলামী অর্থনীতিকে ব্যবহার করতেছি নিজেদের ধনী বানানোর জন্য (অন্যের কল্যাণের জন্য নয়)

আপনি যখন একবার ঈমান, ইসলাম ও শরীয়া উপলব্ধি করবেন, তখন আপনি কখনই আশা হারাবেন না। আমরা সমাজের অনুসরণ করার জন্য আসিনি, বরং আমাদের সৃষ্টি নেতৃত্য দান ও সমাজের উন্নয়নের জন্য। কিন্তু আমাদের প্রারম্ভিকতা হয় ভুল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে।
  • আল্লাহ আমাদের থেকে ঈমান ও ইসলাম দিয়ে শুরু করতে বলেন কিন্তু আমরা শরীয়া থেকে শুরু করি।
  • আমরা শেষ থেকে শুরু করি এবং এটাই প্রকৃত সমস্যা।
  • আমরা যদি শুরু থেকে আরম্ভ করি ও আত্মউৎসর্গ করি তাহলেই সাফল্য আসবে।
  • আপনি যখন একবার শেষ থেকে আরম্ভ করবেন, তখন নিজেকে আর পরিবর্তন করার সুযোগও থাকে না।
  • এখন আমাদের সত্যিকারভাবেই শুরু থেকে আরম্ভ করা দরকার।

আপনি যদি আপনার ছোট সন্তানকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা পোষণ করেন, তার জন্য হাসপাতাল তৈরি করেন না এবং তাকে ডাক্টার উপাধিতে ভূষিত করেন। এটা করেন না। আপনি তাকে প্রাথমিক অক্ষর শেখান, এরপর প্রাথমিক শিক্ষা, এরপর মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষা এবং সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা দেন।

শরীয়া


আজকের দিনের একটি বৃহৎ সমস্যা হলো প্রাচ্যবিদ (ওরিয়েন্টালিস্টস) ও মাকাসিদের ধারকরা শরীয়া বুঝেন না। মাকাসিদ আস-শরীয়াকে আজকের দিনে সেক্যুলার আইনের ভেতরে নিয়ে অপব্যবহার করা হচ্ছে। মাকাসিদের ভেতর দিয়ে শরীয়াকে সেক্যুলার বানানো হচ্ছে। মানুষের জানা উচিত যে শরিয়া আইন আল্লাহ প্রদত্ত্ব। শরীয়া আইন ও অন্যান্য সমাজের অনেক আইনের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। তাই তারা শরীয়াকে আরব সমাজের রীতি-নীতি ভেতর দিয়ে ইসলামের মধ্যে এনে এক করে ফেলে। তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে শরীয়া হলো স্বর্গীয়-এটা হিজাজ বা ইয়েমেনী আরবীয়দের প্রথা নয়। এটা আসমানী আইন। বিভিন্ন অভয়বের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে সাদৃশ্য থাকতে পারে, তাই বলে শরীয়া আইন ও সেক্যুলার আইন এক নয়। উদ্দেশ্য অভিন্ন হতে পারে (যেমন উন্নয়ন) কিন্তু উৎস ভিন্ন।

“বাইল বাতিলের সাথে ঐক্য গ্রহণ করে
কিন্তু হক কখনই বাতিলের মতাদর্শ বা ঐক্য গ্রহণ করে না” (ইকবালের উর্দূ কবিতাংশ)

আল্লাহর ওপর মনোযোগ দিন। আপনার অন্তরে গন্তব্যস্থল যদি সঠিক থাকে, স্লথ গতির হলেও আপনি সেখানে পৌছাবেন। যদি আপনার চলার গতিপথ না থাকে, তবে দ্রুতগামী ট্রেইনে করেও কখনই গন্তব্যে পৌছতে পারবেন না।

শরীয়া হলো আসমানী। মাযহাব হলো শরীয়া উপলব্ধির মানবিক প্রয়াস। এটা মানবিক প্রচেষ্টা যা শরিয়ার একটি অংশ। এটা ইজতিহাদের অংশে রয়েছে।

যদি শরীয়া না থাকে তাহলে কি হবে?

  • শরীয়ার কাজ হলো জীবনকে সহজ করা।
  • শরীয়া হলো একটি পথ।
  • ঈমান ও ইসলাম ছাড়া শরীয়া স্বর্গীয় বা আল্লাহর আইন নয়।
  • যেখানে ঈমান ও ইসলাম নেই, সেখানে শরীয়া আপনাকে আল্লাহর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করবেই।

আমাদের বুঝতে হবে যে

  • শরীয়া হলো উপায় (mean), আর ঈমান ও ইসলাম হলো উদ্দেশ্য (end)।
  • আপনাকে যেই পরিসর দেওয়া হয়েছে সেই পরিসর উদ্দেশ্য নয়, সেগুলো পথ বা উপায়মাত্র। আপনার পরিসর আপনার উদ্দেশ্য নয়, সেগুলো পথ।
  • এজন্য উদ্দেশ্য ও উপায়ের মাঝে পার্থক্য উপলব্ধি জরুরী – কারণ এর ভুল বোঝাবুঝি ঈমান, ইসলাম ও শরীয়ার উপলব্ধিতে ভুল প্রয়োগ হয়। যেমন শরীয়াকেই ভুলভাবে উদ্দেশ্য ভাবতে শুরু করেছি আর ভুল উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে চলছি।
  • ইসলামী শরীয়া আপনাকে উত্তম মুসলিম বানাবে যেরুপ ব্রিটিশ আইন আপনাকে ব্রিটিশ বানাবে।
  • আইন কাউকে ভালো মানুষ বানায় না, এটা কেবল ভালো হতে সহায়তা করতে পারে।
  • ইসলাম হলো আপনার ও আপনার রবের সাথে সম্পর্ক।
  • আর এজন্য রাষ্ট্র, ব্যাংক ইত্যাদি প্রাইমারি নয়।

রাষ্ট্র ভিত্তিক শরীয়া হলেঃ

  • ঈমান ও ইসলাম না থাকলে।
  • মুনাফিকি ও ট্রিক বাড়বে।
  • সেক্যুলার সমাজে আপনাকে শেখানো হবে কোন আইন ভংগ করা যাবে না; নৈতিকতা ও অন্য কিছুর ব্যাপারে কিছুই বলবে না।
  • রাষ্ট্র যদি ঈমান ছাড়া শরীয়া ভিত্তিক হয় তবে একই কাজ করবে ইসলামী রাষ্ট্রও।
  • উদাহরণস্বরুপ বলা যায় ইসলামী ব্যাংকগুলোর কথা। সেখানে কেবল ঈমান ও ইসলাম ছাড়া ইসলামী ব্যাংকিং চলে, সেকারণে তারা কেবল আইন ভংগ করতে নিষেধ করে।

এভাবেঃ

  • আপনি যদি মানুষকে ঈমান ও ইসলাম দিয়ে প্রস্তুত না করেন তবে শরীয়া অকার্যকর।
  • যেরুপ আমরা দেখি পাকিস্তানে মসলিসে আমাল দল ব্যর্থ হয়েছিল।
  • ঈমান ও ইসলাম ছাড়া ইসলামের বাস্তবায়ন স্বয়ং ইসলাম বহির্ভূত।
  • ঈমান ও ইসলামের পূর্বে প্রাথমিক দরকার ইসলাম শিক্ষা দেওয়া।
  • আইন পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে পারে না।
  • আইন খুবই সামান্য কিছু করতে পারে।
  • এর উদাহরণ দেখুন ভারতের ধর্ষণ সমস্যা।

কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো ইসলামকে আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিকোণের ভিত্তিতে দেখি। আমরা মনে করি কেউ এসে শরীয়া কায়েম করবে আর সকলেই ভালো মুসলিম হয়ে যাবে! এটা কখনই ইসলামের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করবে না।

পাকিস্তান সরকার আপনাকে ঈমান ও ইসলাম শিখাতে বাধা দেবে না। সেটাই করুন। কিন্তু আমরা চাই সরকার সেটা করুক!

শরীয়া কোনো থিওরি নয়ঃ

  • শরীয়াহর বাস্তবায়ন
    • বাস্তবায়ন মানে বাস্তবতা ও প্রাসংগিক হওয়া (pragmatic)।
    • যেমন যখন সঠিক সময় এসেছিল কেবল তখনই মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
  • সালমান রুশদির বিষয়টা দেখুন।
  • শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও মানুষের মনের পরিবর্তন হয়নি।

শরীয়া ও ব্যাপ্তি

শায়খ তার বক্তব্য উপলব্ধির জন্য ইসলাম যেসব জায়গায় প্রয়োগ হবে সেগুলোর কয়েকটি পরিসরের পার্থক্য দেখান। এগুলো হলো সামাজিক পরিসর, পারিবারিক পরিসর, সমাজ ও রাষ্ট্র।

ইসলাম প্রয়োগের জায়গা বা পরিসর আল্লাহ প্রদত্ত্ব। এই পরিসর খুঁজতে হয় না, বরং আপনি যে স্থানে আছেন সেই পরিসরে ইসলামের প্রয়োগই উদ্ভোত পরিসর। এই পরিসর আকস্মিক, স্থায়ী নয়। একজন ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন হতে পারে ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়াই।

ইসলাম হলো মানুষ এবং তাদের রবের সাথে সম্পর্ক। এটা প্রাথমিকভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক শাসন পদ্ধতি নয়। এসব বিষয় ইসলামে আকস্মিকভাবে উপস্থিত হয়।

খৃষ্টানধর্ম ব্যক্তিগত পরিসরেই সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু ইসলামে যত পরিসর বৃদ্ধি পায় সেখানেও ইসলামের প্রয়োগ হয়। আমরা বলি না যে সিজারের জন্য যা তা সিজারকে ছেড়ে দাও আর গডের জন্য যা তাকে দাও (অর্থাৎ ধর্ম ও রাষ্ট্রের আলাদাকরণ)। (We do not say leave what for Caesar to Caesar)

আপনি যখন দুটি জিনিসের মাঝে একটিকে পছন্দ করেন, সেটা হয় আপনার বিবেকের ভিত্তিতে আর এই বিবেক গঠিত হয় ঈমান ও ইসলাম দ্বারা। আমরা যদি কেবল আইন অনুসরণ করি তবে সেটা পূর্ণ আনুগত্য হবে না বরং গভীরতা আসে ঈমান ও ইসলাম থেকে।
আইনের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধির মাধ্যমে বুঝতে পারি যে আইন কাউকে ধার্মিক আনুগত্যশীল মুসলিম বানায় না। ঈমান ও ইসলাম ছাড়া কেবল শরীয়া বাস্তবায়ন অনৈসলামিক ও অর্থহীন। আমাদের দরকার শিক্ষা, সংশোধন ও প্রশিক্ষণ। (Education, Tarbiyyah & Training)

মাওলানা মওদূদী ও সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)-রা ইসলামকে সার্বিকতার ওপর দৃষ্টি দিয়ে সমগ্র ইসলামকে একক হিসেবে দেখেছেন। ইসলাম অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে কীভাবে পূর্ণ হতে পারে সে বিষয়টি তারা দেখেনি। এ চিন্তনের ফলে দাওয়ার ফোকাস হয়ে যায় আইন, অথচ ধার্মিকতা আইন দিয়ে তৈরি হয় না।

সৌদি আরবে সালাতের সময়ে দোকানগুলো বন্ধ করতে হয়। এমনও অনেক লোক রয়েছে আজানের সময় তারা দোকান বন্ধ রেখে ভেতরেই অবস্থান করে কিন্তু সালাত আদায় করে না। আইন তাকওয়া বা ধার্মিকতা তৈরি করে না।

আপনি যদি মানুষকে সালাত আদায়ের জন্য জোড়ারোপ করেন তবে অনেকেই হয়তো সালাত আদায় করবে অযুবিহীনভাবে। শাইখ একটি বিশাল মাদ্রাসায় তার গোচরীভূত গল্প উল্লেখ করেন এখানে। তিনি সেই মাদ্রাসায় ফজরের সালাতে গিয়েছিলেন। তিনি পাশে ফিরে লক্ষ্য করলেন যে কেউ মিস হয়ে যাওয়া অবশিষ্টাংশ সালাত আদায়ের জন্য দাড়াচ্ছে না। শাইখ অবাক হচ্ছেন যে যুবক ছাত্ররা প্রথম রাকাত ধরার জন্য সময় করে চলে আসে। পরবর্তীতে একজন সিনিয়র ছাত্র এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন যে মাদ্রাসার নিয়ম হলো কেউ যদি সালাতে দেড়িতে আসে তবে সে সকালের নাস্তা পায় না। সুতরাং দেড়িতে আসা কেউ মিস হয়ে যাওয়া সালাত আদায় করে না আর ধরাও পড়ে না। আর আল্লাহই ভালো জানে এটা তারা পরবর্তীতে আদায় করে কি না করে। আইন কাউকে তাকওয়াশীল বা ধার্মিক বানায় না।

সকল নবী-রাসূলের আল্লাহর দেওয়া পরিপূর্ণ জীবনবিধান ছিল কিন্তু সকলের রাষ্ট্র ছিল না। এমনকি ঈসা (আলাইহিস সালাম) রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করেনি। ধর্ম সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রবেশ করে আকস্মিকভাবে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে নয়। ধর্মের মূল পয়েন্ট হলো ব্যক্তিক।

আজকের মানুষ যখন ইসলামী সমাজের ইচ্ছা পোষণ করে, তারা কেবল শরীয়ার কথা-ই চিন্তা করে। তারা মানুষ ও প্রতিবেশিকে সাহায্য করার কথা চিন্তা করে না।

জন-মানুষের মাঝে ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর বিশাল সংখক অনুসারী ও সমর্থক ছিল। যারা তার বিরোধী ছিল তারা সিরিয়ার শাসককে এই বলে উত্তেজিত করলো যে তিনি আপনাকে উৎখাত করতে চায়। শাসক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডেকে পাঠালেন। ইবনে তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) তাকে উত্তর দিলেনঃ

“আপনি কি মনে করেন আমি আপনার রাজত্ব চাই? আল্লাহর কসম, আপনার রাজত্ব ও মঙ্গল রাজত্বে যা আছে তার কানাকড়ি মূল্যও আমার কাছে নেই”।

সমাজ ও শরীয়া


খিলাফাঃ মুসলিমদের খিলাফা ছিল কেবল চারজন খলিফার (রাহিমাহুমুল্লাহ)। এমনকি আলী (রাজিয়াল্লাহু আনহু) এর খিলাফা হিজাজ, ইরাক ও উত্তর মিশরে সীমিত ছিল। এর পরবর্তীতে কেবল রাজা ছিল যদিও তাদেরকে খিলাফা বলা হয়। এসব রাজাদের মাঝে অনেক ধার্মিক ও দুনিয়ামূখী রাজাও ছিল।

অনেক এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে মুসলিমদের কেবল দুনিয়ামূখী সেক্যুলার শাসক ছিল যারা সমাজে ইসলামী নীতি জারি রাখতো। সুতরাং মুসলিমদের তখন ইসলামী সমাজ ছিল কিন্তু ইসলামী শাসক বা রাষ্ট্র ছিলো না।
অনেক সময়েই উলামারা বিদ্রোহ করেছিল কিন্তু সর্বদা ব্যর্থ হয়েছিল। ইসলামী শাসক এই পন্থায় কখনই প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

সমাজ ইসলামী ছিল কারণ প্রত্যেক আলাদা আলাদা ব্যক্তির সংস্কারের ওপর ফোকাস দেওয়া হতো। একারণেই সুফিরা এত জনপ্রিয় ও সফল হয়েছিল।

কুরআন কোনো রাষ্ট্রের মডেল দেয়নি কিন্তু পূর্ণাংগ মডেল দিয়েছে কীভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অনুসরণ করতে হবে।
ভুল প্রচেষ্টাই ইসলামকে রাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দে জড়িত করে। আমাদের ভুল প্রচেষ্টাই মুসলিম শাসকদের ইসলামের শত্রুতে পরিণত হয়। আর এভাবে শাসকরা ইসলামকে রাহমাহ হিসেবে না দেখে তাদের প্রতি হুমকি হিসেবে গন্য করে, যা তাদেরকে ইসলামের প্রতি বাঁধা দানের দিকে নিয়ে যায়। আমাদের পূর্বের সামগ্রিক ইতিহাস থেকে দেখি যে বেশিরভাগ ওলামারাই এই পন্থায় যায়নি আর এজন্যই এতো মাদ্রাসা ও খানকাসমূহ বেড়ে ওঠতে দেখি।

ইসলাম প্রাথমিকভাবে পরিসরের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। সামাজিক পরিসর ও রাষ্ট্রীয় লেভেলের পরিসর আকস্মিক। অধিক পরিসর আসার সাথে সাথে বিশ্বস্ততা ও দায়িত্বের আগমন ঘটে।
  • কুরআনের কেন্দ্রীয় বিষয় হলো ব্যক্তিগত লেভেলে, রাষ্ট্র কেবল এখানে সহযোগিতা করতে পারে।
  • পরিবারও আকস্মিক।
  • পরিবার, প্রতিবেশি এসবই আপনার জন্য পরীক্ষা।
  • আপনি বিবাহ করলে আপনার পরিসরও বৃদ্ধি পাবে, এভাবে আপনার পরীক্ষার পরিসরও বৃদ্ধি পাবে।
  • আপনি যদি পরীক্ষার এই বিষয়টা বুঝতেন, তবে রাষ্ট্র এর চিন্তা থেকে পালাতেন (পরীক্ষার পরিসর বৃদ্ধির কারণে) আর একারণেই মানুষকে দেখবেন বিবাহ থেকে দূরে থাকে।

  • ইসলাম প্রত্যেক আলাদা আলাদা ব্যক্তির জন্য হলেও এখানে তাদের লেভেল অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, কারণ

  • কেউ ধনী আবার কেউ গরীব
  • কারো পরিবার আছে, কারো বা তাও নেই
  • কারো ক্ষমতা আছে, কার নেই
  • কারো কিছুই নেই

এভাবে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত লেভেলের পরিসর অনুযায়ী তার পরীক্ষা ও হিসাবে হবে।

রাষ্ট্র ও শরীয়া


মুসলিম ব্রাদারহুড ও জামাতে ইসলাম এতো বেশি ক্ষমতা চায় যে এমনকি তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথেও সমঝোতা করে।

মাওলানা মওদূদী (রাহিমাহুল্লাহ) সর্বদা শিক্ষা দিতেন যে একজন নারী রাষ্ট্রের প্রধান হতে পারে না। কিন্তু পাকিস্তান আইয়ুব খান যখন নির্বাচনে দাড়ালো, জামাতে ইসলামী তাকে এতটা ঘৃণা করতো যে ফাতিমা জিন্নাহকে তার বিরুদ্ধে সমর্থন দিল। মাওলানা মওদূদী (রাহিমাহুল্লাহ) তার তার যুক্তির সমর্থনে চেষ্টা করেছিল এই বলেঃ “আইয়ুব খান একজন পুরুষ; এর বাইরে তার কোনো গুণ নেই। ফাতিমা জিন্নাহর একজন নারী; কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে তার কোনো দোষ নেই”। জামাতের ইসলামীর অনেক সদস্য তার এই কথার পর রিজাইন করেছিল যে তার যে সে যদি একজন পুরুষ ও এছাড়া আর কিছুই না থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দাড়ানোর মতো আমরা কি একজন পুরুষও পাইনি? এই সমঝতা সত্ত্বেও আইয়ুব খান নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল।
অনেক মুসলিম রাজনীতির ওপর এতোটা জোড় দেন যে তারা চিন্তাই করে না ইসলামের সেবা করার জন্য ক্ষমতা অনুসন্ধান করার বাহিরেও অনেক পন্থা আছে।

এমন কেন হয় যে ব্যক্তিগত পরিসরে আমরা অপমানিত হলেও সবর করি কিন্তু সামাজিক লেভেলে আমরা কেবল প্রতিবাদ-ই করি; সবর করি না। মসজিদের ইমামের ওপর যদি কোন মসজিদ কমিটি কর্তৃক অন্যায় আচরণ করা হয়, তবে ইমাম পুরো জামাতকে প্রতিবাদের জন্য উত্তেজিত করবে না। বরং সে সরব ধারণ করবে, অন্যান্য মসজিদ কমিটি বা প্রভাবশালী লোকের সাথে কথা বলবে এবং চিন্তা করবে বাস্তবিক প্রাসঙ্গিকতার সাথে কীভাবে বিষয়টিকে সংশোধন করা যায়। ব্যক্তিগত লেভেলে আমরা সবাই প্র্যাগম্যাটিক (বাস্তবতাবাদী) কিন্তু সামাজিক পরিসরে যেকোনো কর্মই কাজে দেবে বলে যথেষ্ঠ মনে করি।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য হিজরত করেননি। হিজরত করেছিলেন কারণ তিনি অত্যাচারিত হচ্ছিলেন আর আল্লাহর ইবাদাহ করতে পারছিলেন না। আল্লাহর সুন্নাহ হলো আপনি যখন ধৈর্যশীল হবেন তখন তিনি আপনাকে পুরষ্কৃত করবেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মদিনা রাষ্ট্র দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল।

আজকের যুগে মানুষ মনে করে যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ধর্ম ও রাষ্ট্রের আলাদাকরণ। কিন্তু এটা সত্য নয়। রাষ্ট্র ও ধর্ম যদি একই থাকতো তবুও সমস্যা বিরাজ করতো। মূল সমস্যা হলো ধর্মকে এর বাস্তবতা থেকে পৃথকীকরণ। আল্লাহকে আপনার হৃদয় শাসন করতে দিন, রাষ্ট্রকে নয়।

জিহাদ

জিহাদ হলো আল্লাহর জন্য সর্বাত্তক প্রচেষ্টা চালানো।
জিহাদ হলো সর্বশেষ পন্থা যেখানে অন্যান্য সকল উপায় ব্যর্থ হয়। জিহাদ এমন পবিত্র বিষয় যা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। এটা এজন্য নয় যে মানুষ আপনার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে।
জিহাদ ও সহিংসতার ইসলামীকরণের মাঝে পার্থক্য সনাক্ত করতে হবে। কুরআনের প্রকৃত জিহাদ শর্ত সাপেক্ষে কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় (আত্মরক্ষামূলক জিহাদে ভিন্নতা আছে):
১। মুজাহিদিনদের চলাফেরার জন্য নিরাপদ স্থান থাকবে।
২। তারা জিহাদস্থ এলাকায় অবশ্যই শাসকের কর্তৃত্ত্বে একজন আমীরের অধীনে সংগঠিত থাকবে।
৩। সম্ভাব্য বিজয়ের জন্য অবশ্যই রিসোর্স/জনবল থাকবে।
৪। জিহাদ হবে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং যেখানে অন্য কোনো বিকল্প নেই।
৫। তারা তাকে/তাদেরকে উৎখাত করবে সর্বনিম্ন জীবন নাশের মাধ্যমে।

জিহাদ দাওয়ার সম্মুখস্থ বাঁধাকে দূর করে কিন্তু আজকে আমরাই বাঁধা হয়েছি।
মংগলরা মুসলিমদের পরাজিত করেছিল কিন্তু ইসলাম তাদেরকে জয় করেছিল।

সাধারণ নোট

বায়াত ছাড়া জাহিলিয়াতের মৃত্যুর হাদীসটি ইসলামী রাষ্ট্র সৃষ্টি করার জন্য আবশ্যকতা প্রমাণ করে না। হাদিসটি জামাত বা একতাবদ্ধতার গুরুত্ব প্রসঙ্গে। জামাত হলো একজন ইমামের অধীনে ঈমানদারদের ঐক্যবদ্ধ থাকা। যখন এটি থাকবে তখন বায়াত বাধ্যতামূলক। জামাত গঠন নিজেই মুসলিমদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। মুসলিম উম্মাহর ভাঙ্গন একটি পাপ, অপরাধ। ক্ষমতা ছাড়াই ঐক্য হতে পারে।

ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফার জন্য ইসলাম কোনো স্ট্রাকচারড রাজনৈতিক মডেল দেয় নি বা সুনির্দিষ্ট করেনি।

আগামীর পথ

সবকিছুই সর্বদা অতোটা সাদামাটা (Black & White) নয়। ফিকহের কিতাবে আমাদের দারুল ইসলাম (ইসলামী দেশ) ও দারুল হারব (যুদ্ধ দেশ) সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে। কত সংখক মুসলিম দারুল হরব ত্যাগ করবে, হিজরত করবে এবং অন্য জায়গায় বসতি স্থাপন করবে?

সব সময় তৃতীয় পাক্ষিক কিছু উপলব্ধি থাকে যার জন্য আরো গভীর চিন্তার প্রয়োজন পড়ে। দারুল দাওয়াহ (দাওয়ার দেশ) এটাই। সমস্ত বিশ্বকে দারুল দাওয়াহ হিসেবে নিন। সকল নবী-রাসূল বিশ্বকে দারুল দাওয়াহ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। সমগ্র বিশ্বকে আপনার গৃহ হিসেবে দেখুন; কেবল একটি স্থানে সীমাবদ্ধ রাখবেন না।

শাইখ আহমদ সিরহিন্দি, যিনি ভারতের একজন বিখ্যাত মুজাহিদ ছিলেন, তিনি দারুল হরবের এই তৃতীয় পক্ষকে পছন্দ করেছিলেন। সরকারকে পরিবর্তনের দুটি পন্থা আছে। প্রথমটি হলো মুসলিমদেরকে সিংহাসনে নিয়ে আসা যা দ্বন্দকে আবশ্যিক করে তুলে। দ্বিতিয়টি হলো ইসলামকে সিংহাসনে যারা আছে তাদের নিকট নিয়ে যাওয়া। তার সময়ে ভারতের শাসক ছিল মোগল রাজা আকবর, যিনি ইসলামের জন্য কল্যাণকর ছিলো না। তিনি নিজেই নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেন। শাইখ সিরহিন্দি তার প্রভাব খাটিয়ে সশস্ত্র জিহাদের জিহাদের জন্য উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার পরিবর্তে হৃদয়াগ্রী শক্তিশালী চিঠি লিখলেন শাসক আকবর বরাবর এবং তার আশেপাশের প্রভাবশালী লোকদের নিকটে। তিনি নিরন্তর প্রচেষ্টা চালালেন তাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য। এমনকি শাসক তার প্রতি ভীত হলো ও তাকে জেলে ঢুকালো।

শাসকের ছেলে তার প্রতি সদয় হলো এবং শাইখকে মুক্তি দিলো। আকবর মারা গেল, সাথে তার প্রবর্তিত নতুন ধর্মও। আকবরের নিজ পরিবার থেকে আওরঙ্গজেবের আগমন হয় যিনি শাইখ সিরহিন্দির পরিবারের ছাত্রে পরিণত হয়। যখন রাজা আওরঙ্গজেব আলমগীর ক্ষমতায় আসেন, ভারত তখন পুরাপুরি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি ভারতে শরীয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ফতোয়ায়ে আলমগীরি লেখার কমিশন নিযুক্ত করেন এবং ইসলামের জন্য আরো অনেক মহৎ কাজ করেন। শাইখ সিরহিন্দি বিজয়ী হয়েছিলেন, যদিও তিনি তার জীবিতাবস্থায় কাজের ফল দেখেননি।

আপনি কেবলই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে দ্বীন রক্ষা করতে পারবেন না। হয়তো আপনাকে দাওয়াত দিতে হবে অথবা আপনিই অন্য কিছুর প্রতি দাওয়াহ প্রাপ্ত হবেন।

বুদ্ধিবৃত্তি যখন আবদ্ধ চিন্তায় থেমে থাকে তখন সকল বংশধর কেবল মাদ্রাসাগুলো রক্ষার জন্য সময় ব্যয় করে। ইমাম হাসান আল-বান্না, মাওলানা মওদূদী ও সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)-রা এই অবস্থানের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা একটা চিন্তাকে জনপ্রিয় করে তুলেন তা হলো রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তার জন্য সত্যিকার প্রচেষ্টা দরকার। এটা শসস্ত্র জিহাদের জন্য অনেক যুবকদের অনুপ্রাণিত করে এবং যার জন্য শাসকরা ইসলামকে হুমকি হিসেবে দেখা শুরু করলো। আহমদ সিরহিন্দির পদ্ধতি পরিত্যাক্ত হলো।

যুগে যুগে ধর্মভীরু বিশ্বাসীদের বিদ্রোহগুলোকে শাসকরা নির্দয়ভাবে দুমড়ে-মুচড়ে গুড়ো করে দিয়েছে। হাফেস আসাদ যেরুপ বলেছিলঃ “আমি সিংহাসনকে ভেঙ্গে ফেলতে পারি কিন্তু পরিত্যাগ করবো না”। তার ছেলে বাশার আল-আসাদ ঠিক এই কাজটিই করতেছে। তারা বরং সবকিছু ধংস হতে দেখবে কিন্তু ক্ষমতা ছাড়বে না।

সেক্যুলার সমাজে মুসলিম


শাসকের সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলুন এবং দাওয়াহ চালিয়ে যান। বিরোধ মেটানো মানে ন্যায়বিচার নয়; কখনও কখনও নিজের অধিকার ত্যাগ করে সকলকে একত্রিত রাখা, নতুন করে গড়ে তুলা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়া (মিশরের প্রেক্ষাপটে বলা)।
অনেক মুসলিম দেশের তুলনায় অনেক সেক্যুলার দেশে স্বাধীনতা অনেক বেশি রয়েছে। সেসব সেক্যুলার দেশে বসবাস করুন, সে দেশকে উন্নত করার জন্য অবদান রাখুন। সব সময় দাবি করবেন না। আপনার নয়, বরং দূর্বলদের দাবি আদায় করুন।
নিজের চাহিদা মতো চলা সেক্যুলার আইনের শাসনের চাইতেও বেশি খারাপ। নিজের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন।

পরিবর্তনের পদ্ধতিঃ

পূনর্জাগরণবাদী আন্দোলনগুলোর উন্নয়নের জন্য তাদের প্রতি ক্রিটিক্যাল হোন।
  • ঈমান থেকে শুরু করুন এরপর ইসলাম, পূর্ণ আনুগত্য ও ইবাদাহ।
  • ছোট হাতের i দিয়ে ইসলাম। কারণ বড় হাতের I দিয়ে ইসলাম হলো আইডেন্টিটি। আর ছোট হাতের i দিয়ে ইসলাম হলো পূর্ণ আনুগত্য।
  • বিশ্বাসীদের ঐক্য

ঈমানদার-বিশ্বাসী সম্প্রদায় অবশ্যই রবের আনুগত্যে ঐক্যবদ্ধ হবে; গ্রপভিত্তিক ঐক্যবদ্ধতা নয়। যেকেউ এই ঐক্যবদ্ধতার ক্ষতি করবে সে পাপ করলো।

মুসলিমদেরকে ইসলামিস্ট ও সেক্যুলার এই ভাগেও শ্রেণিকরণ করবেন না। ঐক্যবদ্ধ থাকুন আর আহবান করতে থাকুন ইসলামের প্রতি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) এর সাহাবীদের মাঝে ৩০০ মুনাফিক ছিল কিন্তু ঐক্য রক্ষার্থে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। ঐক্যবদ্ধতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ইংরেজিঃ http://imbdblog.com/?p=4166

স্কলার পরিচিতি

শাইখ আকরাম নাদভী একজন ইসলামিক স্কলার। তিনি ভারতের জৈনপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাদওয়াতুল ওলামা (ভারত) থেকে অনার্স পাশ করেন যেখানে তিনি শরীয়া নিয়ে নিজেও পড়াশুনা করেন ও শিক্ষক হিসেবে পড়াতেনও। শাইখ একজন উচূ মাপের মুহাদ্দিস, যার দক্ষতার শীর্ষে রয়েছে ইলমুল রিজাল শাস্ত্র। ৬০০ জন আলেম থেকে তার ইজাজা রয়েছে। তাদের মাঝে শাইখ আবুল হাসান আলী নাদভী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আল গুদ্দাহ, শাইখ ইউসুফ আল-কারযাভী, সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ আলাওয়ী আল-মালিকী, শাইখ মুহাম্মাদ সাইদ রামাদান আল-বুতী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ আল-কাত্তানী এবং শাইখ আল-গুমারী প্রমূখ। বুখারী শরিফেই রয়েছে তার ৫০ টি ইজাজা। শাইখের আরবী ভাষায় ওপর ডক্টরেট ডিগ্রী রয়েছে। তিনি সব মিলিয়ে আরবী ভাষা, ফিকহ, কুরআন ও হাদীসের ওপর ২৫টির মত বই লিখেছেন ও অনুবাদ করেছেন এবং বর্তমানে মুসলিম শরিফের আধুনিক ব্যাখ্যা (শরাহ) লিখায় নিয়োজিত রয়েছেন। তার ও রাসূলের মধ্যখানে সনদের দিক থেকে ১৭/১৮ জন ব্যক্তি রয়েছে।

২০১০ সালে তিনি ইসলামের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্ব বিখ্যাত বই যা নারী মুহাদ্দিস নিয়ে লিখিত ৪০ খন্ডাকারে বের হবে, সম্পন্ন করেন। নাদওয়াতুল ওলামায় থাকতে তার ব্যক্তিগত জীবনী ‘মাদ্রাসা জীবন’(২০০৭) ইংরেজিতে বের হয়েছে (উর্দূ থেকে)।

ইসলামি চিন্তায় অবদানের জন্য তাকে আল্লামা ইকবাল পুরুষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ে একাডেমিয়াতে ইসলামের এক উজ্জ্বল স্কলার এই আলেম। শাইখকে ইতোপূর্বে Oxford Center For Islamic Studies, Oxford এ রিসার্চ ফেলো হিসেবে ছিলেন।

বর্তমানে তিনি Cambridge Islamic College এর ডিন ও একাডেমিক ডিরেক্টর।

শাইখ হানাফি মাজহাবের হলেও চিন্তাগত দিক থেকে তাকলীদপন্থী নন। তিনি মনে করেন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কিরুপ সম্পর্ক বিদ্যমান সেটাই মূল বিষয়; কাউকে হানাফি, শাফেয়ী বা এভাবে ভাগ করার পক্ষপাতি নন। তিনি মুসলিম পরিচয়কেই বেশি প্রাধান্য দেন।

আকীদাগত ভাগকেও তিনি অতটা গুরুত্ব দেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন বিগত সালফে সালেহীনদের যুগে আকীদাগত ভাগ মানেই ইসলামের ভাগ বোঝানো হতো না। সাধারণ মুসলিমরা আকীদাগত পরিচয় না থেকেও ঈমান ও ইসলাম পালন করে গেছেন এবং এ ব্যাপারে কেউ কোনো দ্বন্দেও জাড়ায়নি এবং এটাই উত্তম পথ।

পূর্ণ কোর্সটি যেসব টপিক কাভার করবে সেগুলো সেগুলো হলো-
  • The portrayal of Shariah Law, Islamic State & Jihad in The Qur’an
  • The Prophet peace be upon him as the leader of the Muslim society
  • The early Muslim Khilafat and their role in the society
  • History of Islamic Empires from the Abbasids to the Ottomans
  • Analysis of traditional Islamic revival movements
  • The decline of Muslims and the rise of the West
  • The effect of colonialism on the Muslim mindset
  • Analysis of modern Islamic revival movements – Ikhwanul Muslimeen, Tabligh-i-Jamat, Jamat-e-Islami, Hizb at-Tahrir, Salafi based movements, Sufi based movements
  • Analysis modern day conflicts in Palestine, Egypt, Syria, Kashmir and other places
  • Clash of civilisations and Islamophobia in the West –  A myth or a reality?
  • Muslims and democracy – Compatible or a contradiction?
  • Muslim society in a secular state – Is this possible?
  • Muslim, Islamist and Secular-Muslim – What are they?
  • What is the role of Muslims in the West?
  • What is the future for Muslim in the the West?
  • What is the way forward for the Muslims in the East?
  • What is the “Comprehensive Plan” for the Muslims?
কোর্স করা যাবে বা এনরুল করে এর রিকর্ডিংস পাওয়া যাবে এখানে
http://courses.meoc.org.uk/p/shariah-law.html

Dr_Akram_Nadwi